ভারতের মুম্বাইয়ের বিভিন্ন যৌনপল্লীতে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া নারীদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়েই চলেছে। আর এটা প্রতিরোধে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সামাজিক সংগঠনগুলো তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। বাংলাদেশে থেকে ভারতে যাওয়া অভিবাসীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সেখানে বাংলাদেশি যৌনকর্মীদের সংখ্যাও বাড়ছে। যৌনকর্মীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ভারতের মুম্বাইভিত্তিক সংগঠন ‘প্রেরণা’ বৃহস্পতিবার এসব তথ্য জানিয়েছে। সংগঠনটির প্রতিবেদনে বলা হয়, মুম্বাইয়ের প্রধান যৌনপল্লী কামাথিপুরায় সবচেয়ে বেশি বাংলা ভাষাভাষি বাণিজ্যিক যৌনকর্মীরা কাজ করে। এর মধ্যে সামান্য কিছু নারী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে গেলেও বেশিরভাগই বাংলাদেশি। প্রেরণার সহ-প্রতিষ্ঠাতা প্রিতি পাটকর বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ভারতে গমন করা অভিবাসীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এমন ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে অভিবাসীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পাচারের শিকার হয়ে থাকে। তারা সহজেই একটা ভালো চাকরি কিংবা একটা ভালো জীবনের আশ্বাসে প্রলুব্ধ হয়ে থাকে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে কামথিপুরায় প্রেরণার রাত্রিকালিন পরিচর্যাকেন্দ্রে ২১৩ জন নারী ভর্তি করা হয়েছে, যার মধ্যে ১২৮ জনই ছিল বাঙালি। শহরের অন্যান্য এলাকায়ও একই চিত্র দেখা যায়। এছাড়া ভারতের উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক এবং অন্ধ্র প্রদেশ থেকেও এখানে প্রায় এক ডজন যৌনকর্মী আছে। বর্তমানে দেশটিতে প্রায় ৩০ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করছে। প্রতিদিন অবৈধভাবে যাচ্ছে শতাধিক বাংলাদেশি। বাংলাদেশের বিভিন্ন দরিদ্র এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ভালো চাকরি আর উন্নত জীবনের লোভ দেখিয়ে নারীদের ভারতের পতিতালয়গুলোতে পাচার করে দেয় মানবপাচারকারীরা। প্রিতি পাটকর জানান, বাংলাদেশ থেকে মুম্বাইয়ে পাচার হয়ে যাওয়া নারীরা সব সময়ই নানা ভীতিতে থাকেন। নিজেদের অধিকারের ব্যাপারে কারো সাহায্যও চাইতে পারেন না তারা। এমনকি পতিতালয়গুলো থেকে উদ্ধারের পরও পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে তারা ভয় পান। মানবপাচারকারীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য ও এ বিষয়ে সহযোগিতা ও তথ্য আদান-প্রদান বাড়ানোর লক্ষ্যে গত বছর বাংলাদেশ এবং ভারতে সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তির ফলে মানবপাচারের শিকার ভুক্তভোগীদের উদ্ধার এবং তাদের ফিরিয়ে আনা ও পাচারকারীদের বিচারের সম্মুখীন করা অনেকটা সহজ হয়েছে। মুম্বাই পুলিশের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘এখন একটা ভালো প্রক্রিয়া তৈরি হয়েছে। আমরা তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করি, এরপর তাদের একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কাছে হস্তান্তর করে দেই। ওই এনজিও তাদের দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়ে থাকে। এটা নারীদের জন্য ভালো একটি উপায়।’ উল্লেখ্য, এই প্রথমবারের মতো চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশ থেকে পাচারের শিকার এক নারী আবার বাংলাদেশে ফিরে এসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারতের আদালতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে। মুম্বাইয়ের একটি পতিতালয় থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছিল। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক সংস্থা ‘ইউএনওডিসি’র তথ্য অনুসারে, এশিয়ার ভেতরের দেশগুলোতে মানবপাচারের ঘটনা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। গত বছর এশিয়াতে অবৈধ মানবপাচারের ব্যবসা হয়েছে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের। আর এশিয়ার অঞ্চলগুলোর মধ্যে মানবপাচারের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে দক্ষিণ এশিয়া। প্রতি বছর এ অঞ্চলের দেড় লাখেরও বেশি মানুষ পাচারের শিকার হয়।
তথ্যসূত্র ঃ প্রিয়.কম