দেশ-বিদেশে বহুল আলোচিত লেখক ও মুক্তমনা ব্লগার প্রকৌশলী ড. অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আরো ৭ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত দু’জন যারা সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল। সন্দেহভাজনদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। খুব শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করা হবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এবং কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটি) প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম এ তথ্য জানান। এ ছাড়া গত বছর বর্ষবরণের দিন নারীদের যৌন হয়রানির ঘটনার তেমন কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, লেখক-ব্লগার অভিজিৎ হত্যার ঘটনায় এর আগে ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা জেলহাজতে রয়েছেন। গ্রেফতারদের কারও কারও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব নমুনা সিআইডি ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। তবে হত্যাকাণ্ডের যেসব আলামত পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল তার প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি। এফবিআইয়ের প্রতিবেদন, সিআইডির ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা মিলিয়ে দেখা হবে কারা কারা অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিল। তাছাড়া সরাসরি অংশ নেয়া ছাড়াও ওই সময় আশপাশে সহায়তাকারী যারা ছিল তাদেরও শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, গত বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও লেখক প্রকৌশলী ড. অভিজিৎ রায়। ওই ঘটনায় তার স্ত্রী রাফিদা আহম্মেদ বন্যাকেও কুপিয়ে আহত করে জঙ্গিরা। পরে বন্যাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়।
কাউন্টার টেরোরিজম প্রধান আরো বলেন, গত পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নারীদের যৌন হয়রানির ঘটনার তদন্ত এখন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) করছে। মামলাটির তদন্তে পিবিআই যদি গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তা চায় তাহলে তাদের সহায়তা করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত তারা কোনো ধরনের সহায়তা চায়নি। বর্ষবরণে যৌন হয়রানির ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। তবে এক বছর পার হলেও এ ঘটনার তদন্তে তেমন কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।
মনিরুল ইসলাম বলেন, বর্ষবরণের ওই ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা (নম্বর-২৫) করা হয়েছিল। মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। তবে কাউকে গ্রেফতার না করায় ওই মামলাটি আদালত নিষ্ক্রিয় করেছিল। কামাল নামে একজনকে গ্রেফতারের পর মামলাটি পুনঃতদন্তের আবেদন করা হয়েছিল জানুয়ারি মাসে। কিন্তু আদালত গোয়েন্দা পুলিশকে সেটির তদন্তের দায়িত্ব না দিয়ে পিবিআইকে (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে। এখন পিবিআই মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তার প্রয়োজনবোধ করলে দেয়া হবে। তবে এখনো পিবিআই কোনো সহায়তা চায়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত বছর ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে যৌন হয়রানির শিকার হন কয়েক নারী। ওই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিপীড়কদের হামলায় ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি লিটন নন্দীর হাত ভেঙে যায়। পুলিশ ঘটনাটি এড়াতে চাইলেও বিভিন্ন ছাত্র ও নাগরিক সংগঠনের দাবির মুখে এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশে ওই ঘটনায় মামলা করা হয় এবং তদন্তের উদ্যোগ নেয়া হয়। ঘটনার পর ১৭ মে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও থেকে আট নিপীড়কের ছবি পাওয়ার কথা জানান পুলিশপ্রধান একেএম শহীদুল হক। তাদের ধরিয়ে দিতে এক লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির এসআই দীপক কুমার দাস গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে বলেন, পুলিশ অপরাধী কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি। কিন্তু চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার পর হঠাৎ ২৭ জানুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারে কাজী দেওয়ান প্রথম লেনের ৭৭ নম্বর বাড়ি থেকে কামাল হোসেন (৩৪) নামে একজনকে গ্রেফতার করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। পুলিশের দাবি নারী লাঞ্ছনার ঘটনায় সিসিটিভি ক্যামেরায় শনাক্তকৃত আটজনের মধ্যে কামাল একজন। তাকে দু’দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে হাজির করে বলা হয়, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে আসামি ওই ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে স্বীকার করেছে। সে আদালতে স্বীকারোক্তি দিতে ইচ্ছুক বিধায় আসামির স্বীকারোক্তি রেকর্ড করা হোক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আসামি কামাল জবানবন্দি দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে