শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি।। কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় পৌর গোরস্তানে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের নামে গাছ কাটা বন্ধের দাবি জানিয়েছে কুষ্টিয়ার একাধিক সামাজিক, পরিবেশবাদী ও সেচ্ছাসেবী সংগঠন। গত শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর, ইসাবেলা ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ ফেডারেশন (বিবিসিএফ), সম্মিলিত সামাজিক জোট, মানুষ মানুষের জন্য, কুষ্টিয়া বার্ড ক্লাব ও স্বপ্ন প্রয়াস যুব সংস্থা নামের সংগঠনের কর্মীরা এবং কুষ্টিয়া শহরের সর্ব সাধারণ মানুষ কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় পৌর গোরস্তানের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
উক্ত মানববন্ধনে নানা ধরনের প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘আমি বৃক্ষ, আমাকে বাঁচান- আপনারা বাঁচুন, ‘কবরস্থানে নাগরিকের কথা শুনুন-গাছ কাটা বন্ধ করুন, গোরস্থানের গাছ হত্যা বন্ধ কর এ জাতীয় বিভিন্ন স্লোগান। কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র গোলাম মাহমুদ রুবেল এর সঞ্চালনায় এবং মানুষ মানুষের জন্য ও কুষ্টিয়া বার্ড ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক নাব্বির আল নাফিজের পরিচালনায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি খলিলুর রহমান মজু বলেন, বিপর্যয় রোধে বিশ্বব্যাপী যখন পরিবেশ সংরক্ষণের নীতি নেওয়া হয়েছে, সেখানে গাছে কাটা অপরাধ প্রবণতা। গাছ কেটে নগর জীবন নষ্ট করবেন না। গাছ কাটার অপ-সংস্কৃতির বিরুদ্ধে গণপ্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি সহায়তায় গাছ কাটার বিরুদ্ধে প্রচার এবং পরিবেশ সংরক্ষণে জনমত গড়ে তুলতে হবে। এসময় মানুষ মানুষের জন্য কুষ্টিয়ার সভাপতি ও বিবিসিএফ এর সহসভাপতি শাহাবউদ্দিন মিলন বলেন, গাছ কেটে কোনো উন্নয়ন হয় না। প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন না হলে তার ফলাফল হয় বিপর্যয়কর। সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশের তাপমাত্রার রেকর্ড বৃদ্ধি পেয়েছে, এমতাবস্থায় অক্সিজেনের অকৃত্রিম উৎস গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। পরিপূর্ণ একটি গাছ অন্তত দুইজন মানুষের সারা বছরের অক্সিজেনের যোগান দেয়।বাৎসরিক ৪৮ পাউন্ড হারে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে একটি গাছ গ্রিন হাউস প্রক্রিয়াকে রুখতে সাহায্য করে। তাই সারা বিশ্বে আজ প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার সচেতনতা বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ উন্নয়নের নামে গাছ কেটে পরিবেশ ধ্বংসের পথে হাঁটছে। বিশ্বব্যাপী উষ্ণয়নের মধ্যে এমন প্রকৃতি বিধ্বংসী নীতি জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। তাই আমি পৌর পিতার প্রতি আহবান জানাই তিনি যেন এই গাছ হত্যা বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। অবিলম্বে কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় পৌর গোরস্তানের গাছ কাটা বন্ধের দাবি জানিয়ে বিবিসিএফ এর সাধারণ সম্পাদক এস আই সোহেল বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প প্রণীত হয় জনগণের জন্য, জনগণের জীবনমান উন্নয়নের জন্য। উন্নয়নের পরিকল্পনায় তাই প্রকৃতি ও পরিবেশকে আত্তীকরণ করতে হবে। কুষ্টিয়া পৌর কতৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংসের নীতি থেকে সরে শহরজুড়ে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি তরান্বিত করার। মানববন্ধনে প্রতিবাদী ফেস্টুন ও বক্তৃতার মধ্যে দিয়ে তারা গাছ বাঁচানোর এই আন্দোলনে সবাইকে যোগ দেয়ারও আহ্বান জানান সেই সাথে পৌর পিতার সুদৃষ্টিও কামনা করেন বক্তারা।
প্রসঙ্গত লোকাল গভর্নমেন্ট কোভিড-১৯ রেসপন্স এ্যান্ড রিকভারি প্রকল্পের আওতায় গোরস্থানে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য কৃষ্ণচূড়া ৭টি, অর্জুন, কাঠবাদাম ৩টি, দেবদারু, শিমুল, আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, পলাশ, বকুল, নিম, পাম, শিশু, কদম, চালতা, জামরুল, কামরাঙ্গা, আতা, সফেদা, জবা, সুপারি, সজিনা, মেহেদী, শিউলি, জিগা, খেজুর সহ বিভিন্ন প্রজাতির মোট পাই ৪৬৫ টি গাছের দর নির্ধারণ ও কর্তনের বিধিগত প্রত্যয়ন প্রদানের জন্য গত ২৪-০১-২০২৩ তারিখে বন বিভাগ বরাবর চিঠি প্রদান করেন কুষ্টিয়া পৌরসভা।
কুষ্টিয়া নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইমস নিউজ