একটি একা মেয়ে ইচ্ছে করলেই বাজার যেতে পারে, ডাক্তারের সাথে দেখা করে ওষুধ আনতে পারে কিন্ত এসব কাজ কেও আন্তরিকতার সাথে করে দিলে এক ধরনের আরাম হয়, মনের আরাম। ” শমরেশ মজুমদার। “নারী ” তোমাকে নিজের কাছে নিজে আগে স্বাধীন হতে হবে। একজন নারীকে প্রথমে নিজেকে মানুষ ভাবতে হবে, প্রতিটি মানুষের স্বকীয় বৈশিষ্ট থাকে, স্বকীয় বৈশিষ্ট বজায় রেখে স্বাধীনতা ভোগ করাই আত্মমর্যাদার। প্রবাদ আছে ” বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে”. অনেক সময় নারী স্বাধীনতার কথা বলে আমরা পুরুষের পোশাক পড়ি, কোন নারী যদি পুরুষের পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে তবে সে অবশ্যই তা পরতে পারে, কিন্ত শুধুমাত্র স্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশ করতে যেয়ে এই কাজ করলে পুরুষকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। নারী নিজ স্বকীয়তায় সব থেকে সুন্দর। নারীকে পোশাকে নয়, স্বাধীন হতে হবে চিন্তার জায়গাই, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে, প্রফেশন বাছাইয়ের ক্ষেত্রে। সমাজের একটি সাধারণ ধারনা মেয়েরা শুধু ডাক্তার এবং শিক্ষকতা পেশার জন্য উপযুক্ত। মেয়েরা যখনই এই প্রচলিত ধারনার বাইরে যেয়ে কোন প্রফেশন বেছে নেই তখন ই তার দিকে চরিত্রহীনের তীর ছুড়ে দেয়া হয়। নারী তার নিজ কর্মক্ষেত্রে যখন ই সফলতা অর্জন করে, যখন তার সাথে যোগ্যতার লড়াইয়ে পারে না তার সহকর্মীরা তখন তাকে চরিত্রহীন বলে তাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে তার গতিরোধ চেষ্টা করা হয়। এই নোংরা খেলায় পুরুষের পাশাপাশি মেয়েরাও অংশ নেয়।

স্কুল জীবনে মায়ের কাছ থেকে ” সাতকাহন ” বইটি উপহার পেয়েছিলাম, মন্ত্র মুগ্ধের মত বইটি পড়ার সময় বারবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক নির্যাতিত মেয়ের মুখ, যে সমাজের প্রচলিত নিয়ম ভেংগে নিজ যোগ্যতায় নিজের পরিচয়ে পরিচিত হয়, কিন্ত উপন্যাসের শেষ অংশ মেনে নিতে পারিনি। শুধু নারী নয়, নারী পুরুষ সবাইকে জীবনের সব ক্ষেত্রেই কিছু না কিছু ত্যাগ, সমঝোতা করে চলতে হয়। নারী স্বাধীনতার নামে এক শ্রেণী এমনভাবে নিজেদের জীবন পরিচালিত করছে যে সমাজে বিবাহ বিচ্ছে, লিভ টু গেদার, মাদকাসক্ত বিষের মত ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে তারা সমাজ বিচ্যুত হয়ে পড়ছে, যার ফলে নারী স্বাধীনতার প্রকৃত আন্দোলন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যে বিপ্লব ব্যক্তি, সমাজ, দেশের জন্য কল্যাণকর সেই বিপ্লব ই প্রকৃত সাফল্য লাভ করে।

একটি মেয়েকে আঘাত করার প্রথম এবং প্রধান অস্ত্র ” চরিত্র” যেন চরিত্র শব্দটি শুধু মেয়েদের জন্য তৈরী হয়েছে। একটি মেয়ে ধর্ষিত হলে মেয়ের চরিত্রের দিকে আঙুল তোলা হয়, অনেক সময় কিছু কুরুচিপূর্ণ পুরুষ ধর্ষণ এর গল্প রসালো ভাবে উপস্থাপন করে। তবে মেয়েদের এই নির্যাতিত হওয়ার গল্পের পেছনে অনেকাংশে মেয়েরা নিজেরাও দায়ী। কিছু মেয়ে নিজেকে স্বামীর দাস হিসাবে উপস্থাপন করতে বেশি পছন্দ করে। স্বামী অনেক ধনী, সুতরাং নিজের অর্থ উপার্জন করা লাগবে না, এমন মনোভাব দেখা যায় তাদের মধ্যে, কিন্ত প্রতিটি মানুষ এর উচিত অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। নারীকে নিজের পরিচয়ে পরিচিত হতে হবে, নিজ মেধা, পরিশ্রম ও সাহসিকতার মধ্য দিয়ে

প্রচলিত হিন্দু বিয়েতে একটা রীতি আছে, মেয়ে বাবার বাড়ি ত্যাগ করার সময় পেছনে চাল ছিটাতে ছিটাতে যায়। এই রীতির অন্য ধর্মীয় ব্যাখ্যা আছে, কিন্ত আমার কাছে মনে হয় মেয়েটি তার ব্যক্তিসত্তা এবং সকল স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে স্বামীর বাড়ি গেলো। নারী সমাজের জন্য অনুকরণীয়, অনুসরনীয় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা, বেগম রোকেয়া, শেখ হাসিনা, ইলা মিত্র, প্রীতিলতা ওয়াদ্দের প্রমুখ ব্যক্তি। এসব মহিয়সী নারী, নারী সত্বা বজায় রেখে আমাদের জন্য উজ্জ্বল দৃস্টান্ত রেখে গেছেন।

পুরুষ সমাজের প্রতি আহবান নারীকে ” মানুষ ” ভাবুন। যে মানুষ আপনার বিপদে আপনার পাশে থাকে, সুখের সময় আনন্দ ভাগ করে নেয়, অদৃশ্য ছায়ার মত সব সময় আপনাকে আগলে রাখে। নারীর স্বপ্ন, নারীর প্রতিভাকে গলা টিপে হত্যা করে পুরুষ এর উন্নয়ন সম্ভব না। নারীদের প্রতি আহবান রইলো নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে সমাজে নিজের পরিচয়ে পরিচিত হয়ে নারীর অধিকার আন্দোলনকে তরান্বিত করুন, আগামী প্রজন্মের জন্যে দৃস্টান্ত স্থাপন করুন। জয় হোক নারী শক্তির।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে