শহিদুল ইসলাম দইচঃ ইট ভাটা ব্যবসায়ীদের বৈধতা দেয়া না হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানগুলির মালিক সমিতি। শার্শা উপজেলা ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি হাসান জহির অভিযোগ করে বলেন, যশোরের ৩০টি ইটের ভাটার বৈধতা দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর যশোর । বৈধতা নিয়ে ওই ৩০টি ভাটার বিরুদ্ধে আমাদের কোন কথা নেই। ইট ভাটার অনুমতি পেতে যে যে শর্ত পূরণ করতে হয়, আমরা তার সবকিছুই করেছি। তাহলে আমাদের কেন ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে না। এবার পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র না দিলে প্রয়োজন হলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে রাজপথে তারা আন্দোলনে নামবে বলে জানিয়েছে ইটভাটা মালিক সমিতি।
বাঘারপাড়া উপজেলা ইট ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন বাবলু বলেন, আমাদের এক একটি ইটের ভাটায় দেড়শ থেকে দুইশ শ্রমিক কাজ করেন। যশোর জেলায় দেড় শতাধিক ইট ভাটা আছে। শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। এই ভাটাগুলি থেকে ৩০হাজার পরিবারের রুটি রুজির ব্যবস্থা হয়। এই ৩০ হাজার পরিবারের জীবন নিয়ে ইঁদুর বিড়াল খেলেছেন যশোরের পরিবেশ অধিদপ্তর।
অভয়নগর উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আফছার আলী বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে নতুন করে কোনো ছাড়পত্র দেয়া হবে না। আমাদের দাবি, আমাদের ভাটা গুলি নতুন নয়। ১০-১৫ বছর আগ থেকে চলে আসছে। ৩০টি ইটভাটাকে যখন সম্পূর্ণ শর্ত পূরণ না করে বৈধতা দিল, তাহলে আমাদের অপরাধ কী। অবৈধ করতে হলে সবাইকে করুক, না হলে বৈধতা দিক।
চৌগাছা উপজেলা ভাটা মালিক সমিতি সভাপতি তৌহিদ দেওয়ান বলেন, যশোরের দেড় শতাধিক ইট ভাটায় কর্মরত ত্রিশ হাজার শ্রমিকদের মুখের দিকে তাকিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর বৈধতা দেয়া উচিত। তা না হলে আমাদের হাতে বিষ তুলে দিক। তাদের বিরুদ্ধে রাজপথে নামতে বাধ্য না করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর দায়ী করছে জেলা প্রশাসনকে। আর জেলা প্রশাসন বলছে, এ দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। প্রসঙ্গত, তিন মাস আগে এই প্রতিবেদক যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরে যান জেলায় ইটভাটার সংখ্যা, বৈধ এবং অবৈধ ভাটার বিষয়ে জানার জন্য। দপ্তরটির উপ-পরিচালক মো. ইমদাদুল হক এবং সহকারী পরিচালক সৌমেন মিত্র এই প্রতিবেদককে কোনো সহায়তা করেননি।
যশোর ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেসার্স ফাইম ব্রিক্সের স্বত্বাধিকারী মো. সেলিম রেজা বাবুল অভিযোগ করেন, আমরা যশোর জেলায় ইট ভাটা ব্যবসায়ীরা প্রতিবছর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স, কাস্টম এক্সসাইজে ভ্যাট, ট্যাক্স, ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র, কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শকের ছাড়পত্র, কর্মচারীদের স্বাস্থ্যসনদ, জমি থেকে মাটি কেনার বাণিজ্যিক খাজনা প্রদানসহ সকল ধরনের শর্ত পূরণ করি। তারপরেও পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র দিচ্ছে না। অথচ আমরা ইট ভাটার মালিকরা প্রতিবছর সরকারকে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা টাকা দেই। এরপরেও আমরা ব্যবসায়ীরা বিড়াল-ইঁদুরের খেলার শিকার হচ্ছি।
মালিক সমিতির সভাপতি ভৈরব ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী নাজির আহমেদ মুন্নু বলেন, প্রতিবছর জেলা প্রশাসকের এলআর ফান্ডে টাকা দেই। এছাড়া ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চসহ জাতীয় সকল দিবসে জেলা প্রশাসকের প্রোগ্রামে টাকা দেই। আমাদের বৈধতা দেয়া হলে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আসতো। আমরাও শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করতে পারতাম। কখনো পরিবেশ অধিদপ্তর আবার কখনো ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে পৃথক অভিযানে যান ইট ভাটাগুলোতে। অভিযানে কখনো ভাটা ভেঙে দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। আবার লাখ লাখ টাকা জরিমানা করে তা আদায় করেন। গত সপ্তাহে দশটি ইটের ভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছেন। আমাদের দুঃখ কেউ বোঝে না, আমাদের কথা কেউ লেখে না। জানার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগের পরিচালক সাদেকুল ইসলামকে ফোন দিলে তিনি ফোন কেটে দেন। বক্তব্য ফোন নেয়ার জন্য কথা বলা প্রয়োজন টেক্স তিনি অসুস্থ বলে জানান।
যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.ইমদাদুল হক বলেন, অবৈধ ইট ভাটা গুলিকে ছাড় দেয়া হবে না। অভিযান পরিচালনা করে ইটভাটা গুলি গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। বৈধ ত্রিশটি ভাটা নিয়ে অনেক গুঞ্জন এবং স্বজন প্রীতি করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে ডিডি বলেন, যে কথাই থাক না কেন বৈধতা দেওয়ার সময় আমি যশোরে ছিলাম না। যশোরের জেলা প্রশাসক মো.আজাহারুল ইসলাম বলেন, লাইসেন্স ছাড়পত্র পরিবেশ অধি দপ্তরের। সরকার ইকো ফ্রেন্ডলি গণপূর্ত পরিবেশ বান্ধব ২০২৫- ২০২৬ চালু করতে যাচ্ছে। সরকারি বিধিমালা নিয়ম-কানুন মেনে ভাটা পরিচালনা করলে। অবশ্যই ইটভাটার ছাড়পত্র পেতে পারে। সবকিছুই গভীরভাবে যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে ।
যশোর নিউজ ডেস্ক।। বিডি টাইমস নিউজ