ইউনেস্কো সৃজনশীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে ‘ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধু’ পুরস্কার নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরষ্কার প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন আজ তার মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, সৃজনশীল অর্থনীতি ক্ষেত্রে ‘ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধু’ পুরস্কার হবে সংস্থা কর্তৃক প্রবর্তিত প্রথম আন্তর্জাতিক পুরস্কার।

তিনি জানান, গত ১১ ডিসেম্বর সমাপ্ত জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা-ইউনেস্কো নির্বাহী পরিষদের শরৎকালীন ২১০তম অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ড. মোমেন বলেন, প্রতি দুই বছর অন্তর এ পুরস্কার প্রদান করা হবে, যার অর্থমান ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। এ পুরস্কারটি প্রথমবারের মত ২০২১ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য ইউনেস্কো- এর ৪১ তম সাধারণ সভা চলাকালে প্রদান করা হবে।তিনি জানান, এই প্রথম জাতিসংঘের কোন অঙ্গ-সংস্থা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন করল।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ইউনেস্কো শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ স্বীয় অধিক্ষেত্রে বিভিন্ন অঙ্গনে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ সদস্য রাষ্ট্রসমূহের আর্থিক সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন করে থাকে। ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতিমান ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ২৩টি ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন করেছে। এই প্রথম বাংলাদেশ তথা বাংলাদেশের কোন প্রথিতযশা সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির নামে ইউনেস্কো একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন করল।

ড. মোমেন বলেন, সংস্কৃতি’ ইউনেস্কোর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধিক্ষেত্র। সমসাময়িককালে বহুল আলোচিত ও চর্চিত বিষয় ‘সৃজনশীল অর্থনীতি’ অঙ্গনে এ আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তিত হয়েছে । এ পুরস্কার সৃজনশীল অর্থনীতিতে যুব সমাজের উন্নয়নে সংস্কৃতিকর্মী, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা গৃহীত ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগকে স্বীকৃতি দেব।ড. মোমেন বলেন, মানব সৃজনশীলতায় অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মেল-বন্ধনই ‘সৃজনশীল অর্থনীতি’ যেখানে সংস্কৃতি ভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের বিকাশ পরিলক্ষিত হয়। এর মাধ্যমে শিল্পীর শিল্প বা উদ্ভাবনের স্বত্ব সংরক্ষণ সুনিশ্চিত রেখে সংস্কৃতির সাথে অর্থনীতির বিকাশ সাধিত হয়। ‘সৃজনশীল শিল্প’ এর ভিত্তি হল সাহিত্য, সংগীত, হস্তশিল্প, চিত্রকলা, চলচ্চিত্রসহ সৃষ্টিশীলতার নানা মাধ্যম। ইউনেস্কো প্রায় এক যুগ ধরে এ বিষয়ে কাজ করে আসছে। করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে বিশ্ব-অর্থনীতির নানান ক্ষেত্রে ব্যাপক যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তা সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও বিশ্বময় পরিলক্ষিত হয়েছে।

তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে গৃহীত নানা বিধি-নিষেধমূলক ব্যবস্থার কারণে শিল্পী-সমাজ এবং সংস্কৃতি চর্চার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন এবং হচ্ছেন।মন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, কোভিড ১৯ অতিমারীর আগমনের পূর্বে, বিশ্ব অর্থনীতিতে সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল শিল্প খাতের অবদান ছিল বার্ষিক ২ দশমিক ২৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্ব অর্থনীতির এই ক্ষেত্র সারা বিশ্বে ৩০ মিলিয়নেরও অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে, যার শতকরা ৪৫ ভাগ নারী। অর্থনীতির এ ধারায় নারীর অংশ গ্রহণ যেমন উল্লে¬খযোগ্য, এর ফলে বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে।

অন্যদিকে ‘সৃজনশীল অর্থনীতি’ খাতে যুব সমাজের অংশ গ্রহণ প্রণিধানযোগ্য। এ ক্ষেত্রে ইউনেস্কো গত প্রায় এক যুগ ধরে কাজ করলেও এ বিষয়ে অবদান রাখা সংস্কৃতি-কর্মীদের স্বীকৃতিসূচক কোন পুরস্কার এখন পর্যন্ত প্রবর্তিত হয়নি।তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন দূরদর্শী চিন্তক ছিলেন। বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনে তাঁর অংশ গ্রহণ, বাক-স্বাধীনতার বিকাশে তাঁর সংগ্রাম, স্বাধীনতার পর বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ সৃষ্টিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন জাতি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে।

বাংলাদেশ সৃষ্টির পর পরই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ লোক ও কারু-শিল্প ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা সৃজনশীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবদানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর অসাম্প্রদায়িক চেতনা, সংস্কৃতির প্রতি মমত্ববোধ, মাতৃভাষার প্রতি আবেগ সর্বোপরি তাঁর জীবনাদর্শ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তুলে ধরতে তাঁর নামে একটি পুরস্কার প্রবর্তনের কথা সরকারের পক্ষ থেকে চিন্তা করা হয় বলে ড.মোমেন উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, সংস্কৃতি ক্ষেত্রে জাতিসংঘের একমাত্র বিশেষায়িত সংস্থা ইউনেস্কো। ইউনেস্কোর মূলনীতি শান্তি ও সম্প্রীতি তৈরিতে সংস্কৃতি শক্তিশালী উপাদান যা বঙ্গবন্ধু দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শনের আন্তর্জাতিকীকরণ ও তা বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার জন্য একটি ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন সবচেয়ে উপযোগী মাধ্যম হবে বলে সরকার মনে করেছে।

মোমেন আরো বলেন, এ প্রেক্ষাপটে সৃজনশীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে পুরস্কার প্রবর্তনে প্রধানমন্ত্রীর সদয় অনুমোদনের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। গত আগষ্ট ২০১৯ প্রধানমন্ত্রীর সদয় অনুমোদনের পর প্যারিসস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির মাধ্যমে ইউনেস্কো মহাপরিচালক বরাবর আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়। ইউনেস্কো এর অধিক্ষেত্র যেমন শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বাক-স্বাধীনতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবদান ও বাংলাদেশ সরকারের ইউনেস্কো’র প্রতি অঙ্গীকারের কথা বিবেচনায় নিয়ে ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর নামে পুরস্কার প্রবর্র্তনে সম্মতি প্রদান করে। গত ১১ ডিসেম্বর ইউনেস্কো নির্বাহী পরিষদের পেনারি সেশনে সর্বসম্মতিক্রমে এ প্রস্তাব গৃহীত হয়।

তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, ইউনেস্কোর মত জাতিসংঘের একটি অঙ্গ-সংস্থা কর্তৃক প্রবর্তিত এ পুরস্কার বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে। বিশ্বময় সংস্কৃতি কর্মীদের সৃজনশীল অর্থনীতির বিকাশে অনুপ্রেরণা যোগাবে। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু যে এক ও অভিন্ন তা পুরস্কারের শিরোনামে প্রস্ফুটিত হয়েছে। এ পুরস্কার বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং ও ইমেজ বিল্ডিং এ বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা মনে করি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই বছর অন্তর এ পুরস্কার প্রদান করা হবে, যার অর্থমান ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। এ পুরস্কারটি প্রথমবারের মত আগামী ২০২১ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় ইউনেস্কো-এর ৪১তম সাধারণ সভা চলাকালে প্রদান করা হবে।তিনি বলেন, জাতিসংঘ ২০২১ সালকে টেকসই উন্নয়নে সৃজনশীল অর্থনীতি বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে। সে বিবেচনায় পুরস্কারটি প্রবর্তন সময়োচিত বলে ইউনেস্কো মনে করে।

তথ্যঃ বাসস

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে