ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ আজ। মুসলিম উম্মাহর সার্বজনীন দু’টি উৎসবের অন্যতম একটি। ঈদুল আযহার প্রধান আকর্ষণ পশু কোরবানি করা। আসলে ঈদ উৎসবে সবারই মনে প্রবল ইচ্ছা থাকে বেশি বেশি করে কোরবানির গোসত খাওয়া। গোশত তো অবশ্যই খাবেন, কিন্তু আমাদের একটু নজর দেওয়া দরকার আমরা কী খাচ্ছি, কতটুকু খাচ্ছি, শরীরে বিভিন্ন খাবারের কি প্রতিক্রিয়া হতে পারে তার ওপর। যে কোনও পশুর চর্বি খাওয়া এমনিতেই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। গরু, খাসি, ভেড়া, মহিষ, উট ও দুম্বার মাংসকে বলে রেড মিট বা লাল মাংস। আর এ গোশতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খারাপ কোলেস্টেরল, যা হৃৎপিণ্ডের প্রধান শত্রু। তাই কোরবানির গোশত গ্রহণে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে, নিতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ।
সমস্যাটা বেশি হয়- যাদের পেটের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ, কিডনি বা লিভারের রোগ আছে কিংবা এসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ আছে। এছাড়া, চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যায়। যাদের এনাল ফিশার ও পাইলস জাতীয় রোগ আছে, তাদের পায়ুপথে জ্বালাপোড়া, ব্যথা ইত্যাদি বাড়তে পারে, এমনকি পায়ুপথে রক্তক্ষরণও হতে পারে।
কোরবানির গোশত থেকে চর্বি বাদ দেওয়ার কৌশল জানিয়েছেন ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অর্থোপেডিকস ও ট্রমা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল। বলেছেন, পশু কোরবানির পর গোশত কাটার সময় গোশতের গায়ে লেগে থাকা চর্বি যতটা সম্ভব কেটে বাদ দিয়ে দিন। গোশত রান্নার আগে গোশতকে আগুনে ঝলসে নিলে কিছু চর্বি গলে পড়ে যায়। এভাবে গোশতকে চর্বিমুক্ত করা যেতে পারে। এছাড়া, গোশতকে একটু হলুদ-লবণ দিয়ে সেদ্ধ করে রেফ্রিজারেটরে ঠাণ্ডা করলে কিছুটা চর্বি গোশত থেকে বেরিয়ে এসে জমাকৃত অবস্থায় থাকে। এ অবস্থায় বাড়তি চর্বিটুকু একটা চামচ দিয়ে আঁচড়ে সহজে বাদ দেয়া যায়। তিনি আরও জানান, যারা হৃদরোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং যাদের রক্তে কোলেস্টেরল বেশি তারা পশুর কলিজা, হৃদপিণ্ড ও মগজ খেতে পারবেন না। একইভাবে ডিমের তৈরি যে কোনও খাবার তৈরির সময় কুসুম বাদ দিতে হবে। এসব রোগীর ক্ষেত্রে পোলাও-বিরিয়ানির পরিবর্তে খিচুড়ি বেছে নেয়া উত্তম।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, কোরবানির মাংস একটু আধটু খেলে শরীরের যে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে তা নয়, তবে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যাদের ওজন বেশি তাদের অবশ্যই ঈদের সময় অতিরিক্ত খাওয়া পরিহার করতে হবে। গেঁটে বাত বা ইউরিক এসিড বেশি যাদের এবং যারা কিডনির সমস্যায় ভোগেন, তাদেরকে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য কম খেতে বলা হয়। এছাড়া, ঈদের সময়ে প্রচুর পরিমাণে পানি, সরবত, ফলের রস, ইসবগুলের ভূষি ও অন্যান্য তরল খাবার বেশি করে খাবেন। পেটে গ্যাস হলে ডমপেরিডন, এন্টাসিড, রেনিটিডিন, ওমিপ্রাজল, প্যান্টোপ্রাজল জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। যাদের আইবিএস আছে, তারা দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করুন। দাওয়াতে গেলে পরিমিত খাবেন, অতিভোজন পরিহার করার চেষ্টা করুন। খাবারের ফাঁকে ফাঁকে পানি খাবেন না, এতে হজম রসগুলো পাতলা হয়ে যায়। ফলে হজমে অসুবিধা হয়। তাই খাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা পর পানি পান করুন। খাবারের মাঝে বোরহানি খেতে পারেন। খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করুন।
দ্রুত গরুর মাংস সিদ্ধ করার ৬ উপায়
গরুর মাংস শক্ত হওয়ায় তা সিদ্ধ করা নিয়ে বেশিরভাগ গৃহিনীরা পড়েন বিপাকে। অনেকেই মনে করেন প্রেসার কুকার ছাড়া তাড়াতাড়ি মাংস সিদ্ধ করার সহজ কোনো উপায় নেই। কিন্তু গরুর মাংস সিদ্ধ করার সহজ অনেক পদ্ধতি রয়েছে। কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে সহজেই সিদ্ধ হবে গরুর মাংস। আসুন জেনে নেই গরুর মাংস সিদ্ধ করার ৬ উপায়-
১. গরুর মাংস সিদ্ধ করার জন্য কাঁচা পেঁপের জুড়ি নেই। মাংস তাড়াতাড়ি সিদ্ধ করতে কয়েক ফোঁটা পেঁপের আঠা বা কয়েক টুকরো কাঁচা পেঁপে দিতে পারেন। দেখবেন খুব সহজেই সিদ্ধ হবে গরুর মাংস।
২. গরুর মাংস রান্না করার সময় ১০ মিনিট পর সামান্য চিনি দিতে পারেন। চিনি দিলে মাংস তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয়।
৩. ঢাকনা দিয়ে চাপ দিয়ে ঢেকে দিন।
৪. মাংস তাড়াতাড়ি সিদ্ধ করার জন্য একটি সুপারি দিয়ে দিতে পারেন। সুপারি দিলে মাংস তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয়।
৫. মাংস রান্নার সময় পাত্রে একটা তামার পয়সা ফেলে দিলে মাংস তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয়। বাবুর্চিরা মাংস তাড়াতাড়ি সিদ্ধ করার জন্য এই পদ্ধতি অবলম্বন করেন।
৬. রান্নার মাঝামাঝি সময়ে লবণ দিন।
নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্স নিউজ