পূর্ণিমা সরকার, বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি।। গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে(বশেমুরবিপ্রবি) রসায়নে বিভাগে চলছে তীব্র সেশনজট। ১২জন শিক্ষকের মধ্যে ৮জনই শিক্ষা ছুটিতে। বিপরীতে নিয়োগ দেওয়া হয় নি একজন শিক্ষকও। ফলে ৪ মাসের সেমিস্টার চলছে ৯ মাসে। সেশনজটের কবল থেকে বাঁচতে এবার উপাচার্য দপ্তরে অবস্থান নিয়েছে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে উপাচার্য দপ্তরের সামনে অবস্থান নিয়েছে এনিম্যাল সাইন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। রবিবার(২’রা জুন) সকাল ১০ঘটিকা হতে উপাচার্য দপ্তরে অবস্থান গ্রহন করে এনিম্যাল সাইন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এরপর দুপুর ১২ ঘটিকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রায় ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী উপাচার্য দপ্তরে অবস্থান নেয়।
শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, রসায়ন বিভাগের শিক্ষক সংখ্যা ১২জন। তার মধ্যে ৮ জন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন। বাকি ৪ জন শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান এবং পরীক্ষা কার্যক্রম। মাস্টার্স সহ ওই বিভাগে রয়েছে ৭ টি ব্যাচ। এতে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৪৬ জন। ফলে শিক্ষার্থীরা পড়ে আছে মারাত্মক সেশনজটে। সেশনজট থেকে রক্ষা করতে প্রশাসন অবিচল হয়ে আছে। নিচ্ছে না কোনো সিদ্ধান্ত। নিয়োগ দিচ্ছে না কোনো শিক্ষক। খন্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে অনলাইনে পাঠদানেরও কোনো অনুমতি দিচ্ছে না উপাচার্য।
শিক্ষার্থীদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রসায়ন বিভাগ ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী জানায়, করোনার কারনে তারা সেশনজটের সমস্যায় পড়ে গেছে। তার সাথে নতুন মাত্রায় যুক্ত হয়েছে শিক্ষক সংকট। ১২জন শিক্ষকের মধ্যে ৮জনই রয়েছেন শিক্ষা ছুটিতে। মাত্র ৪জন শিক্ষক দিয়ে কিভাবে এতগুলো ব্যাচ চলছে! তিনি বলেন, রসায়ন বিভাগে ল্যাব থাকে। এই ল্যাবগুলো করার জন্য হলেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক প্রয়োজন। কিন্তু আমরা তা পাচ্ছি না। আমাদের জন্য বাহির থেকে ২জন শিক্ষক অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু উপাচার্য স্যার আমাদেরকে সে সুযোগটিও দিচ্ছে না। দিনদিন আমরা সেশনজটে পড়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে পড়েও গেছি। আমরা এর দ্রুত সমাধান চাই। সেশনজট থেকে আমাদের মুক্তি দিতে হবে।
শিক্ষক সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে রসায়ন বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল আলীম বলেন, আমাদের বিভাগে শিক্ষকের সংখ্যা ১২জন। এর মধ্যে ৮জনই শিক্ষা ছুটিতে আছে। এর মধ্যে ৫ জন শিক্ষক একসাথে শিক্ষা ছুটিতে আমেরিকা গিয়েছে। পোস্ট ডক আছেন ১জন। তিনি বলেন, এতজন শিক্ষক যদি একসাথে শিক্ষা ছুটিতে যায় তাহলে শিক্ষার্থীদের কি অবস্থা হবে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে সভাপতি বলেন, প্রশাসন কিভাবে একসাথে এতজনের শিক্ষা ছুটি অনুমোদন করে! তাছাড়া তাদের বিপরীতে একজনও শিক্ষক নিয়োগ দেয়নি।
শিক্ষার্থীদের সেশনজট কমাতে খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যায় কি না! এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা খন্ডকালীন দু’জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি। তারা অধ্যাপক ,অনলাইনে ক্লাস নিবেন। কিন্তু এতদিন উপাচার্য তাদেরকে(খন্ডকালীন শিক্ষক) অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার অনুমতি দেয় নি। আজকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামার কারনে প্রশাসন সে অনুমতি দিয়েছে। আশা করি আমরা সেশনজট সমস্যার কিছুটা সমাধান করতে পারব।
এদিকে, শিক্ষক সমিতির আন্দোলনের মুখে উপাচার্য কক্ষ তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সাথে তালাবদ্ধ করা হয়েছে উপ-উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রার দপ্তর ।তাই উপাচার্য আসতে পারেনি তার কক্ষে। একসাথে এতজন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে কিভাবে যায়? তার বিপরীতে কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় নি কেন? বিশ্ববিদ্যালয় কি এটা নিয়মের মধ্যে করেছে নাকি অনিয়ম করেছে? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয় তার সাথে। কিন্তু কোনোভাবেই যোগাযোগ যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।
উল্লেখ্য, এর আগে সকালে এনিম্যাল সাইন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষার্থী উপাচার্য ভবনে অবস্থান গ্রহন করে। শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, একই বিভাগে চলছে তীব্র শিক্ষক সংকট। চলতি মাসের ৪তারিখে রিজেন্ট বোর্ডের সভা হওয়ার কথা। কিন্তু শিক্ষক সমিতির আন্দোলনের কারনে রিজেন্ট বোর্ডের সভা হবে কিনা! এতে ওই বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ হবে কি না! এসব বিষয় সন্দেহ করে তারা আন্দোলন করে বলে জানা যায়।