করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় কোয়ারেইন্টাইন পদ্ধতি বর্তমানে অর্থনীতির ভারে কার্যত টিকে নেই। সুতরাং করোনা ভাইরাস সংক্রমণ আর দৈনন্দিন জীবন সমান তালে চলার সময় এসে গেছে। আপনাকে ধরে নিতে হবে শতভাগ আপাতত করোনা ভাইরাস মুক্ত হতে পারছেন না। আর দশটা রোগের মত এটার সাথে যুদ্ধ করে আপনাকে বেঁচে থাকতে হবে। ধরেই নিতে হবে হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হবে। যার বেশির ভাগ মানুষ হাসপাতালে জায়গা পাবে না। যার যার বাসায় এই চিকিৎসা করতে হবে। আশার আলো বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রুগি থেকে মৃত্যুর হার কম।
আগামী দিন বদলে যাবে আমার আপনার জীবন যাত্রা।
ঘুম থেকে উঠে বা হটাৎ শুনলেন পাশের ফ্ল্যাটে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে শুনে চিন্তা করবেন না। শুধু মনে রাখতে হবে যিনি আক্রান্ত হয়েছেন তার শরীরে জীবাণু ঢুকেছে পাঁচ-সাত দিন আগে। তখন থেকেই তার মাধ্যমে অন্যদের শরীরেও জীবাণু ঢুকতে পারে। আপনি যদি গত পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে থাকেন যেমন একসঙ্গে লিফটে ওঠা-নামা, দোকানে যাওয়া, নিজেদের মধ্যে টাকা লেনদেন করা, একসঙ্গে সিঁড়ির কোণায় বা বেজমেন্টে দাঁড়িয়ে আড্ডা দেওয়া, ধূমপান করা, ইফতার বা অন্য খাবার আদান প্রদান করা ইত্যাদি, তাহলে আপনাকেও পরিবারসহ চৌদ্দদিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
মনে রাখতে হবে আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের প্রতি সবাইকে সাহায্য, সহযোগিতা এবং সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে ।এটা আপনার আমার সকলের সুস্থতার জন্যই জরুরি। লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন ওই পরিবার সঠিকভাবে আলাদা ভাবে থাকতে পারে এবং শক্ত মনোবল নিয়ে করোনা মোকাবিলা করতে পারে।আক্রান্ত পরিবারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস, খাবার এবং ওষুধ তাদের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে বা ব্যবস্হা করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে এসব কেনাকাটার বিল যা হবে সেই টাকা আপাতত বিল্ডিংয়ের অন্যরা পরিশোধ করুন বা কোন অন লাইন ব্যাংকিং -মোবাইল ব্যাংকিংএ লেনদেন করুন। কেননা টাকার মাধ্যমে ভাইরাস অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আক্রান্ত পরিবারের ময়লা বড় পলিথিনে মুখ ভালোভাবে বন্ধ করে দরজার বাইরে রাখতে হবে। যিনি ময়লার ব্যাগ বা পলিথিনটি নিবে তিনি প্রথমে সেই ময়লার পলিথিন/ব্যাগে জীবাণুনাশক স্প্রে করবে তারপর আরেকটি বড় পলিথিনে ওই ব্যাগটি ঢুকিয়ে, মুখ আটকে নিয়ে যাবে।মনে রাখতে হবে আক্রান্ত পরিবারের ফ্ল্যাটের মূল দরজার হ্যান্ডেল , কলিংবেল, সুইচ, দুই ফ্ল্যাটের মধ্যকার জায়গা প্রতিদিন কয়েকবার জীবাণুনাশক দিয়ে মুছতে হবে। বাসায় রোগীর জন্য অবশ্যই আলাদা রুম ও আলাদা টয়লেট ব্যবস্থা করতে হবে।রোগীর জামা-কাপড়, ব্যবহারের জিনিসপত্র সম্পূর্ণ আলাদা রাখা ও ধোয়ার ব্যবস্হা করা।রোগীকে পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে চার সপ্তাহ আলাদা রাখুন। তবে একই পরিবারের সবাই আক্রান্ত হলে তারা একসঙ্গে থাকতে পারবে। সেক্ষেত্রে পরিবারের কেউ বাইরে যেতে পারবেন না অথবা বাইরে থেকে কেউ বাসায় প্রবেশ করতে পারবে না।বাসায় রোগী এবং অন্যান্য সবার মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
রোগীকে বাসায় দিনে দুই থেকে তিন লিটারের মতো পানি পান করতে হবে। সব ধরনের স্বাভাবিক খাবার খাওয়া যাবে। তবে ভিটামিন-সি যুক্ত ফল খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে যেমন লেবু, কমলা, মাল্টা। বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া প্রয়োজন। এতে রোগ সংক্রমণ আশঙ্কা কমানো সম্ভব।বাসার মেঝে জীবাণুমুক্ত করতে বারবার অ্যান্টিসেপ্টিক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। মানসিকভাবে সুস্থ থাকলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে যাতে করে আপনি করোনার মতো অন্যান্য ভাইরাস বা জীবাণুর সাথে যুদ্ধে জয়লাভ করে বেঁচে থাকতে পারেন।প্রতিদিন ব্যায়াম করুন। দুশ্চিন্তা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে। প্রতিদিন দুই থেকে তিন লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করুন আর ছয় থেকে সাত ঘন্টা শান্তিতে ঘুমান।শাকসবজি, ফলমূল, মাছ বেশি খান। প্রচুর ভিটামিন সি,ই,ডি দরকার। ভিটামিন ডি পেতে প্রতিদিন কম পক্ষে দশ মিনিট সূর্যের নীচে থাকতে হবে। ভিটামিন সি ও ভিটামিন ডি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি করে।
পশুর থেকে ভাইরাস ছড়ায় এটা কোন নতুন কথা নয় সুতরাং বিল্ডিংয়ে বিড়াল, কুকুর থাকলে সেগুলোর অবাধ বিচরণ বন্ধ করতে হবে। করোনার প্রভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন আসবে বা আনতে হবে। স্কুল খোলার পূর্বেই সংশ্লিষ্টরা অবশ্যই চিন্তা করবেন কি ভাবে ছাত্র-ছাত্রীরা জীবনুমুক্ত হয়ে স্কুলে প্রবেশ করবে। এর পাশাপাশি বিশ্বে শিক্ষা কার্যক্রমে অনলাইন বা ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার বেড়েছে। বিশ্বে অ্যাপ ব্যবহার করে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে। বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে সংসদ টিভির মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে।বাংলাদেশে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম ভবিষ্যতে বাড়বে।
অনলাইনে ব্যবসা বা সেবার পরিধি বাড়বে, দেশে ইতোমধ্যে অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে দেশে ভোগ্যপণ্য, প্রসাধনি সামগ্রী, গাড়ীর ব্যবসা, হাউজিং, চাকুরীর পরীক্ষা, অফিসের কার্যক্রম, প্রাথমিক চিকিৎসা অন লাইনের মাধ্যমে হবে।এমনকি আগের অনেক ব্যবসায়িক মিটিং বা সামাজিক কাজ আগামীতে অন লাইনের সাহায্যে মানুষ করবে।
খাবার হোটেলের ব্যবসা আগামীতে চ্যালেঞ্জে পড়তে যাচ্ছে যদি মানুষ সচেতন হয় করোনা সহ সকল ভাইরাস সম্পর্কে।এমনিতেই যে কোন ধরনের ফার্স্ট ফুড শরীরের জন্য ভালো নয় তার মধ্যে এখন নতুন করে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতার একটা চ্যালেঞ্জ চলছে কারণ এর চেয়ে ভালো ঔষধ আর নেই। সুতরাং মানুষের খাদ্যাভাসে বাহিরের খাবার কমে যাবে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাহিরে বের হওয়ার সম্ভাবনা মানুষের কম আগামী কিছু দিন সুতরাং পর্যটন সংশ্লিষ্ট আবাসিক হোটেল,পরিবহন বিমান সহ সংশ্লিষ্ট সকল ক্ষেত্রে মন্দা ভাব দেখা দিবে।
বাংলাদেশের আনুমানিক দুই কোটি মানুষ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দরুন বিশ্বময় খাদ্যের মন্দা, বেকারত্ব বৃদ্ধি, মুদ্রা স্ফীতি সব মিলিয়ে বিশাল অর্থনীতির মন্দা দেখা দিবে, ইতিহাস বলে এরকম পরিস্থিতিতে উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে। তখন মানুষ বলতে থাকে আগে নিজের দেশের মানুষের কাজ, বিদেশিদের তাড়াও, হিংসা কোন কোন জায়গায় এমন পৌছাবে যে তারা বিদেশীদের বাসা-বাড়িতে বা রাস্তায় আক্রমণ করে বসবে। জানা মতে বাংলাদেশের বহু মানুষ যারা বিদেশে ছোট ছোট কাজে কর্মরত তারা অনেকে গত দুই মাসের বেতন পায়নি। কোন কারণে বৈদেশিক মু্দ্রূা পাঠানো এই মানুষ গুলো ফেরৎ আসে তাদের উপর নির্ভরশীল বাংলাদেশের মানুষ গুলো সব মিলিয়ে কত মানুষ এক সাথে বিপদে পড়তে পারে।
সারা পৃথিবীর বানিজ্যের মন্দায় আমাদের রপ্তানি মুখি সকল কলকারখানায় এর প্রভাব পড়বে। পূর্বের ন্যায় রপ্তানি কমে যেতে পারে। সেখানেও শ্রমিকের বেতন সংকট দেখা দিবে। বন্ধ হয়ে যেতে পারে কলকারখানা বেকার হয়ে যেতে পারে অনেকে। কৃষক নাম টা শুনলেই একটা গেঁয়ো গেঁয়ো ভাব চোখের সামনে ভাসে কি বলেন? সেই কৃষকের ফলানো ফসলই বাংলাদেশের আশার জায়গা। কারণ এবার শস্য উৎপাদন ভালো হয়েছে। এই আশাবাদ ‘ইকোনমিস্ট’ কাগজেও সম্প্রতি ব্যক্ত হয়েছে।ইকোনমিস্টের জরিপে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস সংকটে সবচেয়ে কম ঝুঁকিতে থাকা দশ দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ।এই ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির পিছনে অবশ্যই বিগত সময় বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে যা অবশ্যই প্রশংসা রাখে। প্রশংসা রাখে অর্থনীতি সচল রাখতে বর্তমান সংকটের শুরুতেই প্রণোদনা প্রনয়ণ।
সব ভালো যার শেষ ভালো।স্বপ্ন সবাই দেখে, চল স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশের মানুষ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সংকট থেকে তওবাও করেছে তারা আর লোভ করবে না অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকবে। কারন তারা জেনেছে লোভ পরিহার করলে আর অল্পতে সন্তুষ্টি থাকলে বাংলাদেশ পৃথিবীর সেরা দশটি দেশের ক্লাবে ঢুকে যাবে।
লেখক : কাজী বর্ণ উত্তম, লেখক ও কলামিস্ট
নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্স নিউজ