মানব দেহের হাড় কোলাজেন ফাইবারগুলোর সাহায্যে একে অপরের সঙ্গে আবদ্ধ থাকে। অস্টিওপোরোসিস এমন একটি রোগ যা হাড়ে থাকা ক্যালসিয়ামের ক্ষতি করে এবং সেইজন্য হাড়ের ক্ষয়ের মত সমস্যা খুব দ্রুত ঘটে। যার কারণে হাড়গুলো দুর্বল এবং ভঙ্গুর হয়ে যায়। এর ফলে হাড়ভাঙ্গা ও অস্টিওপরোসিসের মতো সমস্যা দেখা দেয়। এই রোগের বিভিন্ন প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বর্তমানে বহু গবেষণা চলছে।

রোগের প্রাথমিক লক্ষণ ও সমস্যাগুলি সম্পর্কে-
অনেকাংশে অস্টিওপোরোসিস সমস্যাটি বংশগত বা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত রোগ বলে মনে করা হয়। এই রোগ একজন ব্যক্তির হাড়ের বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে, যা পরে জীবনে অস্টিওপরোসিসের দিকে পরিচালিত করে। বিজ্ঞানীরা এখনও এই নির্দিষ্ট জিনগত ত্রুটিগুলো বা রোগের কারণগুলো কি, তা নির্ধারণ করতে সক্ষম হননি। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) পাশাপাশি জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা (এনআইএইচ), এটি ইঙ্গিত দেয় যে আপনার পিতা মাতার মধ্যে যদি অস্টিওপোরোসিস সমস্যাটি থাকে তবে আপনারও এই রোগটির জন্য পরীক্ষা করা উচিত।

অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ এবং স্ক্রিনিং-
সিডিসি-তে বলা হয়েছে যে একটি বিশেষ ধরণের এক্স-রে রয়েছে যা ডুয়াল এক্স-রে শোষণকারী (ডিএসএ) নামে পরিচিত। যা আপনার দেহের হাড়ের ঘনত্ব কম কিনা তা দেখানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। শরীরের হাড়গুলো দুর্বল এবং অস্টিওপরোসিস হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে কিনা তার পরিমাপ করা হয়। এই রোগে আক্রান্ত্রের নিয়মিত চেকআপ করা খুব জরুরী কারণ অস্টিওপোরোসিসে সর্বদা সুস্পষ্ট লক্ষণ থাকে না। এই রোগের কারণে যখন ঘন ঘন এবং হালকা চোটের ফলেই হাড়ে ফ্র্যাকচার হয়ে থাকে, তখন সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।

অস্টিওপোরোসিস রোগীর সমস্যা-
রোগীর বসবাসের স্থানে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি সবার আগে কমানো দরকার। অস্টিওপোরোসিসের বৃদ্ধির ফলে হালকা আঘাতের ফলেও হাড়ে ফ্র্যাকচার হতে পারে। যেহেতু হাড়গুলো খুব দুর্বল থাকে ফলে তা নিরাময়ে অনেক মাস সময় নেয়। পাশাপাশি হাড়গুলো যে পুরোপুরি নিরাময় হবে তারও কোনও গ্যারান্টি নেই। যদি একসঙ্গে একাধিক ফ্র্যাকচার হয় তবে তা আক্রান্ত ব্যক্তিকে শারীরিকভাবে দুর্বল করে তোলে। এই রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকরা ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণের পরামর্শ দেন। ধূমপান এবং অ্যালকোহল জাতীয় সেবন এড়িয়ে চলা উচিৎ এবং নিয়মিত ব্যায়াম ও যোগা করার প্রয়োজন। দেশে পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীরা অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হন বেশি। বয়স্ক পুরুষদেরও এই রোগ হয়ে থাকে। প্রতি তিন নারীর একজন এবং প্রতি পাঁচজন পুরুষের একজন এই রোগে আক্রান্ত হন। বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণায় বলা হয়, হাড়ক্ষয় রোগে বয়স্ক ব্যক্তিদের হাড় ভেঙে যায়। সঠিক চিকিৎসা না হলে ৫০ শতাংশের বেশি রোগী ছয় মাসের মধ্যে মারা যান। তবে যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে, ঠিকমতো খাবার খেলে এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করলে অস্টিওপোরোসিস সেরে উঠে। অস্টিওপোরোসিস রোগনির্ণয়, প্রতিরোধ এবং এ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে প্রতিবছরের ২০ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবস। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে