লেবাননে অবৈধভাবে আট থেকে দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করায় জরিমানার কবলে পড়েছেন প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশি। লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাসের দেয়া তথ্যমতে, ৪০ হাজারের মতো অবৈধ বাংলাদেশি রয়েছেন লেবাননে। ফেরার ইচ্ছা থাকলেও বিপুল অংকের জরিমানার কারণে তারা দেশে ফিরতে পারছেন না।

লেবাননের আইন অনুযায়ী, অবৈধভাবে অবস্থান করা কর্মীরা দেশে ফিরতে চাইলে প্রতি বছরের জন্য পুরুষদের ২৬৭ ডলার এবং নারী কর্মীদের ২০০ ডলার জরিমানা দিতে হয়। সেই সঙ্গে বিমান ভাড়ার অর্থও ওই কর্মীকে বহন করতে হয়। সে হিসেবে একজন কর্মী যদি পাঁচ বছর অবৈধভাবে দেশটিতে অবস্থান করেন, তাকে দেশে ফিরতে হলে জরিমানা বাবদ ১ হাজার ৩৩৫ ডলার (প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা) পরিশোধের পাশাপাশি বিমান ভাড়াও জোগাড় করতে হয়। যদিও অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত লেবাননের বর্তমান পরিস্থিতিতে এ অর্থ জোগাড় করা প্রায়ই অসম্ভব।

দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে সাধারণ ক্ষমায় অবৈধ বাংলাদেশীদের দেশে ফেরার বিশেষ সুযোগ দেয় লেবানন সরকার। বিশেষ ওই সুযোগে একজন শ্রমিক যত বছরই অবৈধভাবে থাকুন না কেন, তাকে শুধু এক বছরের জরিমানার অর্থ (পুরুষদের জন্য ২৬৭ ডলার ও নারীদের জন্য ২০০ ডলার) ও বিমান টিকিটের টাকা জমা দিয়ে দেশে ফিরতে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হয়। লেবাননের জেনারেল সিকিউরিটি বিভাগ ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিতে কোনো নির্দিষ্ট মেয়াদ নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস। গত বছর তিন ধাপে দূতাবাস অবৈধ প্রবাসীদের নাম নিবন্ধনের সুযোগ দেয়। যার প্রথমটি গত বছরের সেপ্টেম্বর, দ্বিতীয়টি নভেম্বর ও তৃতীয় ধাপটি ডিসেম্বরে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লেবাননে অস্থিরতার কারণে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে নাম নিবন্ধনের কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।

জানা গেছে, অবৈধ শ্রমিকদের রেজিস্ট্রেশনের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস মাত্র তিনদিন (১৫, ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর) সুযোগ দেয়। ওই তিনদিনে মাত্র আড়াই হাজার অবৈধ প্রবাসী তাদের নাম নিবন্ধনের সুযোগ পান। তাদের মধ্যে প্রাথমিক ধাপে ৪৫০ বাংলাদেশি দেশেও ফিরেছেন। বঞ্চিত হন অন্তত ৪০ হাজার অবৈধ বাংলাদেশি।

জনশক্তি রফতানি ও কর্মসংস্থান উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, লেবাননে ১৯৯১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১ লাখ ৬৭ হাজার বাংলাদেশী কর্মী গেছেন। তাদের মধ্যে নারী কর্মী গেছেন ১ লাখ ৭ হাজার। দেশটিতে ২০১৭ সালে ৮ হাজার ৩২৭ জন, ২০১৮ সালে ৫ হাজার ৯৯১ ও ২০১৯ সালে ৪ হাজার ৮৬৩ জন বাংলাদেশি গিয়েছেন।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে লেবাননের অর্থনীতি এখন খুবই নাজুক সময় পার করছে। দেশটি এখন ঋণের ভারে জর্জরিত। দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে গত অক্টোবরে পদত্যাগে বাধ্য হন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী। আর্থিক সংকট মোকাবেলায় ব্যয় সংকোচনের নীতিও বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে দেশটি। যার ধারাবাহিকতায় বেতনভাতা কমিয়ে দেয়ার পাশাপাশি চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হচ্ছে অভিবাসী শ্রমিকদের। এ অবস্থায় লেবানন থেকে দেশে ফিরতে চাইলেও জরিমানার অর্থ পরিশোধের ব্যর্থতায় আটকা পড়েছেন অন্তত ৪০ হাজার অবৈধ বাংলাদেশি।

নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে