মহান বিজয় দিবস ১৬’ই ডিসেম্বর উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছিলো স্বাধীন বাংলায় অদম্য দৌড়, চুয়ান্ন’র পথে। এটি শুধু একটি রানিং ইভেন্ট ছিলো না, বরং এটি ছিলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে স্মরণ করে বিজয়ের অনুভূতি ছড়িয়ে দেওয়ার এক অনন্য আয়োজন।

কাউন্টডাউনের মাধ্যমে রানার্সদের অংশগ্রহণে দৌড় শুরু হয় সকাল ৬:৩০ মিনিটে। শুরুর দলে রানার ছিলেন ৩৫ জন। আগারগাঁও হয়ে শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া হয়ে মিরপুর ১০ নাম্বারে পৌঁছায়। সেখানে ফিটনেস ক্যাম্পেইন বাংলাদেশ (FCB) এর সদস্যরা স্বাগত জানান রানার্সদের। এরপর পূরবীতে ফিটনেস ক্যাম্পেইন বাংলাদেশের বাকি সদস্যরা যোগদান করেন।

পল্লবীতে স্মারক প্রদর্শনের সময় রানার্সদের মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস জানানো হয়। রানার্স জাকারিয়া বিশেষভাবে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো তুলে ধরেন, বলেন পল্লবী পুলিশ ফাঁড়ি ছিল এক ঐতিহাসিক স্থান যেখানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনী একত্রিত হয়েছিল। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তী নির্মাতা জহির রায়হান ছিলেন একমাত্র বেসামরিক ব্যক্তি।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মসজিদ কমপ্লেক্স বধ্যভূমি: এই স্থানে একটি বধ্যভূমি আবিষ্কৃত হয়। জহির রায়হানের ছেলে অনল রায়হান এবং একমাত্র জীবিত সেনা আমির হোসেনের বর্ণনা অনুযায়ী জানা যায়, জহির রায়হানের লাশ এখানেই গুম করা হয়েছিল। এই বধ্যভূমিতে প্রায় বিশ হাজার শহীদ মুক্তিযোদ্ধার লাশ মাটি চাপা দেওয়া হয়।

ডি ব্লকের পানির ট্যাংক এলাকা: এ এলাকাটি ছিল ভয়াবহ এক সংঘর্ষের স্থান। ৩০ জানুয়ারি এখানে আর্মি-পুলিশের সম্মিলিত বাহিনীর উপর বিহারি ও পাকিস্তানি বাহিনী অ্যামবুশ করে। পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না থাকায় সম্মিলিত বাহিনীর প্রায় সকল মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

ডি ব্লক মাঠ (অস্ত্র সমর্পণ): মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে এই মাঠে ৩১ জানুয়ারি, ১৯৭২ অস্ত্র সমর্পণের মাধ্যমে মিরপুর মুক্ত হয়। সম্মিলিত বাহিনী এখানে ১১ ট্রাক ভর্তি অস্ত্র উদ্ধার করেছিলেন, যা ছিল বিজয়ের এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এই ঘটনাগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে মিরপুরের প্রতিটি ইঞ্চি মাটি মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে রঞ্জিত। আমরা শুধু দৌড়াইনি, আমরা এই স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলো থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শিখেছি এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি।

ফিটনেস ক্যাম্পেইন বাংলাদেশ(এফসিবি) পরে রানার্সদের জন্য একটি হাইড্রেশন পয়েন্টে নিয়ে যায়। সেখানে পানি, সেলাইন, খেজুর, কলা’সহ প্রয়োজনীয় সব কিছু সরবরাহ করেন আয়োজকরা। রানার্সদেরকে লিড দিয়ে পথ দেখিয়ে নিয়ে যান ফিটনেস ক্যাম্পেইন বাংলাদেশ(এফসিবি)।

রাকিন রানার্স টিমের জন্য লাল-সবুজ পতাকা হাতে অনেককে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তাদেরকে নিয়ে যায় ঐতিহাসিক ও বেদনাঘন স্থানে, জল্লাদখানা বধ্যভূমির সামনে। সেখানে জল্লাদখানার ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানান আয়োজক ফজরুল। তিনি জানান, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মিরপুরের বিহারী অধ্যুষিত এলাকাগুলো বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসর—বিহারি, রাজাকার, আলবদর, আল-শামসরা বাঙালিদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জল্লাদদের দিয়ে বাঙালিদের জবাই করে তাদের বড় বড় সেফটি ট্যাঙ্কির ভেতর ফেলে রাখা হতো। এই জল্লাদখানা থেকে স্বাধীনতার পর উদ্ধার করা হয়েছিল—৭০টি মাথার খুলি, ৫৩৯২টি অস্থিখণ্ড, মেয়েদের শাড়ি-ফ্রক-ওড়না-অলংকার-জুতা ও তসবিসহ শহীদদের ব্যবহৃত নানা জিনিসপত্র। হৃদয়বিদারক ইতিহাস শুনে সবাই নীরবে স্মরণ করেন তাঁদের। রাকিন রানার্স টিম’সহ সবাই ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মুহূর্তটির অনুভুতি জানাতে গিয়ে রানার বলেন, আমাদের মনে এক গভীর বেদনা ও শ্রদ্ধার অনুভূতি তৈরি করে, যা আমাদের স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগীদের স্মরণ করিয়ে দেয়। সাময়িক বিরতির পরে আবার নতুন উদ্যমে রান শুরু করেন রানার্সরা। এসময় রাকিন রানার্স এবং এফসিবি টিম রানার্সদেরকে মিরপুর ১৩ নম্বরে নিয়ে যান। সেখানে রাকিন রানার্স টীম রানার্সদের জন্য হাইড্রেশন সাপোর্টের ব্যবস্থা করেন। তারা নিরাপদে নিয়ে যান মিরপুর চিড়িয়াখানা বোটানিক্যাল গার্ডেনের দিকে। সেখানে সবাই একসাথে রাউন্ড দেয় এবং প্রকৃতির মাঝে দারুণ একটি সময় কাটান।

রানার্সরা পরে রুট প্ল্যান অনুযায়ী দলগতভাবে মিরপুর-১ হয়ে টেকনিক্যাল, শ্যামলী, জিয়া উদ্যান হয়ে বিজয় সরণি থেকে শাহবাগ, তারপর রমনা পার্ক হয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে দিয়ে শহীদ মিনারে পৌঁছে যায়, যেখানে ফিনিশিং সম্পন্ন হয়।

ফিনিশিং পরবর্তী আয়োজন
ফিনিশিং শেষে সবাইকে লাল-সবুজের রঙ দিয়ে অনুপ্রাণিত করা হয়। সবশেষে উত্তরা রানিং কমিউনিটি থেকে কেক কাটার মাধ্যমে ‘স্বাধীন বাংলায় অদম্য দৌড়, চুয়ান্ন’র পথে’ এই অসাধারণ আয়োজনের সমাপ্তি ঘটে।

অংশগ্রহণকারী জেলাসমূহ
ঢাকা । নরসিংদী । চট্টগ্রাম । হবিগঞ্জ । নারায়ণগঞ্জ

ফিনিশার ও দূরত্ব তালিকা
৫৪ কিলোমিটার ফিনিশার: ২৬জন

সূর্য শিশির রানার্স থেকে Shurjo Shishir Runners (SSR)
১. তানজিদ আহমেদ       – ৫৪ কিমি
২. আশরাফুল আলম ভাই – ৫৪ কিমি
3. কাওসার আহমেদ ভাই  -৩৫ কিমি

ফিটনেস ক্যাম্পেইন বাংলাদেশ থেকে Fitness Campaign Bangladesh
১. ফারুক মির্জা – ৫৪ কিমি
২. মোস্তফা কামাল – ২১.৩ কিমি
৩. জাকির হোসেন আপেল – ৪২ কিমি
৪. নাহিন – ৬.৮৪ কিমি
৫. ইসমাইল – ২১.১৮ কিমি
৬. মোঃ ইমন – ৫ কিমি
৭. গোলাম কাদের মাহমুদ – ১০ কিমি
৮. এমডি রনি কাজী – ৫ কিমি
৯. তাহসিন – ৭ কিমি
১০. জিসান – ৬ কিমি
১১. আপন – ৫ কিমি
১২. অলিউল্লাহ – ৫ কিমি
১৩. ইলিয়াস ইসলাম – ৮ কিমি
১৪. সাহা পরান – ১৬ কিমি
১৫. রিয়াজ রানা – ৬ কিমি
১৬. সালেহীন খান – ২১ কিমি
১৭. রফিকুল ইসলাম – ১০ কিমি
১৮. মামুন ৮.৫ কিমি
১৯. আবু সুফিয়ান দুর্লভ ১৬ কিমি
হাইড্রেশন সাপোর্টে ইফতেখার রিন্টু ও তারেকুল মিরাজ ভাই ছিলেন অনবদ্য। এছাড়া সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন লিটন । নির্দেশনা ও বাইকের তত্ত্বাবধানে ছিলেন জাকির।

রাখিন রানার্স থেকে Rakeen Runners
১. রাজ কুমার চৌধুরী – ৪২কিমি
২. মোঃ তোফা হাসান – ৫৪ কিমি
৩. মোঃ রাজিব হুসাইন – ১৬ কিমি
৪. মোঃ ফজলুল হক – ১৬ কিমি
৫. মোঃ শামিনুল ইসলাম – ১৬ কিমি
৬. মোঃ মমিনুল রাহমান – ১৬ কিমি
৭. মোঃ আসাদুল ইসলাম – ৪২ কিমি
৮. মোঃ শাহাবুদ্দিন – ২১.২ কিমি
৯. মহাম্মদ গোলাম মাওলা – ১৬ কিমি
১০. মোঃ সাদিম আলি – ৪২ কিমি
১১. মোঃ আতাহারুল ইসলাম রুবেল
– (হাইড্রেশন সাপোর্ট)
১২. মোঃ শাহিদ জাহান – ১৬ কিমি
১৩. মোঃ ইমরান আহমাদ – ১৬ কিমি
১৪. মোঃ ইয়াকুব আলি – ৪২ কিমি
১৫. মোঃ জসিম উদ্দিন মোল্লা – ১০.৬ কিমি
১৬. মোঃ কামাল আল মামুন – ১৬ কিমি
১৭. মোঃ তানভির রাজ – ১৬.৫ কিমি
১৮. মোঃ হুমায়ন কবীর – ১৬ কিমি
১৯. মোঃ বাদশা মিয়া – ১৬ কিমি
২০. মোঃ রফিকুল ইসলাম – ১৬ কিমি
২১. মোঃ লিয়াকত হোসেন – ১২ কিমি
২২. ইফটি – ১৬ কিমি
২৩. মোঃ আবু সাইদ – ১৬ কিমি
২৪. মোঃ নাইম – ১০ কিমি

উত্তরা রানিং কমিউনিটি Uttara Running Community থেকে
১.ওমর ফারুক ইমরান ভাই সাইকেলিং করেছেন
৫৪কিলোমিটার

ডায়নামিক রানার্স ইন্টার বিডি গ্রুপের থেকে Dynamic Runners InterBD
১.এ কে এম আহসান – ২১কিলোমিটার

উত্তরা রানিং ক্লাব থেকে Uttara Running Club
১.মাসুদ রানা -১৬কিলোমিটার
২.হুমায়ুন কবির – ২১কিলোমিটার
৩.খোরশেদ -২১কিলোমিটার
৪.আবুল কালাম – ৫৪কিলোমিটার

নরসিংদী রানার্স কমিউনিটি থেকে Narsingdi Runners Community
১. মহসিন  – ৫৪ কিমি
২. রাজু – ৫৪ কিমি
৩. আক্তারুজ্জামান – ২১ কিমি
৪. মোহাম্মদ মুরাদ – ১৬ কিমি
৫. ইয়াসিন আরাফাত – ১৭ কিমি
৬. মোহাম্মদ মনির – ১৬ কিমি
৭. নাজমুল – ১৬ কিমি
৮. নজরুল – ১৬ কিমি
৯. মেহেদী – ১৬ কিমি
১০. শামিম জামান -১৬ কিমি

ফিটনেস টাউন রানার্স কমিউনিটি থেকে Fitness Town Runners Community (FTRC, Badda)
১. জালাল হোসেন মোল্লা – ৫৪.২১ কিমি
২. মোঃ নুরুল হুদা আকন্দ – ৫৪.১৬ কিমি
৩. মোহাম্মদ রানা মিয়া – ৪২ কিমি
৪. মোঃ সিহাব উদ্দিন – ১৬ কিমি
৫. ওমর ফারুখ রায়হান – ৪২.৫৩ কিমি

ইউ সি আর থেকেUCR
১.মাসুম ভাই ছিলেন আমাদের পাশে

ঢাকা রোড রানার্স থেকে
Dhaka Road Runners
১. এস এম সোহেল মিয়া – ৫৪ কিমি
২. শাহিনুল ইসলাম – ১৭ কিমি

রাইপুরা থেকে
১. সাদেক খোকা ভাই – ৫৩ কিমি

দ্যা ওয়াইল্ড রেসার থেকে THE WILD RACER
১. মেহেদী হাসান নয়ন ভাই – ৫৪ কিমি
২. মশিউর রহমান ভাই – ৫৪ কিমি
৩. আরেফিন ভাই – ৪২ কিমি
৪. মুস্তাফিজুর ভাই – ৪২ কিমি

পোর্ট রানার্স চট্টগ্রাম থেকে Port Runners Club
১. মোঃ আনিছুর রহমান – ৫৪ কিমি
২. মোঃ আব্দুল মালেক – ৫৪ কিমি
৩. মুহাম্মদ হানিফ ভূঁইয়া – ৫৪ কিমি
৪. দোদুল দেওয়ান – ৫৪ কিমি
৫. মেহেদী হাসান দিপু – ৫৪ কিমি
৬. নেছারুল হক সুজা – ৫৪ কিমি
৭. মাহমুদুল ইসলাম রাকিব – ৫৪ কিমি
৮. মোঃ তারেকুল ইসলাম রানা – ৫৪ কিমি
৯. মোঃ মাহবুবুল ইসলাম – ৫০ কিমি
১০. মোঃ তাফসিরুল আহসান – ৪৩ কিমি
১১. মোঃ আব্দুল আওয়াল – ৪২ কিমি
১২. মোহাম্মদ আলী – ৩০ কিমি
১৩. বিভূতি ভূষণ বালা – ৩০ কিমি

টিম বানিয়াচং থেকে @team baniyachong
১. আমির উদ্দিন ভাই – ৩৬ কিমি
২. তামিম উদ্দিন ভাই – ১৬ কিমি
৩. মিনহাজ মিয়া ভাই – ১৬ কিমি
৪. ইমন মিয়া ভাই – ২১ কিমি

টিম নারায়ণগঞ্জ থেকে Team Narayanganj (সুস্থতার জন্য দৌড়)
১. শাহীন আলম ভাই – ৫৪ কিমি
২. সজিব মিয়া ভাই – ৫৪ কিমি
3.জুম্মন মিয়া (২১.১কি.মি.)
4.মোরসালেন আহমেদ (২১.১কি.মি.)
4.ইব্রাহিম (২১.১কি.মি.)

স্বাধীন বাংলায় অদম্য দৌড়, চুয়ান্ন’র পথে ইভেন্টে সূর্য শিশির রানার্স গ্রুপের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক (ভলান্টিয়ার) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনজন নিবেদিতপ্রাণ সদস্য। তারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে ইভেন্টের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

ভলান্টিয়ারদের নাম
ফাহিম খান । রবিউল ইসলাম । রাকিব ইসলাম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে