আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের জিরাবো এলাকায় নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তৈরি পোশাক কারখানা বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা, আন্দোলনরত শ্রমিকদের সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেন। সংঘর্ষে অন্তত ৩০জন শ্রমিক আহত হওয়া ছাড়াও একাধিক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা।
সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলী বলেন, দুপুর ১টার দিকে আমাদের হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ৩ জনকে আনা হয়েছে। এর মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মারা গেছেন। নিহতের নাম কাউছার হোসাইন খান(২৭)। তিনি ম্যাংগোটেক্স এর শ্রমিক বলে আমাদেরকে জানানো হয়েছে। বাকী দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন”, যোগ করেন তিনি।পরবর্তিতে বেলা ৩টার সময় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নাজমুল এবং ওবায়দুল মিয়া নামে আরও দুই শ্রমিককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। দুজনই ন্যাচারাল ইন্ডিগোর শ্রমিক বলে জানা গেছে। এর আগে, আশুলিয়ার পিএমকে হাসপাতালে দুজন শ্রমিককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। গুলিবিদ্ধরা হলেন, ন্যাচারাল ডেনিমসের শ্রমিক হাবীব ও ন্যাচারাল ইন্ডিগো কারখানার শ্রমিক নাজমুল হাসান। পিএমকে হাসপাতালের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের এখানে ৪জন শ্রমিককে আহত অবস্থায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে দুজনকে আনা হয়েছে গুলিবিদ্ধ অবস্থায়। তাদের পায়ে গুলি লেগেছে।
এদিকে, সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো জুয়েল মিয়া বলেন, “গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হওয়ার তথ্য আমরা পেয়েছি, আমরা হাসপাতালে এসেছি। নিহত ব্যক্তি ছাড়া, কয়জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন,আমরা হাসপাতালে রয়েছি, বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। বিস্তারিত পরে জানাতে পারবো।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, আজ(৩০ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার পর শিল্পাঞ্চলের জিরাবো এলাকায় কয়েকটি পোশাক কারখানার বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়কে নেমে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের সড়ক থেকে সরে যেতে বলেন। এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করলে শ্রমিকদের সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেন। সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন শ্রমিক আহত হওয়া ছাড়াও একাধিক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা।
সুমন নামে ন্যাচারাল ডেনিম কারখানার একজন শ্রমিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সকাল থেকে জিরাবো এলাকায় মন্ডল নিটওয়্যার লিমিটেড এর শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করছিল। আমাদের শ্রমিকরা সকাল থেকে কারখানায় কাজে যোগ দেয় এবং কাজ চলমান ছিল। বেলা ১১টার দিকে শ্রমিকরা মণ্ডলের শ্রমিকদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে কাজ বন্ধ করে কারখানা থেকে বেরিয়ে মন্ডল নিটওয়্যার-এর সামনে যায়। তিনি বলেন, শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মুখোমুখি হলে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। কয়েকজন শ্রমিক এসময় ইট পাটকেল নিক্ষেপ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও পালটা টিয়ার শেল ও গুলি করা শুরু করেন।
ন্যাচারাল ডেনিম কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এইচআর) সবুজ হাওলাদার বলেন, আমাদের কারখানায় কোন সমস্যা ছিল না। সকাল থেকেই শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণ ভাবে কাজ করছিল। হঠাৎ শ্রমিকদের কাছে গুজব আসে, পাশের মন্ডল গার্মেন্টসের শ্রমিক মারা গেছে। এটা শুনেই সব শ্রমিক একসাথে কারখানা থেকে বেরিয়ে মন্ডল গার্মেন্টসের সামনে চলে যায়। পরে ওখানে কি ঘটেছে আমার জানা নেই।
প্রসঙ্গত, আজ আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তৈরি পোশাক কারখানা বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা।