ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতাঃ সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেওকরোনা ভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন মহামারী আকারে বেড়ে চলেছে। সরকার জনগনকে সচেতনতার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। বৃদ্ধি করা হয়েছে সাধারণ ছুট। আবার অনেক এলাকাকে লকডাউন করে রাখা হয়েছে। তবে জরুরি কিছু প্রয়োজনীয় অফিস  খোলা রাখা হয়েছে । করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে ঔ সকল অফিস ও প্রতিষ্ঠান গুলো  নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

করোনা ভাইরাসের প্রভাবে চিকিৎসকরা অনেক বেশি ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। বিশেষ করে যারা  সরকারি হাসপাতালে চাকুরী করেন তারা।  তবে  দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে কিছু চিকিৎসক সরকারি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছেন বলে  জানা গেছে। অনেকে আবার তাদের বেসরকারি হাসপাতালে প্রেকটিস আপাতত বন্ধ রেখেছেন। চিকিৎসকদের এসব বিষয় নিয়ে চলছে শহরব্যাপী আলোচনা-সমালোচনা। সরকারি চিকিৎসকদের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভ রয়েছে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে।তারা বলছেন, সরকারিভাবে যেসব নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। করোনা আক্রান্ত রোগিদের যে সকল চিকিৎসক,চিকিৎসা  সেবা দিবেন! তাদের দিনে তিনটি পিপিই ব্যবহার করতে হবে। সে হিসেবে মাসে ৯০টি পিপিই লাগবে একজন চিকিৎসকের। কিন্তু সরকারি ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত বিপুল সংখ্যক পিপিই ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেউ একটি বা দুটি পিপিই পেয়েছেন। অনেকেরই অভিযোগ, যে পিপিই তারা পেয়েছেন তা মানসম্মত নয়। এই বিতরণ নিয়ে অনেক চিকিৎসকের মনেই শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।  এসব সরঞ্জাম এর অপব্যবহার বা দুর্নীতি হচ্ছে কিনা! এখানে দুর্নীতি ও অপব্যবহার রোধ করা না গেলে, অনেক স্বাস্থ্য কর্মী ও হাসপাতাল কোয়ারেনটাইনে চলে যেতে হবে। চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার হাত থেকে বাঁচাতে সুরক্ষা সরঞ্জাম এর সঠিক যোগান দিতে হবে চিকিৎসকদের।তারপরেও বেশির ভাগ চিকিৎসক ঝুঁকি নিয়ে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিতে হাজির হচ্ছে। আবার এই বেশির ভাগ চিকিৎসকই নিজ খরচে তাদের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা সামগ্রী ক্রয় করে  হাসপাতালে উপস্থিত হচ্ছেন।

ঔ সকল চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন  করছি, যারা দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে ঝুঁকি নিয়ে ও নিজ খরচে বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী কিনে হাসপাতালে রোগি দেখে যাচ্ছেন। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের এক আবাসিক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে হাজিরা দিয়ে পালিয়ে গিয়ে পাশের ক্লিনিকে রোগি দেখার অভিযোগ রয়েছে। তবে তিনি কি সবার চেয়ে উর্ধ্বে?সরকারি হাসপাতালে বেশির ভাগ রোগির সংস্পর্শে আসেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসকগন।  কথা হয় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সৈয়দ আরিফুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, সামনে আমাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। সম্ভাব্য বিপদ মোকাবেলা করতে সকলকে তাই একযোগে কাজ করতে হবে। স্বাস্থ্য কর্মীদের পিপিই প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী দিতে হবে। এ সময়ে, সাধারণ মানুষের সাধারণ সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসা ঠিক হবে না।  এখন তাদের কোন ভাবেই বাসা থেকে  বের হওয়া ঠিক হবে না।এদিকে দেশে করোনা আক্রান্ত রোগির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে বেসরকারি হাসপাতালের অধিকাংশ চিকিৎসক প্রাইভেট প্রেকটিস  বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে ঔ সকল চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা ভাইরাস থেকে নিরাপত্তার অংশ হিসেবে তারা এখন রোগি দেখছেন না।তবে সরকার নির্দেশনা দিলে তা অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

এ ব্যাপারে  ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সভাপতি ডা. আবু সাঈদ বলেন, অনেক বেসরকারি হাসপাতাল নিজ উদ্যোগে শারীরিক নিরাপত্তা নিয়ে তাদের চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই অবস্থায় বেসরকারি হাসপাতাল গুলো কিভাবে চলবে এর কোন দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়নি সরকারের তরফ থেকে । জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে ও বেসরকারি ক্লিনিকগুলোর সাথে এখনো পর্যন্ত কেউ যোগাযোগ করেননি।

চিকিৎসক দম্পতি মাহবুবুর রহমান (এমিল) ও সায়ীদা সামিহা। দুজনেই বেসরকারি দুইটি ডায়াবেটিক ক্লিনিকে চাকুরী করেন। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ও তারা রোগিদের চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্ত্রী বসেন জেলা শহরের কাউতলীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডায়াবেটিক সমিতিতে এবং স্বামী কাজিপাড়ায় দি ডায়াবেটিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখেন। চিকিৎসক মাহবুবুর রহমানের চেম্বারে গিয়ে দেখা যায়, উনি পিপিই ও মাক্স পড়ে রোগিদের সেবা দিচ্ছেন। কথা হলেতিনি বলেন,   চিকিৎসক হয়ে যদি দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সেবা দিতে  না পারি তাহলে লাভ কি! এই পিপিই চিকিৎসক নেতা আবু সাঈদ স্যার একটি প্রদান করেছেন আর বাকি সব পিপিই নিজের টাকাই কিনে রেখেছি। সামনে যেহেতু রোজা তাই ডায়াবেটিস রোগীদের ওষুধ এডজাস্ট করতে হবে, তাই এই মুহূর্তে রোগীদের কথা ভেবে কাজ করছি।ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএমএ’র পক্ষ থেকে মোবাইল হটলাইনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এছাড়াও অনেক  চিকিৎসক নিজ থেকে উদ্যোগী হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ ও পেইজ তৈরি করে চিকিৎসা সেবা দিয়ে চলেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে জরুরি সেবা জোরদার ও টেলিমেডিসিন সেবায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যুক্ত করলে চিকিৎসা সেবা আরও বেগবান হবে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা৷আমার ব্যক্তিগত অভিমত, গুটিকয়েক চিকিৎসকের অপকর্মের দ্বায় সকল চিকিৎসককে দেওয়া উচিৎ নয়৷ তাদের মধ্যেও ভাল মন্দ থাকতে পারে। যারা দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে নিজেদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে চলেছে তাদের নিয়ে সমালোচনা করুন এবং সমাজে তাদের মুখোশ খুলে দিন।  কিন্তু সত্যিকারের সেবা দেওয়ার মনোভাব নিয়ে যারা কাজ করছে,সেই সব চিকিৎসকদের পাশে থাকুন ও তাদেরকে উৎসাহ প্রদান করুন। তারা কিন্তু পালিয়ে যায়নি দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে।তারা এসেছে সেবার মনোভাব নিয়ে।

জহির  সিকদার
নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে