নানা নাটকীয়তা, অঘটন, বিতর্ক, সমালোচনাকে সঙ্গী করে শেষ হলো ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে অপ্রতিরোধ্য ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জেতে অস্ট্রেলিয়া। টুর্নামেন্ট শেষে বিশ্বকাপের সেরা একাদশ প্রকাশ করেছে উইজডেন। সেই একাদশের ১১ জনের মধ্যে ৬ জনই বিশ্বকাপে রানার্সআপ হওয়া ভারতের। নীল সমুদ্রে পরিণত হয়েছিল আহেমদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম। ১ লাখ ৩০ হাজার ধারণ ক্ষমতার স্টোডিয়ামের যেকোনো গ্যালারিতে চোখ রাখলেই দেখা যাচ্ছিল নীল সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ। ভারতের এককেটি সাফল্যে ফেটে পড়ছিল গ্যালারি। কিন্তু সময় গড়ায়, পাল্টায় চিত্র। অস্ট্রেলিয়ার নায়ক ট্রাভিস হেড, মার্নাস লাবুশেনরা একটা করে বাউন্ডারি মারেন, আর নিরবতা নেমে আসে পুরো স্টেডিয়ামে।
বিশ্বকাপ শেষে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো ব্যস্ত বিশ্বকাপের সেরা ও ফ্লপ একাদশ বাছাই করতে। এরই মধ্যে নিজেদের সেরা একাদশ প্রকাশ করেছে উইজডেন। সেই একাদশে ওপেনার হিসেবে সুযোগ পেয়েছেন রোহিত শর্মা। তার সঙ্গী হিসেবে রয়েছেন বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ট্র্যাভিস হেড। উইকেটরক্ষক হিসেবে উইজডেন একাদশে রেখেছে লোকেশ রাহুলকে। পেসার হিসেবে একাদশে জায়গা হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জেরাল্ড কোয়েটজি, ভারতের মোহাম্মদ শামি ও বুমরাহর। স্পিনার হিসেবে রয়েছেন অ্যাডাম জাম্পা।
ভারতের উৎসব মাটি করে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ ঘরে তুললো অস্ট্রেলিয়া। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের লাখো দর্শক ভাসলো চোখের জলে। ফাইনালে অজিদের কাছে ভারত ৬ উইকেটে হারালো।
স্নায়ুর লড়াইয়ে শুরুতেই নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা। ভারতকে অলআউট করেছে ২৪০ রানে। শুরুতে তিন উইকেট হারিয়েও, ট্রাভিস হেডের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ৪২ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া।বলা হয় সব ভালো যার শেষটা ভালো। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে অজেয় ভারত। অস্ট্রেলিয়ার শুরু প্রথম দুই ম্যাচে পরাজয় দিয়ে। অথচ দিনের শেষ হাসিটা তাদেরই।
ফাইনালের শুরুটাও টস জয় দিয়ে করেছে অজিরা। ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে কিছুটা বিষ্ময়ই জাগিয়েছেন প্যাট কামিন্স। উদ্যেশ্য উইকেটের শুরুর আদ্রতা কাজে লাগিয়ে ভারতকে কম রানে বেধে রাখা। আর রাতের শিশির মাখা ঘাসে রান তাড়া করে জয়। মাঠ ভর্তি দর্শক। ভিআইপি গ্যালারীতে তারার মেলা। অজি বোলাররা প্রথম লক্ষ্য সফল করলেন। ফাইনালের চাপে দলের ৩০ রানে সাঁজঘরে শুভমান গিল। তবে দ্রুত রান তোলা থামেনি রোহিত শর্মার। পাল্টা আক্রমণে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা। ৪৭ শিকার হলেন ম্যাক্সওয়েলের। উইকেটে সেট হওয়ার আগেই সাঁজঘরে শ্রেয়াশ। ১০ ওভারে ৮০ রান উঠলেও ফিরেছেন তিন ব্যাটার। অজি বোলাররা পেয়ে গেছেন ছন্দ। বিরাট কোহলি- লোকেশ রাহুলের রানে ফেরার লড়াই। ৯৮ বল কোন বাওয়ান্ডারি পায়নি ভারত। কোহলির আরেকটি অর্ধশতক। এই আসরে ৩ সেঞ্চুরি আর ৬ ফিফটিতে ৭৬৫ তার নামের পাশে। তবে বড় অসময়ে প্লেইড অন হলেন তিনি। কিছুটা ধীর। তবে ভারতের ভরসা হয়ে ছিলেন রাহুল। ফাইনালে পেলেন অর্ধশতক। তিনিও ফিরলেন দলের প্রয়োজনের সময়। শেষদিকে, রানের গতি কমে গেলো। ভারত থামলো ২৪০ রানে। এই বিশ্বকাপ প্রথমবার অল আউট হলো তিরাঙ্গারা।
স্কোরবোর্ডে যথেস্ট রান নেই। ম্যাচ জিততে চাই দ্রুত উইকেট। দুই পেসার বুমরাহ-শামির প্রানান্ত চেষ্টা। আরো একবার ব্রেক থ্রু শামির হাত ধরে। বিশ্বকাপ সর্বোচ্চ উইকেট শিকার। ফিরলেন ওয়ার্নার। বুমরাহ আগুনে তোপ। দ্রুত বিদায় মার্শ ও স্মিথের। গ্যালারীতে তখন সমুদ্র গর্জন। যদিও রিভিও না নিয়ে ভুল করলেন স্মিথ। প্রযুক্তি বললো তিনি আউট ছিলেন না। তবে শেষ হেড ও লাবুশেন মিলে ভারতের বোলারদের ওপর ঝড় তুললেন। তাদের ১৯২ রানের জুটি। সেমিফাইনালে হাফসেঞ্চুরি। ফাইনালে সেঞ্চুরি পেলেন ট্রেভিস হেড। ১৩৭ করে যতক্ষণে আউট হয়েছেন ততক্ষণে ম্যাচ হাতের মুঠোয়। লাবুশেনের অর্ধশতকে শিরোপা অস্ট্রেলিয়ার হাতে।