রাবি প্রতিনিধিঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর ১০ টির সাথে আলোচনা শেষ করেছে রাকসু নির্বাচন সংক্রান্ত সংলাপ কমিটি। ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবি দাওয়া বিশ্লেষণে শেষে দেখা গেছে, সংগঠনগুলোর থেকে মোট ৩৮ টি দাবি জানানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। উত্থাপিত দাবি গুলোর মধ্যে কিছু দাবি-দাওয়ায় মতৈক্য থাকলেও কিছু-কিছু বিষয়ে বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে ছাত্র সংগঠনগুলো।

এরমধ্যে নির্বাচনে প্রার্থীতার বিষয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বিপরীতমুখী মত এসেছে। এমফিল, পিএইচডি ও সান্ধ্য কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রার্থীতা চায় ছাত্রলীগ  কিন্তু এর বিপরীত অবস্থান নিয়ে খোদ স্যান্ধ্য কোর্সই বাতিলের দাবি জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন। আবার সংলাপে অধিকাংশ সংগঠন একাডেমিক ভবনে ভোট কেন্দ্র রাখার প্রস্তাবনা দিলেও ‘আবাসিক হলে’ ভোট কেন্দ্র করার দাবি জানিয়েছে শুধু ছাত্রলীগ। অন্যদিকে রাজনৈতিক সহাবস্থান ও গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য সকল ছাত্র সংগঠন ও সর্বদলীয় শিক্ষকদের সমন্বয়ে পরিবেশ পরিষদ গঠন, ক্যাম্পাস ও হলে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান কমপক্ষে ৬ মাস যাচাই করার মতো ভিন্নধর্মী দাবি জানিয়েছে বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।এর বাইরে নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে দলনিরপেক্ষ শিক্ষকদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন ও ভোটকেন্দ্রগুলো সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে কয়েকটি সংগঠন। রাকসু মতবিনিময় কমিটির নিকট এমন প্রস্তাবনা দিয়েছেন ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলো।

সংলাপ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ মার্চ তারিখ পর্যন্ত মোট রাজনৈতিক ১০টি সংগঠনের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে কমিটি। যেখানে রাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষে সংলাপ কমিটির নিকট রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত, সর্বদলীয় শিক্ষকদের সমন্বয়ে পরিবেশ পরিষদ গঠন, ক্যাম্পাসে সকল রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কর্মকাণ্ডের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, সর্বদলীয় শিক্ষকদের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কার্যকরী নির্বাচন কমিশন গঠন, একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন, ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরার আওতায় এনে প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রচার, নিয়মিত ছাত্রদের নিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়ন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রণয়ন, ভোট কেন্দ্রে সাংবাদিকদের অবাধ বিচরণের সুযোগ, ভোট ও ফলাফল প্রকাশের সময় সকল সাংবাদিকদের সংবাদ প্রচারে কোনো প্রকার বাধা প্রদান না করা, কার্যকরী ছাত্র সংসদ গঠন করতে রাকসু সভাপতি ও কার্যনির্বাহী সদস্যদের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়ণ, সর্বদলীয় নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল গঠন করা এবং স্বাধীনভাবে তাদের কাজ করার সুযোগ প্রদানসহ কোনো বিশেষ ছাত্র সংগঠনকে নির্বাচনে বিশেষ সুবিধা প্রদান না করা।

এদিকে ছাত্র ফেডারেশনের দাবি রাজনৈতিক ভাবে বিতর্কিত নয়, এমন শিক্ষকদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা ও রাকসুর সভাপতি ছাত্রদের মধ্য থেকে নির্বাচিত করা। বিশেষত রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি জানান তারা।

বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর ক্যাম্পাসে সকল ছাত্রসংগঠনকে তাদের স্বাধীন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরী, অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্র সংগঠনগুলোকে নিবার্চনের বাইরে রাখার দাবি জানিয়েছে। ছাত্রমৈত্রীর অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে, গঠনতন্ত্র যুগোপযোগী, রাকসুর ফি প্রদানকারী নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার অধিকার নিশ্চিতকরণ, ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত, গঠনতন্ত্র বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রস্তুত করে অনলাইনে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে সংযোজন।সকল ছাত্র সংগঠনকে প্রচার প্রচারণাসহ সকল বিষয়ে সুবিধা প্রদান, তফসিল ঘোষণার পর ছাত্র সংগঠনের কোনো প্রার্থী, নেতাকর্মী ও সমর্থকদের হুমকি, হয়রানি ও গ্রেফতার না করার নিশ্চয়তা প্রদান, তফসিল ঘোষণার পূর্বে সকল সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মত মাঠে নামা ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন।

ছাত্রসংগঠন গুলোর দাবির চুম্বক অংশ হচ্ছেঃ

ছাত্রলীগের দাবি : ভোটার তালিকা হালনাগাদ, পিএইচডি, এমফিল, সান্ধ্য কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রার্থীতা রাখা, হলেই ভোটকেন্দ্র করা, ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রতিক্রিয়াশীল বা মৌলবাদি সংগঠন বা গোষ্ঠী নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ না দেয়া, এছাড়াও স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক, আন্তর্জাতিক সম্পাদক, ক্যাফেটেরিয়া ও ছাত্র পরিবহণ সম্পাদক পদসহ মোট ২৫ টি পদ করা।

ছাত্র ইউনিয়নের দাবি : সান্ধ্যকোর্স শিক্ষার্থীদের ভোটার বা প্রার্থীতা না রাখা।ছাত্র ফ্রন্ট স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষায় নীতিমালা তৈরির দাবি জানান।

ছাত্রদলের ১৪ দফা দাবি: ক্যাম্পাসে সকল রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কর্মকান্ডের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, রাকসু নির্বাচন সুষ্ঠুর লক্ষে গ্রহণযোগ্য সর্বদলীয় শিক্ষকদের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কার্যকরী নির্বাচন কমিশন গঠন, ভোট কেন্দ্রসমূহ অ্যাকাডেমিক ভবনে স্থাপন, ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরার আওতায় এনে প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রচার, নিয়মিত ছাত্রদের নিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়ন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রণয়ন, ভোট কেন্দ্রে সাংবাদিকদের অবাধ বিচরণের সুযোগ প্রদান, ভোটের দিন ও ফলাফল প্রকাশের সময় সকল সাংবাদিকদের নির্বিঘ্নে সংবাদ প্রচারে কোন প্রকার বাধা প্রদান না করা, নির্বাচনের পূর্বে সকল হল শুধুমাত্র মেধার ভিত্তিতে সিট বন্টন করে আবাসিকতা প্রদান এবং হল সমূহ সম্পূর্ণরুপে বহিরাগত মুক্ত করা, ক্যাম্পাস ও হল থেকে সকল প্রকার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং বিগত দশ বছরে হামলাকারী চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, কার্যকরী ছাত্র সংসদ গঠন করতে রাকসু সভাপতি ও কার্যনির্বাহী সদস্যদের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়ণ, সর্বদলীয় নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল গঠন করা এবং স্বাধীনভাবে তাদের কাজ করার সুযোগ প্রদানসহ কোন বিশেষ ছাত্র সংগঠনকে রাকসু নির্বাচনে বিশেষ সুুবিধা প্রদান না করার দাবি জানান তারা।

এ বিষয়ে রাকসু সংলাপ কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. লুৎফর রহমান জানান, রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে তাদের দাবি নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সামাজিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু হয়েছে। তাদের দাবি-দাওয়া’র কথাগুলো আমরা শুনছি। পরবর্তীতে আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে দাবিগুলো বিবেচনা করা করা হবে বলে জানান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সৎ, মেধাবী এবং দেশপ্রেমিক ছাত্র নেতৃত্ব তৈরির উদ্দেশ্যে ১৯৬২ সালে রাকসুু প্রতিষ্ঠিত হয় ।প্রতিষ্ঠার পরে এখন পর্যন্ত মোট ১৪ বার রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৯০ সালের পর থেকে সংগঠনটির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে ।

মেশকাত মিশু
রাবি নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে