মিয়ানমার ভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডরিটি অর্গানাইজেশন -আরএসও নিজেদের অস্ত্রের মজুদ বাড়াতেই কক্সবাজারের আনসার ক্যাম্প থেকে বিপুল পরিমাণ অন্ত্র ও গুলি লুট করে নিয়ে যায়। আর এই আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়েছে আরএসও নেতা উর্দুভাষী এক পাকিস্তানী নাগরিক। এমনকি লুণ্ঠিত অস্ত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মিয়ানমারের গোপন আস্তানায়। চট্টগ্রাম পুলিশ বলছে, অনুসন্ধানে চাঞ্চলক্যর এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার এবং অস্ত্র উদ্ধার ব্যবস্থা নিতে মিয়ানমারের সহযোগিতা চাইতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
গত ১২ মে গভীর রাতে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আনসার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ক্যাম্প কমান্ডারকে হত্যা এবং অস্ত্র ও গুলি লুটের ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হয় দেশজুড়ে। শুরু হয় পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান এবং ঘটনার অনুসন্ধান। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো অস্ত্র উদ্ধার না হলেও পাওয়া গেছে ঘটনার নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।
মূলত হামলার দিনই মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে আরএসও’র পাঁচ সশস্ত্র সদস্য। হামলার সময় তাদের সাথে যোগ দেয় স্থানীয় ৬ বাংলাদেশী এবং ক্যাম্পের আরো নয় জন রোহিঙ্গা। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডি আই জি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনার মূল পরিকল্পনায় যে রয়েছে সে উর্দুভাষী এবং পাকিস্তানের নাগরিক। বর্তমানে সে পাকিস্তানে আসে।’
পুলিশের অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে, হামলার জন্য সন্ত্রাসীরা বেছে নেয় মধ্যরাতকে। কারণ তখন সাগরে জোয়ার থাকায় তাদের ব্যবহৃত নৌকাটি একদম ক্যাম্পের পাশেই নিয়ে রাখা হয়েছিলো। হামলা শেষে ভোর চারটার মধ্যে তারা ওই নৌকাযোগে পুনরায় মিয়ানমার পৌঁছে লুণ্ঠিত অস্ত্র নিজেদের গোপন আস্তানায় রেখে আসে। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডি আই জি শফিকুল ইসলাম বলেন,’ যদি এটি কোনভাব উদ্ধার করা সম্ভব না হয় তবে আমাদের সিমান্তরক্ষী বাহিনীর মাধ্যমে মিয়ানমার সিমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে সেখানে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাবো।’
বাংলাদেশ-মিয়ানমার দুর্গম সীমান্তে আর এস ও’র তৎপরতা নতুন কিছু নয়। কিন্তু এবার নতুন আঙ্গিকে এবং নতুনভাবে অভিযুক্ত হলো আর এস ও। এ অবস্থায় প্রতিবেশী দু’দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে আর এস ও বড় ধরণের অন্তরায় বলে মনে করছে মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক এ কূটনীতিক।
সাবেক কূটনীতিক মেজর অব. এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘আরএসতো বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্কের মধ্যে ভুলবোঝাবুঝি সৃষ্টি করবে। যেটিই আমাদের জন্য একটি হুমকি।’ এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে নুরুল আবসার নামে একজনকে। যার কাছে পাওয়া গেছে হামলার শিকার আনসার সদস্যদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন। এছাড়া সন্দেহভাজন আরো তিন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।