আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসে ‘সকলের জন্য হোক দূষণমুক্ত নদীর পানি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ১২টি সংগঠনের বুড়িগঙ্গা নদী পরিদর্শন সকলের জন্য হোক দূষণমুক্ত নদীর পানি’প্রতিপাদ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস ২০২৪ উপলক্ষে নদী-হাওর-জলাশয়-উপকুল প্রোগ্রাম কমিটি এবং ৮টি পরিবেশবাদী সংগঠনের যৌথ আয়োজনে বুড়িগঙ্গা নদী পরিদর্শন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের সামনে এক সমাবেশের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু করে। এরপর একটি র্যালী শুরু হয় বুড়িগঙ্গা, তোরাগ ও শীতলক্ষ্যা নদী বাঁজাতে, হবে বাঁজাতে হবে স্লোগান দিতে দিতে ওয়াইজঘাট পর্যন্ত আসে এবং সেখান থেকে নৌকাযোগে বসিলা ব্রীজ পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা নদী সরজমিনে পরিদর্শন করে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘দেশের নদীগুলোকে মাছ চাষ উপযোগী করার দাবী জানান সরকারের প্রতি। ঢাকার চারপাশের নদীগুলো সরকারের অকার্যকর যন্ত্রের কারনে দখল-দূষণে জর্জরতি। সরকারের সদিচ্ছা ও একটি কঠিন পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের নদীগুলো রক্ষা করা সম্ভব বলে মনে করেন বক্তারা। নদীকে মেরে নগরায়ন চাইনা। আমরা সরকারের নিকট দেশের নদীরক্ষার দাবীগুলো তুলে ধরবো। নদীর চার পাশ দখলমুক্ত করে জনসাধারণের চলাচলের উপযোগী করার আহ্বান জানান। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এবং ওয়াসার ময়লা যেন নদীতে না ফেলা হয় সেটি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। বক্তরা আরো বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর অবহেলা খামখেয়ালীপনার জন্য দেশের নদীগুলো আজ দখল-দূষণে মৃতপ্রায়।’
নদী সরজমিনে পরিদর্শন শেষে নদী-হাওর-জলাশয়-উপকুল প্রোগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব এবং নোঙর ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সুমন শামস বলেন, ঢাকা শহরের প্রধান নদী বুড়িগঙ্গা নদী। এর সঙ্গে আরো পাঁচটা নদী আছে। প্রত্যেকটা নদীই দূষণের শিকার। আমরা সদরঘাট থেকে বসিলা পর্যন্ত দেখেছি প্রায় ৩২টি ড্রেন দিয়ে বর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়ছে। এছাড়াও পাঁচ জায়গায় আগুন জ্বলছে। এছাড়াও সাতটি খাল রয়েছে যার সবগুলোই বন্ধ। এসব নিয়ে মানুষকে সচেতন করা জরুরি। সচেতনতার জন্যই আমরা এ প্রোগ্রামের আয়োজন করেছি। এছাড়াও এই নদীতে আসার সময় কোন মাছ আমাদের চোখে পড়েনি। খাবার মতো কোন মাছ নেই। সাকার ফিশ আছে শুধু যেটা নিয়ে আমরা আতঙ্কে থাকি। নদী রক্ষার জন্য আমরা একত্রিত থাকব।
বাংলাদেশে শাখা-প্রশাখা উপনদী মিলে কম-বেশি ৭০০টি নদী রয়েছে। তবে দেশের শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অন্তত ২৮টি নদনদী দখল আর দূষণের শিকার হয়ে এখন মৃতপ্রায়। ৫৩ জেলার নদী ও খালের বিভিন্ন অংশ দখল করেছে ১০ হাজারেরও বেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। তবে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের মতে, নদী দখলদারদের সংখ্যা আরো অনেক বেশি। আসলে সব নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নদীর ধারে গড়ে উঠেছে বড় বড় কলকারখানা, নদীতে শত শত বাঁধ। যখন যেভাবে প্রয়োজন তখন সেভাবে নদীকে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রভাবশালীরা নদী ভরাট করে দখল করার উৎসবে মেতে উঠেছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশ এখন নদী বৈরীর দেশে পরিণত হয়েছে।
পরিদর্শন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক ও বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের সমন্বয়ক মিহির বিশ্বাস, নোঙর ট্রাস্ট এর চেয়ারম্যান সুমন শামস, গ্রীন ভয়েস কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সমন্বয়ক হুমায়ুন কবির সুমনসহ আয়োজক সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ। নদী-হাওর-জলাশয়-উপকুল প্রোগ্রাম কমিটির আহবানে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা), বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলন, নোঙর ট্রাস্ট, নদী রক্ষা জোট, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন, নদী পরিব্রাজকদল, বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশন, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট, কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (সিডিপি), রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি) ও গ্রিন ভয়েস জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যৌথ উদ্যোগে বুড়িগঙ্গা নদী সরেজমিনে পরিদর্শন কর্মসূচি পালন করা হয়।