মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছেন এবং যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এমন ভারতীয় সৈনিকদের শনিবার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ সম্মাননা প্রদান করেছে। আর এর মাধ্যমেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী ভারতীয় সৈনিকদের সম্মাননা প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ৭ জন ভারতীয় সৈনিকের পরিবারকে সম্মাননা প্রদানের এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস ভারতীয় শহীদদের রক্ত এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে রচিত হয়েছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় শহীদদের আত্মত্যাগ এ দুটি দেশেরই প্রজন্ম, থেকে প্রজমান্তরে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ম্যানেকশ’ সেন্টারে আয়োজিত এই সম্মাননা প্রধান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সৈনিকদের মহান আত্মত্যাগের স্বীকৃতি প্রদানের এটাই প্রথম পদক্ষেপ এবং এর মাধ্যমে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা জানানোর প্রক্রিয়াটা শুরু হলো।
আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১ হাজার ৬৬১ জন ভারতীয় সৈনিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধে ভারত এবং বাংলাদেশের শহীদগণ স্বর্গ থেকে আমাদের আশির্বাদ করছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন শান্তি এবং উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে একযোগে কাজ করার জন্য আমরা পুনরায় সংকল্পবদ্ধ হই।’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আজ একটি বিশেষ দিন, এই দিনটি ভারত এবং বাংলাদেশের শহীদদের জন্য স্মরণীয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ১০ হাজার ভারতীয় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বৃত্তি প্রদানসহ নানা সুযোগ-সুবিধা প্রদানেরও ঘোষণা দেন মোদি। যুদ্ধে ভারত যুদ্ধবন্দী ৯০ হাজার পাকিস্তানী সৈনিকের প্রতিও মানবতা প্রদর্শন করেছিল বলেও প্রধানমন্ত্রী মোদি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মত্যাগকারী কিছু বিশেষ বন্ধুকে সম্মান জানানোর সুযোগ পাওয়ায় তিনি নিজেও সম্মানিত বোধ করছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পক্ষে শহীদদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের আমি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের জনগণ ভারতের জনগণ এবং সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। ভারতীয় সশ¯্র বাহিনীর অনেক বীর সৈনিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবসময়ই কৃতজ্ঞচিত্তে তাদের অবদান ও আত্মত্যাগকে স্মরণ করি। আজ বহু আকাঙ্খিত সেই দিন, যেদিন আমরা সেদিনের আত্মোৎসর্গকারীদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।
বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সাল থেকে ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশী বন্ধুদের অবদানকে স্মরণ করার এবং তাদের সম্মাননা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০১১ সালের জুলাইতে বাংলাদেশ সরকার সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে। এই প্রক্রিয়াতেই ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানসিক শক্তি ও দৃঢ়চেতা মনোভাবের প্রশংসা করে বলেন, ‘তাঁর (শেখ হাসিনা) পরিবারের ১৬ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। তবুও পাথরের মতোই অবিচল শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ এর আগে মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, কর্মী, সাংবাদিক, চিকিৎসক এবং কূটনৈতিকসহ অন্যান্য সকল শ্রেণী-পেশার ভারতীয় নাগরিকদের সম্মাননা জানায়, এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং অটল বিহারী বাজপেয়ীসহ ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ সম্মানে ভূষিত হন কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশের এই মুক্তির সংগ্রামে মার্চ থেকে ডিসেম্বর ১৯৭১ এই সময়ের মধ্যে ৩০ লাখ মানুষ নিহত হয়।