আদালত থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আজ রোববার(২০’শে নভেম্বর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ’কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, আমাদের পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে তাদের। আশা করি, খুব শিগগিরই তাদের ধরতে পারবো। আমরা বর্ডার এলাকায় বলে দিয়েছি, তারা যেন পালিয়ে যেতে না পারে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,এ’ঘটনাটি দুঃখজনক বলে আমরা মনে করি। যদি কারও অবহেলা, গাফিলতি থাকে; যদি কেউ ইচ্ছে করে এ কাজ ঘটিয়ে থাকেন তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। নিশ্চয়ই এটার তদন্ত কমিটি আমরা করবো। সেই অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। রাজধানীর প্রতিটি থানা ও অন্যান্য ইউনিটকে চেকপোস্ট বসানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে, রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারিও।

আদালত সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আজকে হাজিরা ছিল ওই দুই আসামির। সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে হাজির করে হাজতখানায় নেওয়ার সময় চার জনের মধ্যে দুজনকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। দুটি মোটরসাইকেল এসে তাদের ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এসময় পুলিশের এক সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। রোববার(২০’শে নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটকের সামনে থেকে দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের দুই সদস্যকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা। এরা হলেন- সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মাধবপুরের মইনুল হাসান শামীম ও লালমনিরহাটের আদিতমারি উপজেলার ভেটশ্বর গ্রামের আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব।

রাজধানীর সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যানে ওঠানোর সময় পুলিশের চোখে স্প্রে করে ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিকে ধরতে সারা দেশে রেড এলার্ট জারি করেছে ডিএমপি পুলিশ। এছাড়া দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ১০’লাখ টাকা করে মোট ২০’লাখ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। এ’ঘটনায় ৫’সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে ডিএমপি পুলিশ। রোববার বেলা ১২’টার দিকে পুরান ঢাকার জনসন রোডে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন ও লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা। ওই দুই জঙ্গির একজন মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির। অন্যজন মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব।

পুলিশের দাবি, জঙ্গিরা আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের চোখে বিশেষ স্প্রে করে একটি মোটরসাইকেলে উঠে পালিয়ে যায়। মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিল আরেকজন। ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গিরা একাধিক মামলার আসামি। আজ মোহাম্মদপুর থানার সন্ত্রাস বিরোধী একটি মামলা তাদের আদালতে নেয়া হয়। এদিকে, এই ঘটনায় কারও গাফিলতি থাকলে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তবে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামিদের ডান্ডাবেড়ি ছাড়া কেন শুধু হ্যান্ড কাপ পরিয়ে আদালতে তোলা হয় তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে দেখা দিয়েছে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া।

উল্লেখ্য, ২০১৫’সালের ৩১’শে অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জাগৃতির কার্যালয়ে হত্যা করা হয় দীপনকে। এই হত্যার মামলায় গেলো বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। আসামিদের মধ্যে জিয়া ও আকরাম পলাতক। বাকিরা কারাগারে ছিল।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে