দেশ-বিদেশের ৮০০ প্রতিনিধির অংশগ্রহণে ৩ দিনব্যাপী ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’ শুরু হচ্ছে আজ। রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে তৃতীয়বারের মতো এই সম্মেলন চলবে সোমবার পর্যন্ত। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) উদ্যোগে সম্মেলনের প্রথম দিনে উদ্বোধনী বক্তা হিসাবে অংশ নেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সিজিএসের সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ আয়োজন নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল অভিযোগ তুলে সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, উদ্যোগটির মূল লক্ষ্য-এ অঞ্চলে দ্রুত বিকাশমান পরিস্থিতিকে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জানা ও বোঝা। আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা অনুষ্ঠানে আসেননি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে হয়রানি করা হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা আসেনি। বরং এবার পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহযোগিতা করছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই সংলাপে বিশ্বের ৮০টি দেশের লেখক, গবেষক, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, আমলা, শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি অংশ নেবেন। ভূ-রাজনীতি, অপতথ্য, মানবাধিকারসহ পাঁচটি বিষয়ে সংলাপ হবে। বিভিন্ন দেশের ২০০ বক্তা, ৩০০ প্রতিনিধি ও ৮০০ অতিথি থাকবেন। এই আয়োজনে শুধু নিবন্ধিত অতিথিরাই অংশ নিতে পারবেন। আলোচনার বিষয়গুলো হলো-গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অপতথ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্য, ভূ-রাজনীতি ও মানবাধিকার। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ৭৭টি সেশন চলবে।
‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’ প্রথম হয়েছিল ২০২২ সালের নভেম্বরে। গত বছর হয়েছিল অক্টোবরে। এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা ‘খুব কঠিন’-মন্তব্য করে জিল্লুর রহমান বলেন, গত ২ বছর খুব বেগ পেতে হয়েছে। আমরা আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে চাই। বাংলাদেশের ইস্যুও থাকবে, তবে আন্তর্জাতিক ইস্যু বেশি আসবে। সরকারের সাহায্য চাই, আমাদের আয়োজনে যেন কেউ বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
জিল্লুর রহমান বলেন, সাবেক সরকারের আমলে আমাদের আয়োজনের স্থানীয় স্পন্সর ও ব্যবসায়ীদের গোয়েন্দা সংস্থার কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ফোন করে এমন আচরণ করেছেন যে ব্যবসায়ীদের মধ্য যাদের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল তারাও আর কথা বলতে চাইতেন না, দেখাও করতে চাইতেন না। পরে দ্বিতীয়বারের আয়োজনে কোনো অংশীদার পাইনি। দুই মন্ত্রীর বাধার কারণে অনেকে চেকে টাকা দিতে চাননি। তিনি বলেন, গণমাধ্যমকে আয়োজনের খবর প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছিল। ৫-৭টি পত্রিকা ছাড়া কেউ কোনো খবর ছাপেনি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দেশীয় অতিথিদের ফোন করে নিষেধ করত। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক প্রধান হারুন-অর-রশীদ অনুষ্ঠানস্থলের পাশে দলবল নিয়ে এসে বসে থাকতেন। তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালের আয়োজনের জন্য ৬ মাস আগে একটি হোটেলে বুকিং দেওয়া হয়। কিন্তু সরকার চায় না বলে আয়োজনের ১৫ দিন আগে বাতিল করতে হয়।
জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সরকারের সঙ্গে কাজ করা এখন পর্যন্ত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। তাই সরকারের বাইরে থেকেই সিজিএস কাজ করতে চায়। সরকারের সঙ্গে থেকে কোনো আর্থিক সম্পর্কে সিজিএস জড়াবে না। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, সিজিএসের চেয়ারম্যান মুনিরা খান, চিফ অব স্টাফ দিপাঞ্জলী রায় ও প্রগ্রাম ডিরেক্টর সুবীর দাস।