কিনবেন নাকি একটা মস্ত গ্রাম । এতদিন তো শুনেছেন বাড়ি,গাড়ি,জমি কেনা-কাটা হচ্ছে । কিন্তু এইবার বিক্রি হবে আস্ত এক গ্রাম ।যুক্তরাজ্যের উত্তর ইয়র্কশায়ারে আস্ত একটি গ্রাম বিক্রির জন্য তোলা হয়েছে।
ওয়েস্ট হেসর্লেটন নামের এই গ্রামটির প্রাথমিক বাজারমূল্য ধরা হয়েছে কুড়ি মিলিয়ন পাউন্ড যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ২২২ কোটি ২১ লাখের বেশি।এর মধ্যেই দেশে বিদেশের অনেকেই গ্রামটি কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।২ হাজার ১১৬ একর জায়গা জুড়ে ছড়ানো গ্রামটিতে ৪৩টি বাড়ি রয়েছে, সেই বাড়িগুলোয় দীর্ঘদিন ধরে অনেকে পরিবার বাস করছে।গ্রামের একটি অংশে আছে ২১টি শয়নকক্ষের বিশাল একটি অতিথিশালা। আছে একটি গির্জা, প্রাথমিক বিদ্যালয়, পানশালা, পেট্টোল স্টেশন, এমনটি গ্যালারিসহ একটি খেলার মাঠও।
এখন এই সবকিছু নিয়েই পুরো গ্রামটি বিক্রির জন্য তোলা হয়েছে।
বিক্রির দায়িত্বে আছে জমিজমা সংক্রান্ত একটি প্রতিষ্ঠান কান্ডালস। তাদের প্রতিনিধি টম ওয়াটসন জানালেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই গ্রামটি বিক্রির কাজ শেষ হবে বলে তাদের ধারণা।
এখানকার ক্ষেতখামারের কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা হিসাবে প্রথম গ্রামটির পত্তন হয়। এরপর আস্তে আস্তে আরো অনেকেই থাকতে শুরু করেন। এই গ্রামের সব বাসিন্দা ভাড়ার বিনিময়ে এখানে থাকেন। সেই ভাড়াও খুব সামান্য।
টম ওয়াটসন বলছেন, ”মালিক পরিবারটি চেয়েছে, সবসময়েই যেন এখানে একটি চমৎকার পরিবেশ গড়ে ওঠে। তাই তারা গ্রামটি থেকে অর্থকড়ির বিষয়টি খুব একটা ভাবেননি। এখন আর পরিবারটি গ্রামটি ধরে রাখতে চায় না বলে আমরা বিক্রির দায়িত্ব নিয়েছি।”
এই গ্রামে সব বয়সের, সব শ্রেণীর একটি বৈচিত্র্যময় সমাজ গড়ে উঠেছে।
এখানেই অনেকদিন ধরে একটি পানশালা চালান মার্শা ক্লারা। কিন্তু গ্রাম বিক্রির এই সিদ্ধান্তে তিনি খানিকটা চিন্তিত হলেও, নতুন মালিকও তাদের প্রতি যত্নবান হবেন বলেই তিনি আশা করছেন।
মার্শা ক্লারা বলছেন, হয়তো গ্রামে আমাদের যুগের শেষ হতে চলেছে। তবে আমার আশা, আমরা আবার চমৎকার একজন গ্রাম মালিক খুঁজে পাবো। হয়তো তিনি গ্রামের ঐতিহ্যগুলো আগের মতোই রক্ষা করবেন। হয়তো তারা আমাদের প্রতিও যত্নবান হবেন
দেড়শ বছর ধরে এই গ্রামটির মালিক একটি পরিবার। কিন্তু তাদের সর্বশেষ উত্তরাধিকারী, ইভ ডোনের মৃত্যু হয়েছে পাঁচবছর আগে। এরপরই গ্রামটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় তার পরিবার। তবে এটা তাদের কাছেও ভালোলাগার কোন সিদ্ধান্ত ছিলনা, বলছেন মিজ ডোনের বোন ভেরেনা এলিয়ট।
ভেরেনা এলিয়ট বলছেন, ”আমরা গ্রামটি ভালোবাসি। এখানে যারা বাস করেন, তাদের মতো এত বিশ্বস্ত আর চমৎকার গ্রামবাসী তেমন একটা দেখা যায়না। এখানে এমন একটা আন্তরিক সমাজ গড়ে উঠেছে, যা এখনকার দিনে খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন।”
কান্ডালস বলছে, এর মধ্যেই তারা যুক্তরাজ্য এবং বাইরের আরো কয়েকটি দেশ থেকে গ্রামটি কেনার বিষয়ে সাড়া পেয়েছেন।
দেড়শ বছর আগে যখন প্রথম তৈরি হয়, এখনো গ্রামটির চেহারা অনেকটা সেরকমই আছে। কিন্তু নতুন মালিকরা সেই চেহারা কতটা ধরে রাখবেন, সেটাই এখন গ্রামবাসী ভাবছেন।
অবশ্য এর আগেও যুক্তরাজ্যে আরো কয়েকটি গ্রাম বিক্রির উদাহরণ রয়েছে।