১৪ ডিসেম্বর জয়পুরহাট মুক্ত দিবস। পাক-হানাদারদের পরাজিত করে ’৭১-এর ১৪ ডিসেম্বর বিকালে লাল সবুজের পতাকা উড়িয়ে হানাদারমুক্ত ঘোষণা করা হয় জয়পুরহাটকে। বাঘা বাবলুর নেতৃত্বে এদিন অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধারা পাঁচবিবি ভূঁইডোবা সীমান্ত দিয়ে জয়পুরহাটে প্রবেশ করে ডাকবাংলো মাঠে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে জয়পুরহাটকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করেন। পত পত করে সে দিন মুক্ত আকাশে উড়েছিল পরম আরাধ্য মহান স্বাধীনতার বিজয় পতাকা।
৭১-এর ২৪ এপ্রিল সান্তাহার থেকে রেলযোগে পাকসেনারা জয়পুরহাটে এসে এদেশীয় দোসরদের সহযোগীতায় পাঁচবিবি গোহাটিতে আক্রমণ করে। পরদিন পাগলা দেওয়ান ও ক্ষেতলালের চরবাখরা ব্রিজ এলাকায় ক্যাম্প স্থাপন করে। পাগলা দেওয়ানের অক্ষত বাঙ্কারটি আজও সেই ভয়াল স্মৃতি বহন করে চলেছে।
এ পথে ভারতগামীদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে হাজার হাজার শরণার্থীকে হত্যা করে পাকিস্তানিরা। এখানেই শেষ নয় ২৬ এপ্রিল সদর উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা কড়ই-কাদিপুর গ্রামের ৩৭১ জন মৃৎশিল্পীকে ধরে এনে বায়োনেট নিয়ে খুঁচিয়ে ও লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।
৭১-এর ১৪ ডিসেম্বর শীতের কুয়াশায় মোড়া নতুন সূর্য ওঠা ভোরের আলোয় জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ভূঁইডোবা সীমান্ত অতিক্রম করে দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার দল। যাদের নেতৃত্ব দেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার প্রয়াত বাঘা বাবলু। তার আগেই পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে জেলা সীমানা ছেড়ে পালিয়ে যায় পাক হানাদাররা।
মুক্তিযোদ্ধাদের দলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা (প্রয়াত) আব্দুল মোতালেবের নেতৃত্বে পাঁচবিবি উপজেলা সদরে পৌঁছে পুলিশ স্টেশনে (থানায়) প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে দেন। অন্যদিকে পায়ে হেঁটে বিকেলে জয়পুরহাট জেলা শহরে পৌঁছে ‘পুরনো ডাক বাংলো’ চত্বরে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার (প্রয়াত) বাঘা বাবলু স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ান।
জয়পুরহাট জেলাকে হানাদার মুক্ত করতে যে অকুতভয় সূর্য সন্তানেরা আত্মোৎসর্গ করেছিলেন তাদের স্মরণে শহরের শহীদ ডা. আবুল কাশেম ময়দানে নির্মাণ করা হয় ৭১ ফুট উচ্চতা সম্বলিত ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ’। এছাড়াও পরবর্তীতে জেলা প্রশাসন চত্বরে স্থাপন করা হয় মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্তম্ব।
জয়পুরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার আমাজাদ হোসেন বলেন, নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শেষে অবশেষে ৭১-এর ১৪ ডিসেম্বর বাঘা বাবলুর নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা ভূঁইডোবা সীমান্ত দিয়ে পাঁচবিবি প্রবেশ করলে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে থাকে। পরে পতাকা উড়িয়ে জেলাকে হানাদার মুক্ত যোষণা করেন।
তথ্যঃ ইটিভি