মেশকাত মিশুঃ আর মাত্র কয়েকটি দিন পরেই বিদায় নিচ্ছে বাংলা বছর ১৪২৫। খুশির বার্তা ও অযুত- নিযুত সম্ভাবনা নিয়ে আসছে নতুন বাংলা বছর। বাঙ্গালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ , তাই তো বঙ্গাব্দ ১৪২৬ বরণে চারপাশে পড়ে গেছে সাজ সাজ। চলছে নানা আয়োজনে প্রস্তুতি।দিনটিকে বরণ করে নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। বাঙ্গালি জাতিসত্তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার অন্যতম দিনটিকে কেন্দ্র করে সর্বত্রই বইছে উৎসবের আমেজ। জাতি গোত্র-বর্ণ সব ভেদাভেদ ভুলে একযোগে দিনটি পালন করবে। তাইতো চলছে সর্বাত্মক প্রস্তুতি।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাজশাহীর সর্ববৃহৎ আয়োজন হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। যেটি আয়োজন করে চারুকলা অনুষদ।নববর্ষ উদযাপনে ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’ এই শ্লোগানকে সামনে নিয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪২৬- কে স্বাগত প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় । প্রতিবারের ন্যায় অতীত জীর্ণতাকে ভুলে নতুন সৃষ্টির প্রত্যয়ে ১৪২৬ কে বরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত সময় পার করছে চারুকলা অনুষদ।
তাছাড়া বাংলা, নাট্যকলা ও সঙ্গীত, আইন, মার্কেটিং, ফোকলোরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সবগুলো বিভাগই পৃথক পৃথকভাবে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। চলছে ব্যানার, ফেস্টুন তৈরির কাজ। মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাঙালির ঐতিহ্য, কৃষ্টি-কালচার তুলে ধরতে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন জিনিসপত্র।তবে প্রতিবছরই মূল আকর্ষণ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদকে ঘিরে। তাই বাঙালি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে রাত-দিন কাজ করছেন এ অনুষদের শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় বাঁশ, বেত, কাঠ ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করছে লোকজ ঘোড়া, ময়ূর, হাতিসহ বেশ কয়েকটি বাঙ্গালী ঐতিহ্যের ধারক প্রাণীর প্রতীক।
এগুলো নিধার্রণের বিষয়ে আয়োজকরা জানিয়েছেন, দেশ বর্তমানে এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে, দ্রুতগামী প্রাণী হচ্ছে ঘোড়া। দেশের সকল অর্জন গুলো সম্পদে পরিণত হচ্ছে তাই দেশের প্রাণীর মধ্যে সম্পদ হচ্ছে হাতি। সবমিলিয়ে দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই ময়ূর রাখা হয়েছে। প্রতিবছর মুখোষ তৈরি করা হলেও এ বছর সেটা করা হচ্ছে না। বিকল্প হিসেবে কাকতারুয়া ও প্লাকার্ড তৈরি করা হবে। পহেলা বৈশাখের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। কোন ধরণের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই আয়োজন করে চারুকলা অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও চারকলা অনুষদ থেকে বের করা হবে বিশাল বহরের মঙ্গল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি নান্দনিক করতে অনুষদের ডীনকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট উদযাপন কমিটিও করা হয়েছে।
খোজ নিয়ে জানা যায়, এবারের বর্ষবরণের মূল আয়োজন মঙ্গল শোভাযাত্রায় রয়েছে হারাতে বসা লোকজ ঐতিহ্য, তেমনি রয়েছে লোকজ সঙ্গীতের পাশাপাশি জারিগান। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারুকলা অনুষদে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ফুটিয়ে তুলতে ছবি আকঁছে চারুকলার বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।আর একটু সামনে গিয়ে দেখা মিলল লোকজ ময়ূর তৈরিতে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা, তার পাশেই ঘোড়া ও হাতির প্রতিকী নির্মাণের কাজ চলছে। যেগুলো মঙ্গল শোভা যাত্রার সামনে থাকবে বলে জানা গেছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে যানা যায়, তারা প্রতিবছরের ন্যায় বিভিন্ন বিভাগের চেয়ে চারুকলা অনুষদের শোভাযাত্রাকে সফল ভাবে উপস্থাপন করতে চায়।
চারুকলা অনুষদের মৃত শিল্প বিভাগের শিক্ষার্থী কুমার সত্য জানান, আধুনিক যুগে বিলীন হওয়া গ্রামীণ ঐতিহ্য বছরে একবার তুলে ধরার সুযোগ পায় পহেলা বৈশাখে। এতে অংশ নিয়ে কাজ করতে খুব ভাল লাগছে। এগুলো প্রদর্শনীর মাধ্যেমে তরুণ প্রজন্ম গ্রামীন ঐতিহ্যকে কিছুটা অনুধাবন করতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।আরেক শিক্ষার্থী জানান, কনককুমার পাঠক স্যারের তত্ত্বাবধানে সব আয়োজন সুন্দর ভাবে প্রস্তুতি চলছে। আশা করছি নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে পারব।
সার্বিক বিষয়ে চারুকলা অনুষদের ডীন ড. সিদ্ধার্থ শঙ্কর তালুকদার জানান, পহেলা বৈশাখ উদযাপনের জন্য কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটি প্রস্তুতির কাজ করে চলেছে। আশা করছি নিদিষ্ট সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি কাজ চলছে।’ রাজশাহীর সব মানুষকে সুন্দর একটি অনুষ্ঠান উপহার দিতে পারবেন বলেও আশাবাদী তিনি।তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা বিভাগের সামনে থেকে রাজশাহী অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে।
রাবি নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্স নিউজ