একথা সত্য যে, আমরা বিশ্বের একটি অন্যতম দরিদ্র দেশের বাসিন্দা। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। কিন্তু এতো দুঃখের মধ্যেও আমাদের জন্য সুসংবাদ হচ্ছে এই যে, আমাদের দেশের মতো উর্বর মৃত্তিকার দেশ বিশ্বে খুব কমই আছে। ‘ডেল্টা ল্যান্ড’ অর্থাৎ বদ্বীপ বাংলাদেশের একটি বিশাল অংশ পলিমাটিতে গঠিত। তাই অতি সহজেই এ মাটিতে ফসল উৎপাদিত হয়। মাটিতে বীজ বোনার পর তেমন পরিচর্যা ও পরিশ্রম ছাড়াই ফল ফসল পাওয়া যায়। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, দিরাই উপজেলার কল্যাণী গ্রামে দরিদ্র মহিলারা পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়ো ও লাউয়ের চাষ করে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছেন। যারা আগে এক বেলাও পেট পুরে খেতে পেতো না, তাদের এখন তরিতরকারী
কিনতে হচ্ছে না। সবজী বিক্রি করে সেই আয়ে খেয়ে দেয়ে তারা এখন ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচও চালাচ্ছেন। সংবাদটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ও অনুপ্রেরণাদায়ক। কৃষিবিদদের মতে, সিলেট অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদী ও পতিত অবস্থায় পড়ে আছে দীর্ঘদিন যাবৎ। এসব জমিতে ধান ছাড়াও শুধু মৌসুমী সবজীর চাষাবাদ করা হলে সিলেট অঞ্চলে কোনো খাদ্যাভাব থাকতো না। বেকারত্ব থাকতো না। থাকতো না দারিদ্র্য। দেশের বিভিন স্থান থেকে আলু টমেটোসহ নানা ধরণের ফসল ও তরিতরকারীর বাম্পার ফলনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের মতো বিপুল জনসংখ্যা অধ্যুষিত দরিদ্র দেশের জন্য এসব বর যুগপৎ আনন্দদায়ক ও উৎসাহব্যাঞ্জক। সিলেট অঞ্চলের পতিত ও অনাবাদী জমিসহ দেশের বিস্তীর্ণ পতিত ও অনাবাদী জমি যদি এভাবে চাষাবাদের আওতায় আনা যায়, তবে এদেশ অচিরেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। তবে এজন্য সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। শুধু ফসল বা শাকসবজী উৎপাদন করলেই
চলবে না, এগুলো সংরক্ষণ, সরবরাহ ও বাজারজাতকরণে কৃষক বা উৎপাদনকারীদের প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে। প্রয়োজনে দিতে হবে ঋণ সহায়তা। প্রয়োজন মুহূর্তে তারা যাতে সার ও সেচ সুবিধা পায়, তার ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই সম্ভব হবে কাংখিত ফল লাভ। আমরা চাইনে, শস্যের ভান্ডার হিসেবে খ্যাত সিলেট অঞ্চলের এক ইঞ্চি ভূমিও অনাবাদী ও অব্যবহৃত থাকুক। আমাদের বিশ্বাস, সিলেট অঞ্চলের মানুষ বিশেষভাবে তরুণ যুবকরা বিদেশে যাবার মোহ খানিকটা ত্যাগ করে নিজের মাটির দিকে একটু নজর দিলে তাদের নিজেদের যেমন কল্যাণ হবে তেমনি দেশেরও মঙ্গল হবে। আর নিজস্ব জমি ও ভূমি থেকে যে ফল আসবে, তা হবে টেকসই ও স্থায়ী। আমরা এ ব্যাপারে সংশি¬ষ্ট সকলের সুদৃষ্টি ও মনোযোগ প্রত্যাশা করি। (3 বার পড়া হয়েছে)