শহিদুল ইসলাম দইচঃ যশোরের ৩০টির অধিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে। বাংলা নববর্ষ বরণের সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে আনন্দ শোভাযাত্রার সূতিকাগার সাংস্কৃতিক তীর্থপীঠ যশোরের। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় প্রতিবছরের ন্যায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলা নববর্ষ বরণে নানা আয়োজন রাখে। আর সে লক্ষ্যেই চলছে সব প্রস্তুতি। বিশেষ করে উৎসবের প্রস্তুতিতে উদীচী, পুনশ্চ, বিবর্তনসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনে চলছে গান, নাচ, নাটক ও গীতিনাট্যের মহড়া। সেইসঙ্গে চলছে আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য পুতুল, পাখি, মুখোশ, পাপেট, ফেস্টুন তৈরির কাজ। এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পহেলা বৈশাখে নগরবাসীকে উৎসবে মাতাতে পারবেন বলে মনে করছেন সংগঠনগুলোর নেতারা।
চারুপীঠ যশোরের সেক্রেটারি মামুনুর রশিদ জানান, পহেলা বৈশাখ দোরগোড়ায় চলে আসছে। এবার ‘যতনে রাখি এ ধরণীরে’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এবারের শোভাযাত্রায়, প্রকৃতির অংশ হিসেব পাহাড়, পাখি, কুমিরের প্রতিকৃতি, বিভিন্ন ধরণের মুখোশ। শিশুরা গাছ, হরিণ, হাতি, ঘোড়া হবে। আমরা আশা করছি এবারের আনন্দ শোভাযাত্রা আরো সুন্দর ও বর্ণাঢ্য হবে। সব শ্রেণী পেশার মানুষ এ শোভাযাত্রায় অংশ নেবেন।
জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু জানান, যশোরের ৩০টির অধিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে। নাচ, গান, নাটক ও আবৃত্তির মহড়া চলছে। আমরা আশা করছি বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে যশোরে সাজসাজ রব পড়বে।
পুনশ্চ যশোরের সাধারণ সম্পাদক পান্না লাল দে বলেন, ‘এবারও বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আগামী ১৩ এপ্রিল বিকেল ৫টায় টাউন হল ময়দানে বর্ষবিদায় ও পরের দিন সকাল সাড়ে ৬টায় মুললিম একাডেমি মাঠে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। অনুষ্ঠান সফল করে নাচ, গান ও নাটকের অনুশীলন অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি যশোরবাসীকে আমাদের অনুষ্ঠানমালা মুগ্ধ করবে।’
উদীচী যশোরের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লব বলেন, ‘বাংলা নববর্ষ বরণ করে নিতে সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। বরাবরের মতো নববর্ষের দিন ভোর ৬টা ৩১ মিনিটে যশোর পৌর পার্কে সাংস্কৃতিক আয়োজন থাকবে। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে অনুষ্ঠান চলবে। এরপর আবার বিকেল চারটায় থেকে একই মঞ্চে সান্ধ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে। এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদীচী যশোর ৪৯তম বর্ষবরণ উৎসব উদযাপন করবে।’
বিবর্তন যশোরের সভাপতি নওরোজ আলম খান চপল জানান, তারা বর্ষবরণকে ঘিরে বর্ণাঢ্য আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে। ছোট ও বড়দের দুই বিভাগে আবৃতি, নাটক মঞ্চস্থ করা হবে। এছাড়া আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এছাড়া পহেলা বৈশাখের দিন সকাল থেকে সংগঠন প্রাঙ্গনে মিষ্টি মুখের আয়োজন থাকবে। এদিকে আনন্দ শোভাযাত্রার জনক ভাস্কর মাহবুব জামাল শামীম দাবি করেছেন দীর্ঘদিন ধরে চারুকলা ইনস্টিটিউট বর্ষবরণকে রাজনীতিকরণ করে এসেছে। কিন্তু এবারের আয়োজন হবে তার বিপরীতে সকল দলমতকে নিয়ে। এ উৎসবে সংস্কৃতির সকল মাধ্যম একসঙ্গে জ্বলে উঠবে। নিজেদেরকে একটি সৃষ্টিশীল জাতি হিসেবে উপস্থাপন করবে।
যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, এবারের বৈশাখ উদযাপনকে নির্বিঘ্ন করতে সব ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা যশোরের সকল সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সাথে প্রস্তুতিমূলক সভা করেছি। পহেলা বৈশাখের দিন সকাল ৯টায় জাতীয় সংগীত ও এসো হে বৈশাখ, এসো এসো… গানের মাধ্যমে যশোর কালেক্টরেট চত্বর থেকে বর্ষবরণের শোভাযাত্রা শুরু হবে।
জানতে চাইলে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) নূর ই আলম সিদ্দিকী বলেন,, অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইউনিফর্ম এবং সাদা পোশাকে থাকবে নিরাপত্তা বাহিনী। মেটাল ডিরেক্টরসহ উঁচু ভবনের ছাদে অবজারভেশন পোস্ট থাকবে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ২০-২২টি স্থানে ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে।
যশোর নিউজ ডেস্ক।। বিডি টাইমস নিউজ