ফেসবুকে একজন ইন্টার্ন চিকিৎসকের স্ট্যাটাস পড়ছিলাম। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অভিজ্ঞতা লিখেছেন তিনি। পড়ার পর রীতিমত গা শিউরে উঠেছে আমার। কুর্মিটোলার এই হাসপাতালটিকে করোনার জন্য সিলেক্টেড বলা হচ্ছে উচ্চমহল থেকে। অথচ সেই হাসপাতালে ডাক্তারদের জন্য মাস্ক, গ্লাভস বা ক্যাপ নেই। অনেক অনুরোধের পর নার্সরা দুয়েকটা মাস্ক দিতে পারেন। হেক্সিসল পর্যন্ত নাকি নেই সেখানে। বোতলে হেক্সিসলের বোতলে স্পিরিট ভরে ব্যবহার করতে হচ্ছে ডাক্তার নার্সদের। আর PPE ( Personal Protection Equipment) এর নাকি দেখাই মেলেনি কখনো করোনার জন্য আলাদাভাবে চিহ্নিত করা এই হাসপাতালে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের একজন শিক্ষকের সাথে কথা হচ্ছিল। ভীষণ সমাজ সচেতন সেই চিকিৎসক অসহায়ত্ব নিয়ে বলছিলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব হলে কি ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়বে ডাক্তার-নার্স-ওয়ার্ড বয়-ক্লিনারসহ নন মেডিকেল সব স্টাফরা; যারা কাউন্টারে, গেটে নানা দায়িত্ব পালন করেন। এরই মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে বাড়ি চলে গেছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ হলে স্বেচ্ছাসেবী মেডিকেল শিক্ষার্থী পাওয়া কঠিন হতে পারে! সংকট আরো আছে। নন ক্লিনিক্যাল মেডিকেল শিক্ষকদের এখনো কলেজে সশরীরে যাওয়া বাধ্যতামূলক করে রেখেছে প্রশাসন। অথচ তাদের কিন্তু কোনো কাজ নেই এখন! বরং তাদের রিজার্ভ ডাক্তার হিসেবে রাখতে পারলে সেটি সংকটে বড় সাপোর্ট হতে পারে। আর গ্লাভস, মাস্ক বা স্যানিটাইজারের মতো অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঘাটতি তো ভয়াবহ। ফলে দেশের সবচে বড় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি কিন্তু প্রস্তুত নয় আসলে এখনো । এরই মধ্যে মেডিসিন বিভাগের চার চিকিৎসককে কেয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। এমন খবরও পাচ্ছি, আতঙ্কে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। কারণ তাদের নিরাপত্তার ন্যূনতম কোনো ব্যবস্থা নেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। প্রাণের মায়া তো সবারই আছে।

সকালেই খবর পেলাম, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ইউনিটের চিকিৎসকদের জন্য বরাদ্দ সব মাস্ক নিয়ে গেছেন পরিচালক মহোদয়! বলা হয়েছে ইমারজেন্সি কারণে সেগুলো রাখা হচ্ছে! তাহলে বোঝেন অবস্থা। সার্জারির মতো ইউনিটে যদি চিকিৎসকের মাস্ক বা গ্লাভসের মতো অতি প্রয়োজনীয় জিনিস না থাকে, তাহলে তাদের কাছ থেকে সেবা আশা করাটা কতখানি যৌক্তিক?

ঢাকা ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ কিংবা কুর্মিটোলা হাসপাতালের এসব ঘটনা ছোট্ট উদাহরণ মাত্র। সত্যিকার অর্থেই সারাদেশে আমাদের চিকিৎসক নার্সসহ মেডিকেল ও নন মেডিকেল স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা দারুণ অবহেলিত। মনে রাখতে হবে, হাসপাতালের সাথে সংশ্লিষ্টদের বাসায় বসে সেবা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের এই সংকটময় সময়ে সবচেয়ে ঝুঁকিতে তারা। আর চিকিৎসক নার্সদের সংক্রমণ হলে সেটি ছড়িয়ে পড়বে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণের যে মাস দু’য়েক সময় পেয়েছিলাম আমরা, সেটি যে অবহেলায় নষ্ট করেছি, তা সম্ভবত প্রমাণিত। তাই আজ, এখনি, এই মুহূর্ত থেকে চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া জরুরি। ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানোর মতো পোশাক, মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার, ক্যাপ জরুরি ভিত্তিতে সব হাসপাতালে সরবরাহ করতে না পারলে হয়তো চিকিৎসক নার্সের অভাবে ভয়াবহতম হতে পারে করোনা চিকিৎসা। নীতিনির্ধারকরাও নিশ্চয় পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে কার্যকর উদ্যোগ নেবেন, দ্রুততম সময়ে- সেই প্রত্যাশা।

লেখক: মাহফুজ মিশু, বিশেষ প্রতিনিধি,যমুনা টেলিভিশন
নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে