দক্ষ হ্যাকার তৈরির বিজ্ঞাপন দিয়ে শাস্তি পেতে যাওয়া সাইফুরস কোচিং সেন্টারের পক্ষ নিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের চার কর্মী। তবে, এই চারজনই বিভিন্ন পত্রিকার ‘সাংবাদিক’।
১৫ লাখ টাকায় দফারফা হবে। মধ্যস্থতাকারী ওই চারজন। তারা রাজধানীর পান্থপথে অবস্থিত সাইফুরস’র প্রধান কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক আশরাফ উদ্দিন জুয়েল ও ম্যানেজার আবদুল্লাহ মালেকের সঙ্গে গোপণ বৈঠক করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র বলেছেন, সাইফুরস কর্তৃপক্ষ চাইছেন ক্ষমা চেয়ে রেহাই পেতে। সংবাদ সম্মেলন করে অথবা মন্ত্রী যেমন চাইবেন সেভাবেই ভুল স্বীকার করবে তারা। বিনিময়ে ওই চার সাংবাদিক হাতিয়ে নেবে ১৫ লাখ টাকা!
সাইফুর’স কোচিং সেন্টারের সেই বিজ্ঞাপন
চোর বানানোর বিজ্ঞাপন দিয়ে সাইফুরস মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে উল্লেখ করে গত বুধবার সচিবালয়ে এক সভায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কোচিং সেন্টারটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, সাইফুরস নামে একটা বিখ্যাত কোচিং সেন্টার আছে। এই কোচিং সেন্টার একটা বিজ্ঞাপন দিয়েছে। সেই বিজ্ঞাপনে তারা বলেছে ভালো ইংরেজি না জানতে পারলে ভালো লেখাপড়া করতে পারবে না … এমনকি ভালো হ্যাকারও হতে পারবে না।
দেখেন, হ্যাকার হওয়ার জন্যও তার কাছে গিয়ে পড়তে হবে! বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, এটা অবশ্যই বে-আইনি, (এ ধরনের বিজ্ঞাপন) দিতে পারে না। আমরা তার (সাইফুরস) বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সাইফুরস এই বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে মন্তব্য করে নাহিদ বলেন, তারা ভালো চোর বানাতে চাইছে। এ রকম লোকের বিরুদ্ধে যদি আমরা সোচ্চার না হই তাহলে আমরা কী করে থাকব সমাজে?
কোচিং সেন্টারগুলোকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী বলেন, এরা এই রকম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে এদের বিরুদ্ধে কখনও আমরা সহনশীল হতে পারি না। তারা আমাদের ছেলেমেয়েদের প্রলোভন দেখাচ্ছেন ভালো ইংরেজি শিখলে ভালো চোর হতে পারবা, ভালো করে হ্যাকিং করতে পারবা। চুরি শেখানোর বিজ্ঞাপন দিয়ে বলেছে ভালো চোর বানাবে, বলেন ক্ষুব্ধ শিক্ষামন্ত্রী।
হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ লোপাট এবং একটি শব্দের বানান ভুলে ২ কোটি ডলার রক্ষা পাওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশের পর দৈনিক প্রথম আলোয় বিজ্ঞাপন দেয় সাইফুরস।
ওই বিজ্ঞাপনের শিরোনামে বলা হয়, English-এর ভুলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৬০ কোটি টাকা হ্যাকারদের হাতছাড়া! বিবিসিকে উদ্ধৃত করে ওই বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, হ্যাকিংকৃত ডলার শ্রীলংকাতে স্থানান্তরের সময় `Foundation’ শব্দকে `Fandation’ লেখাতে বিদেশি Deutsche ব্যাংকের সন্দেহ হয়। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকেকে জানালে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই ২০ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তর বন্ধ করে দেয়। একইভাবে ইংরেজিতে দুর্বলতার কারণে… MBA, অফিসার, Lawyer (এমনকি দক্ষ হ্যাকার!) প্রভৃতি হতে হলে reading, রাইটিং, Speaking, লিসেনিং ও spelling সবকিছুতেই ভালো হওয়া জরুরি!
সাইফুর’স এর কর্মকর্তা
রাজশাহী থেকে আমিনুল ইসলাম নামে একজন শিক্ষক বলেন, আমি সব চাইতে বেশি আতঙ্কিত হয়েছি ওই বিজ্ঞাপনের একদম নিচের দিকে দেয়া একটা তথ্য দেখে। সেখানে লেখা আছে- একমাত্র ভার্সিটি ভর্তি কোচিং সেন্টার, যেটা চালাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক নামধারী এক ব্যক্তি!
সাজ্জাদুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি আজীবন জেনে এসেছি, চুরি করা, ডাকাতি করা, হত্যা ,ধর্ষণ এই জাতীয় বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকার জন্য ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে। আমাদের সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থা এতোই নিচে নেমে গেছে যে, এখন হ্যাকারদের মতো চোরদেরকে রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে!
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাংবাদিক বলেন, বানান ভুল হওয়ার কারণে বাংলাদেশের টাকা হ্যাকাররা নিতে পারেনি। তাহলে কি সাইফুরস হ্যাকার বানাতে চাচ্ছে? সব জায়গায় ব্যবসা করতে চাইছে সাইফুরস। কিন্তু তাই বলে এভাবে এই বিজ্ঞাপন দিয়ে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাইফুরস কোচিং সেন্টারে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা কথা বলতে রাজি হননি।