আজ ১০ জানুয়ারি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বিজয় অর্জনের পর ১৯৭২ সালের এই দিনে পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে এদিন বেলা ১টা ৪১ মিনিটে জাতির মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রক্তস্নাত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণার পর ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্থানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালির ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা ঘোষণার পর পাকিস্থানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাঁকে গ্রেফতার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়েছিল। পাকিস্থানের কারাগারে বন্দী করা হলেও তাঁর অনুপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে চলে মুক্তিযুদ্ধ। বাঙালি যখন প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তুলেছে, বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্থানের কারাগারে প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসাবে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন।

জাতির জনক পাকিস্থান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি এদিন বঙ্গবন্ধুকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তিনি পৌঁছান লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে। বেলা ১০টার পর থেকে তিনি কথা বলেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। পরে ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন।

১০ জানুয়ারি সকালেই তিনি নামেন দিল্লিতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, প্রধান নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সেদেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন। বঙ্গবন্ধু ভারতের নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের কাছে তাদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তাঁর এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে। এরপরে তিনি দিল্লী হয়ে স্বাধীন প্রিয় বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু। দীর্ঘ ৯ মাস পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের গণহত্যার সংবাদ শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা দেন, ‘রক্ত দিয়ে হলেও আমি বাঙালি জাতির এই ভালবাসার ঋণ শোধ করে যাব।

১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের পর বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য প্রাণবন্ত অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাঁকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকাল পাঁচটায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন। সশ্রদ্ধ চিত্তে তিনি সবার ত্যাগের কথা স্মরণ করেন, সবাইকে দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করেন।

উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী সরকার তাঁর নির্দেশিত পথে যুদ্ধ পরিচালিত হয়। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধের এক পর্যায়ে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ চূড়ান্ত রূপ নিতে শুরু করে। ধীরে ধীরে স্বাধীনতা অর্জনের পথে মুক্তিযোদ্ধা, জনতা ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ তীব্র হয়। জয় তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় মাত্র। একই সাথে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলা হয় প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হলে পাকিস্তানী বর্বর শাসকগোষ্ঠী বাধ্য হয় তাঁকে সসম্মানে মুক্তি দিতে।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে সরকার পরিচালনা করে অস্থায়ী প্রবাসী সরকার। ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২৩ সদস্য বিশিষ্ট আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিল। ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ জারিকৃত প্রেসিডেন্সিয়াল আদেশ বলে গণপরিষদ গঠন করে নভেম্বর মাসের মধ্যেই দেশের জন্য একটি সংবিধান উপহার দেয়া হয় এবং যা কার্যকর হয় ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর।

দিবসটি পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী প্রদান করেছেন। দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আগামীকাল সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন এবং বিকাল ৩টায় রাজধানীর ফার্মগেট কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । এছাড়াও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগ এবং সংগঠনের সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটির অনুরূপ কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে