শহিদুল ইসলাম দইচঃ “ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও গন্তব্যের পথ নির্মাণ” শীর্ষক সেমিনারে আলোচকগণ বলেছেন, এক সময় আমরা পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের মাঝে মুক্তি খুঁজেছিলাম। বিশ্বাস করেছিলাম মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই কিন্তু ১৬০০ কিলোমিটার দূরে ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মুসলমানরা কতটুকু ভ্রাতৃশ্য আচরণ করবে সেটা আমাদের তখন ভাবনায় আসেনি শেষ পর্যন্ত ধর্মের ঠুনকো বন্ধন টেকেনি। পাকিস্তানি আমলের শোষণ, বৈষম্য, বঞ্চনা, সম্পদ পাচার, অধিকারহীনতায় সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে আমরা তাদের সাথে সম্পর্ক চুকিয়েছিলাম।
শনিবার বিকেলে প্রেসক্লাব যশোরের শহীদ আর এম সাইফুল আলম মুকুল মিলনায়তনে আয়োজিত সেমিনারে আলোচকবৃন্দ এই কথা বলেন। মুক্তচিন্তার সংগঠন চিন্তা প্রকাশ এই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে সংগঠনের সভাপতি মফিজুর রহমান রুননু মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন। আলোচকরা বলেন, পাকিস্তান পড়বে আমাদের না পাওয়া গণতন্ত্র মানবাধিকার ও সাম্প্রদায়িক ওবৈষম্য মুক্ত সমাজের আকাঙ্ক্ষাযই জেগে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে। কিন্তু নিজেদের স্বাধীন দেশেই আমরা এই আকাঙ্ক্ষাগুলোকে ক্রমশ আড়ালে ঠেলে দিতে দেখেছি। শাসকরা নিজেদের গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষা করতে গণতন্ত্রহীনতা, বৈষম্য, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতাকে প্রশ্রয় দিয়ে ক্রমশ স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে। শাসকদল বদল হয়েছে, কিন্তু দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনের ব্যর্থতার সুযোগে দেশের সামরিক শাসনের পথ সুগম হয়।
আলোচনাকালে বলা হয়, গত ১৫ বছর দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম স্বৈরাচারী শাসনে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে ছিল লুটপাটকারী ও দখলবাজরা। দেশে এক ধরনের অর্থনীতি বা ক্রনিক ক্যাপিটালিজম গড়ে উঠেছিল। অর্থ পাচার, অবাধ লুটপাট, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, মামলাবাজি, নির্যাতন, হত্যা ও গুমের মের এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল। মেগা প্রজেক্টের মাধ্যমে মেগা দুর্নীতি হয়েছে। চাকরি ক্ষেত্রে চরম বৈষম্যের শিকার হয় চাকরি প্রত্যাশী সাধারণেরা। সেকারণে ছাত্রদের আন্দোলন ক্রমে তা গণ আন্দোলনে রূপ নেয়। ফলশ্রুতিতে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হয়।
আলোচকরা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার উপর জোর দেন। আলোচনায় বলা হয় এক ব্যক্তির হাতে সর্বময় ক্ষমতা গণতন্ত্রের জন্য সাংঘর্ষিক হয়ে ওঠে। অপশাসন এর রোধে সর্বস্তরে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। রাজনীতি যেন সম্পদ ও অর্থবিত্ত গড়ে তোলার হাতিয়ার না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে গণবিরোধী দানব তৈরির পথ বন্ধ করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন আরেকটি স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা না হয়। আর সেজন্যে সকল হত্যা, গুম, নির্যাতন, অর্থ পাচার ও অন্যায়ের যথাযথ বিচার করতে হবে। যশোর সরকারি এমএম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আফসার আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা করেন সুন্দরবন সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ইসরারুল হক, সরকারি এমএম কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবু বকর সিদ্দিকী, সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. এম আমানুল্লাহ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের সমন্বয়ক রাশেদ খান প্রমুখ।
যশোর নিউজ ডেস্ক।। বিডি টাইমস নিউজ