বছর ব্যবধানে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। যার মাধ্যমে বেড়েছে অর্থপাচারের পরিমাণও। বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন আশঙ্কাকে অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক বলছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, সতর্কতার সময় এখনই। যদিও ব্যাংকাররা মনে করছেন, বিশ্বজনীন প্রভাবের স্বাভাবিক প্রবণতায় নিরাপদেই আছে বাংলাদেশ।
দেশ থেকে বছরে যে পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়, সেটার ৮০ শতাংশের মাধ্যম আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। এমন গবেষণা বিশেষায়িত সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ)। প্রতি বছর দেশের সার্বিক বাণিজ্য ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকায় বড় হচ্ছে পাচারের প্রবণতাও। যার অন্যতম ইঙ্গিত, বছর ব্যবধানে সন্দেহজনক লেনদেনের ৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। সন্দেহজনক লেনদেনের সংখ্যা বৃদ্ধির এই চিত্র প্রমাণ করে বিভিন্ন সংস্থাগুলোর তৎপরতা। কিন্তু এর আড়ালে প্রকৃত পাচার বাড়ছে কি না- এমন প্রশ্নে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি এখন বৈশ্বিক সমস্যা। তাই বাইরে রাখার সুযোগ নেই বাংলাদেশকেও।
বিশ্লেষক আহসান হাবিব বলেন, বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন পন্থা ব্যবহার করে মানিলন্ডারিং বাড়ছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। বিশ্বে কোনো দেশে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা থাকলে, সেখানে অর্থপাচারের সূত্র তৈরি হয়ে যায়। বাংলাদেশেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেই লক্ষণগুলো আমরা দেখছি।
আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে দেশ থেকে পাচার হয়েছে সোয়া ৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। যার প্রায় সাড়ে ১৭ শতাংশ গেছে বাণিজ্যের আড়ালে। অন্যদিকে, বিএফআইইউয়ের সাম্প্রতিক হিসাবে ব্যাংক ব্যবস্থায় সন্দেহজনক লেনদেন শনাক্ত বেড়েছে ৬০ শতাংশ। যদিও এই প্রবণতাকে নেতিবাচকভাবে দেখতে রাজি নন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিবি) সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।তিনি বলেন, আমাদের সচেতনতা অনেক বেড়েছে। এক্ষেত্রে বিএফআইইউ অনেক কাজ করছে। হুন্ডির মাধ্যমে বহু টাকা-পয়সা বাইরে যাচ্ছে। এ পথে অবৈধ লেনদেন প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারা বলছে, এটা কমানো গেলে ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল করা যাবে।
আহসান হাবিব বলেন, যারা ঋণ খেলাপি, তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের বাইরে চলে যাওয়া। এ দায় থেকে বাঁচার ভালো জায়গা বিদেশ গমন। হঠাৎ জানা যায়, তিনি বাইরে। আগে থেকে তাকে ধরা হয় না। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫ বছরে ব্যাংকের ঋণের টাকার সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৯ গুণ। এছাড়া ১ বছরে সীমান্তবর্তী এলাকার ব্যাংকে নগদ লেনদেনও বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।