ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতাঃ নিজের নামে লাইসেন্স করা পিস্তল জমা দেননি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. তাকজিল খলিফা কাজল। সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের শেষ দিনেও তার অস্ত্র থানায় জমা পড়েনি। তাকজিলের দাবি, তার পিস্তল লুট হয়ে গেছে।
পিস্তলের লাইসেন্সের প্রয়োজনীয় দলিলাদি ও লুট হওয়ার বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) জানিয়ে লিখিত আবেদনপত্র দিয়েছেন তাকজিল খলিফা। আবেদনপত্র দুটিতে ৩ সেপ্টেম্বর সই করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের কাছে করা আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিনিধির মাধ্যমে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে ব্যর্থ হয়ে সেখানে অস্ত্র লুটের বিষয় জানাতে ডাকযোগে লিখিতভাবে পাঠানো হয়েছে। ওসি বরাবর করা আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে জিডির আবেদন করতে দেরি হয়েছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতায় থাকায় অনলাইনে জিডি করা হয়। তাকজিল খলিফার নামে ২০১৯ সালের ২১ জুলাই এনপিবি পিস্তলের লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। পিস্তলটি জার্মানের তৈরি।
আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘অস্ত্র হারানোর বিষয়ে অস্পষ্ট লেখার একটি কাগজ আমার ফোনে এসেছে। কে এটি পাঠাল সেটিও আমাকে নিশ্চিত করা হয়নি। আর ডাকযোগে পাঠানো কাগজ এখনও পাইনি।’
জেলা প্রশাসনসূত্র জানান, ২০০৯ সাল থেকে যেসব অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয় সেগুলো বাতিল করে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেয় সরকার। ৩ সেপ্টেম্বর অস্ত্র জমা দেওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সমপর্ণযোগ্য ৬৩টি অস্ত্রের মধ্যে নির্ধারিত সময়ে ৬০টি জমা পড়ে। এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে পিস্তল, শটগান ও দোনলা বন্দুক।
স্থানীয়রা জানান, ৫ আগস্ট মেয়রের পৌর এলাকার রাধানগরের বাড়ির সামনে আন্দোলনকারীদের মিছিল এলে ছাদ থেকে ঢিল ছোড়া ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এর পরই বাড়িতে আক্রমণ হলে তাকজিল খলিফা পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা অনেকে কিছুক্ষণ পর বিষয়টি বুঝতে পেরে তারাও ওই বাড়ি থেকে সরে যান। এ সময় মেয়রের বাড়িতে ব্যাপক হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। পরে লুটপাট চালিয়ে ঘরের মালামালসহ অনেক টাকা নিয়ে যাওয়া হয়। ওইদিন রাতে মেয়র তার গ্রামের বাড়িতে চলে গেলে সঙ্গে পিস্তল ছিল না বলে এক সূত্র জানান। এর পর থেকে পিস্তল লুট হওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
তাকজিল খলিফা সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। তৃতীয়বার মেয়র হওয়ার পর তিনি পিস্তল ব্যবহার শুরু করেন। প্রথম দিকে প্রকাশ্যে কোমরে রেখে ঘোরাফেরা করতেন, যা আইনসিদ্ধ নয়। কয়েক মাস এভাবে দৃশ্যমান দেখার পর অবশ্য তিনি কোমরে রাখলেও সেভাবে কারও চোখে পড়ত না।
সাবেক এই মেয়র তার অস্ত্র জমা না দেওয়ায় ইতোমধ্যেই তাকে গ্রেপ্তারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তৎপরতাও শুরু হয়েছে।
১০ বছর আগের একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার নামে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। তবে সেটি এখনো নথিভুক্ত হয়নি। আরো একাধিক মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। অবৈধ সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত বিষয়েও তার বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সূত্র জানায়, ২০০৯ সাল থেকে যেসব অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয় সেগুলো বাতিল করে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এ অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে সমপর্ণযোগ্য ৬৩টি অস্ত্রের মধ্যে নির্ধারিত সময়ে ৬০টি জমা পড়ে। এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে পিস্তল, শটগান ও দুইনালা বন্দুক।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন সুলতানা বৃহস্পতিবার ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বলেন, ‘আমরা সমর্পণযোগ্য ৬৩টি অস্ত্রের মধ্যে ৬০টি নির্ধারিত সময়ে জমা পেয়েছি।
বাকি যে তিনজন দেননি তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এখন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন সুলতানা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘আমরা সমর্পণযোগ্য ৬৩টি অস্ত্রের মধ্যে ৬০টি নির্ধারিত সময়ে জমা পেয়েছি। বাকি যে তিনজন দেননি তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিউজ ডেস্ক। বিডি টাইমস নিউজ