সরকারি হাসপাতালে ১৭৫ টাকা দিয়েই বরাদ্দ হয় একজন রোগীর চার বেলার খাবার। এরমধ্যে আবার ঠিকাদারের লভ্যাংশ! সেই হিসাবে দুপুর আর রাতে সাড়ে ৬৮ টাকাতেই মেটাতে হয় একজন রোগীর খাবারের চাহিদা। এত কিছুর পরে খাবারের মান আর স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমন সংকটে মন্ত্রণালয়ের অদূরর্শিতাকে দুষছেন বিশেষজ্ঞরা। দ্রুত সমন্বিত উদ্যোগ নিতে বলছেন তারা।

সরেজমিনে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের রান্নাঘরে গিয়ে দেখা গেছে, স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে রোগীর খাবার তৈরি হচ্ছে। মানা হচ্ছে না বিশেষ কোনো স্বাস্থ্যবিধি। যেন পাড়া-মহল্লার কোনো হোটেলের রান্নাঘর। অথচ হাসপাতারের মূল ভবন থেকে একটু দূরে এই ভবনেই গত কয়েক দশক ধরে তৈরি হয় রোগীর খাবার। এখান থেকে কয়েকশ’ গজ দূরে একটি রাস্তা পাড়ি দিয়ে ট্রলিতে করে হাসপাতারে নেয়া হয় খাবার, তারপর যায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে। রোগী আর স্বজনদের প্রশ্ন এই খাবারে কতটুকুইবা রোগীর পুষ্টি চাহিদা মেটে!

রোগীরা বলছেন, প্রয়োজনের তুলনায় খাবারও কম দেয়া হয়। চাইলেও আর দেয়া হয় না। সবজিটা আরেকটু বাড়িয়ে দিলে ভালো হয়। কিন্তু না দিলে তো করার কিছু নেই। বাধ্য হয়ে যা দেয়, তা-ই খেতে হয়। কেবল সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালই নয়, দেশের সব সরকাররি হাসপাতালেই রোগী প্রতি সারা দিনের পথ্যের বাজেট ১৭৫ টাকা। সকালের নাশতায় ৪ পিস পাউরুটি, একটি ডিম ও একটি কলা মিলিয়ে প্রায় ৫২ টাকা। দুপুরে আর রাতে জনপ্রতি ৬৪ গ্রাম মাছ কিংবা মাংস, ভাত বা রুটি দিয়ে বরাদ্দ ৬৮ টাকা ২৭ পয়সা। এছাড়া বিকেলে এক প্যাকেট বিস্কুট আর অন্যান্য খরচে মিলিয়ে বাকি টাকা। এর মধ্যেই রয়েছে পথ্য সরবারহকারী প্রতিষ্ঠানের লাভের অংশ। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই বাজেটে মান নিয়ন্ত্রণ কঠিন।

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফিউর রহমান বলেন, ডায়েট চার্টের অনুমোদন নিয়ে অনুপাত অনুযায়ী ভারসাম্য করে ১৭৫ টাকার মধ্যে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বিবেচনা করলে এই ১৭৫ টাকা বাজেট দিয়ে ভারসাম্য রাখা খুব কঠিন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাভাবিক মানুষের খাবার আর রোগীর পথ্য যেন মিলিয়ে ফেলেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। রোগী ভেদে নিশ্চিত করতে হবে আলাদা খাবার। বাজেট বাড়াতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের তাগিদ দিচ্ছেন তারা। বলছেন, রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট মানের পথ্য নিশ্চিত করতে পারলে তা রোগীকে দ্রুত সেড়ে উঠতে সহায়ক হবে, যার পরোক্ষ প্রভাব পড়বে গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থায়।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমদ বলেন, একেক রোগীর খাবার একেক রকম হবে। কখনোই সব রোগীর এক রকম ডায়েট হবে না। যেমন একজন শিশুর কথা ধরলে, তার ডায়েটে দুধ, ডিম ও মুরগির মাংস থাকতে হবে। আবার একইভাবে বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে চাহিদাটা ভিন্ন হবে। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়কে চিন্তা করতে হবে যে এ সমস্যা সমাধান করতে কী করা দরকার। এজন্য তাদের একটা নীতিমালা তৈরি করে দেয়া উচিত। বাজেট বাড়িয়ে পথ তৈরি করে দিতে হবে। এসব বিষয় বিবেচনা করলে সমস্যার সমাধান হবে। মন্ত্রণালয় এখানে হাত না দিলে এটা দীর্ঘদিন ধরে যেরকম আছে, সেরকমই থেকে যাবে’, যোগ করেন এই বিশেষজ্ঞ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে