জহির সিকদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা ।। গ্রামবাংলার অতি পরিচিত এবং সাধারণ একটি জলজ উদ্ভিদ হচ্ছে কচুরিপানা। যাহা দেখতে খুবই নয়নাভিরাম। বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেক এলাকার নদ-নদী, পুকুর, জলাশয়, হাওর নিম্মাঞ্চলে সচরাচর কচুরিপানা দেখতে পাওয়া যায়। এটি একটি বহু-বর্ষাজীবী ভাসমান জলজ উদ্ভিদ।
বর্ষাকালে এই জলজ উদ্ভিদটি বেশি পরিমাণে দেখতে পাওয়া যায়। আমরা প্রায় সবাই কচুরিপানার গাছ আর ফুল চিনি। খাল-বিলের মতো বদ্ধ জলাশয়ে অবাধ ভাসমান একটি গুল্ম, যার নিচে থাকে এক থোকা লম্বা গুচ্ছমূল, আর উপরের কান্ডে এক থোকা স্পঞ্জি পাতার দেখা মেলে। যার নাম হলো কচুরিপানা। এর বৈজ্ঞানিক নাম- Eichhornia crassipes। এই বেগুনি রঙের ফুলের নির্মল শোভা যেন নোংরা ডোবাকেও স্বর্গীয় করে তুলে । আমরা প্রায়শই দেখতে পাই রাস্তা দিয়ে কোন জায়গায় যাওয়ার সময় পথের দু’ ধারে উকি মেরে হাতছানি দেয় ফুলগুলো। কাছে গিয়ে নয়নাভিরাম, মনোমুগ্ধ পরিবেশের আবহ।
এই আগাছাটি ভাল-মন্দ নানা দিক মিলিয়ে এক রকমারি বৈশিষ্ট্যের উদ্ভিদ প্রজাতি। মজার বিষয় হল, এই চিরপরিচিত গাছটি আমাদের দেশীয় প্রজাতির নয়। প্রকৃতপক্ষে এর আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকায়। দেখার মত দৃষ্টিবঙ্গি থাকলে ও কচুরিপানা ফুলের মতো এত চমৎকার ফুল খুব কম আছে। পরিমাণগত দিক দিয়েও এর মতো এত ব্যাপক বিস্তৃত ফুল খুব কমই চোখে পড়ে।
কবিগুরুর ভাষায়- ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া/ঘর হতে শুধু দু’পা ফেলিয়া। সত্যিকার অর্থেই যেখানে সেখানে ছড়িয়ে থাকা এক আগাছা উদ্ভিদ যার কিনা উপকারের চেয়েও অপকারী দিক কোনো অংশেই কম না, এমন এক অবহেলিত উদ্ভিদে এত নয়নাভিরাম, মনোমুগ্ধকর, চিত্তাকর্ষক ফুল যা প্রকৃতিপ্রেমীদের বিমুগ্ধ না করে পারে না। কচুরিপানা দেখতে গাঢ় সবুজ হলেও এর ফুলগুলো সাদা পাপড়ির মধ্যে বেগুনি ছোপযুক্ত এবং মাজখানে হলুদ ফোঁটা থাকে। সাদা এবং বেগুনি রঙের মিশেলে এক অন্যরকম আবহ তৈরি করে থাকে এই কচুরিপানা । সাদা পাপড়ির স্থলে কোথাও হালকা আকাশি পাপড়িও দেখতে পাওয়া যায়। পুরোপুরি ফুল ফোঁটার আগে একে দেখতে অনেকটা নলাকার দেখায়। পাপড়িগুলোর মাঝখানে পুংকেশর দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিটি ফুলে ছয়টি করে পাপড়ি দেখা যায়।
এলাকাভিত্তিক অনেকে একে একেক নামে চিনে থাকে।তবে আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাষায় অধিকাংশ লোক কচুরিপানাকে টগর বা কচুরিপানা নামেই চিনে এবং জানে। বাংলাদেশে প্রায় সাত প্রজাতির কচুরিপানা দেখতে পাওয়া যায়। প্রায় সারা বছরই কচুরি ফুল ফুটতে দেখা যায়। কচুরি ফুলের মুগ্ধতায় আমাদের মধ্যে প্রকৃতি প্রেম জাগ্রত হোক এটাই প্রত্যাশা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্স নিউজ