দুর্দান্ত ব্যাটিং-বোলিং নৈপুন্যে জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শেষ করলো বাংলাদেশ। আজ সুপার ফোর পর্বের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ ৬ রানে হারিয়েছে আগেই ফাইনাল নিশ্চিত করা ভারতকে। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার এশিয়া কাপের মঞ্চে ভারতকে হারালো বাংলাদেশ। এর আগে ২০১২ সালের এশিয়া কাপে ভারতকে হারিয়েছিলো টাইগাররা। এবারের আসরে গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে সুপার ফোরে ৩ ম্যাচ খেলে ১টি জয় ও ২টি হারে ২ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে বিবেচনায় টেবিলের তৃতীয় স্থানে থেকে এশিয়া কাপ মিশন শেষ হলো বাংলাদেশের। ৩ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে পিছিয়ে চতুর্থ স্থানে থেকে মহাদেশীয় এ টুর্নামেন্ট শেষ করে পাকিস্তান। ৩ খেলায় ২টি করে জয় ও ১টি করে হার ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষ দল হিসেবে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর ফাইনালে লড়বে ভারত ও শ্রীলংকা।
কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে আজ নিয়ম রক্ষার ম্যাচে টস ভারতের বিপক্ষে হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পায় বাংলাদেশ। পাঁচটি পরিবর্তন নিয়ে সাজানো একাদশে দলের হয়ে ইনিংস শুরু করেন টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে অভিষেক হওয়া তানজিদ হাসান ও লিটন দাস। প্রথম দুই ওভারে ৩টি চার মেরে ইনিংসের যাত্রা করেন তানজিদ। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে পেসার মোহাম্মদ সামির বলে বোল্ড হন ওপেনিংয়ে ফেরা লিটন। ২ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। পরের ওভারের প্রথম বলে শারদুলের বলে ইনসাইড এজ বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন অভিষেক ম্যাচে গোল্ডেন ডাকের মালিক তানজিদ। ১২ বলে ১৩ রান করেন তিনি। তিন নম্বরে নেমে সুবিধা করতে পারেননি এনামুল হক। শারদুলের বলে পুল করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ১১ রানে ৪ রান করা এনামুর হক বিজয় ক্যাচ দিলে দলীয় ২৮ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। পাঁচ নম্বরে নামেন আগের তিন ম্যাচে ওপেনার হিসেবে নামা মেহেদি হাসান মিরাজ। শারদুলের করা দশম ওভারে দু’বার জীবন পান তিনি। জীবন পেয়েও প্যাটেলের শিকার হয়ে ২৮ বলে ১৩ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। দলীয় ৫৯ রানে মিরাজের বিদায়ের পর বড় জুটির চেষ্টা করেন অধিনায়ক সাকিব ও তাওহিদ হৃদয়। উইকেটে সেট হতে সাবধানে খেলতে থাকেন তারা। ২৪তম ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ১শ স্পর্শ করে । ২৬তম ওভারে প্যাটেলের চতুর্থ ডেলিভারিতে ছক্কা মেরে ওয়ানডেতে ৫৫তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৬৫ বল খেলা সাকিব। হাফ-সেঞ্চুরির পরও বেশ ভালই খেলছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক । কিন্তু ৩৪তম ওভারে শারদুলের বলে ইনসাইড এডজ হয়ে বোল্ড হন ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৮৫ বলে ৮০ রান করা সাকিব। পঞ্চম উইকেটে হৃদয়ের সাথে ১১৫ বলে ১০১ রানের জুটি গড়েন ২৮ রানে উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুলের হাতে জীবন পাওয়া সাকিব।
সাকিব ফেরার পরের ওভারে জাদেজার বলে লেগ বিফোর আউট হন সাত নম্বরে নামা শামীম হোসেন(১)। এতে দলীয় ১৬১ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে আবারও চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সপ্তম উইকেটে নাসুমের সাথে ৩২ রানের জুটি গড়ার পথে ওয়ানডেতে পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন হৃদয়। অর্ধশতকের পর সামির বলে পুল করে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৮১ বলে ৫৪ রান করা হৃদয়। হৃদয় ফেরার পর বাংলাদেশকে সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে গেছেন তিন টেল এন্ডার নাসুম, মাহেদি ও তানজিম। অষ্টম উইকেটে মাহেদি-নাসুম ৩৬ বলে ৪৫ এবং নবম উইকেটে ১৬ বলে অবিচ্ছিন্ন ২৭ রান তুলেন মাহেদি-তানজিম। এতে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৬৫ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় নাসুম ৪৫ বলে ৪৪, ৩টি চারে ২৩ বলে মাহেদি অপরাজিত ২৯ এবং ১টি করে চার-ছক্কায় ৮ বলে অপরাজিত ১৪ রান করেন তানজিম। ভারতের শারদুল ৩টি ও সামি ২টি উইকেট নেন। জয়ের জন্য ২৬৬ রানের টার্গেে খেলতে নেমে শুরুতেই বাংলাদেশের অভিষিক্ত পেসার তানজিমের তোপের মুখে পড়ে ভারত। তানজিমের করা ইনিসের দ্বিতীয় বলে কভার পয়েন্টে এনামুলকে ক্যাচ দিয়ে খালি হাতে ফিরেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারে দ্বিতীয়বারের মত বোলিং এসে দারুন এক ডেলিভারিতে ভারতের হয়ে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা তিলক ভার্মার(৫) উইকেট উপড়ে ফেলেন তানজিম। ১৭ রানে ২ উইকেট হারানো ভারতকে চাপমুক্ত করতে ৫৭ রানের জুটি গড়েন ওপেনার শুভমান গিল ও লোকেশ রাহুল। ১৮তম ওভারে রাহুলকে ১৯ রানে থামিয়ে জুটি ভাঙ্গেন স্পিনার মাহেদি হাসান। রাহুলের পর পাঁচ নম্বরে নামা ইশান কিশানকে ৫ রানে বিদায় করে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ফেরান মিরাজ। ৯৪ রানে চতুর্থ উইকেট পতনে ক্রিজে আসেন সূর্যকুমার যাদব। গিলের সাথে জুটি গড়ার লক্ষ্যে সাবধানী ছিলেন সূর্য। এই জুটি ভাঙ্গতে মরিয়া হয়ে উঠে বাংলাদেশ। অবশেষে ৩৩তম বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন সাকিব। ৩টি চারে ২৬ রান করা সূর্যকে বোল্ড করেন টাইগার অধিনায়ক। গিল-সূর্য জুটিতে ৪৫ রান যোগ করেন। সাত নম্বরে নামা জাদেজাকে নিয়ে দলের রানের চাকা সচল রাখেন গিল। কিন্তু বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকতে পারেননি জাদেজা। মুস্তাফিজের বলের বোল্ড হয়ে ৭ রানে থামেন তিনি।
জাদেজা ফেরার পর ১১৭ বলে ওয়ানডেতে পঞ্চম সেঞ্চুরি করেন গিল। গিলের সেঞ্চুরি চিন্তা বাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ শিবিরে। ৪৪তম ওভারে গিলকে বিদায় দিয়ে বাংলাদেশের পথে কাটা উপড়ে ফেলেন মাহেদি। লং-অফে হৃদয়কে ক্যাচ দিয়ে থামেন ৮টি চার ও ৫টি ছক্কায় ১৩৩ বলে ১২১ রান করা গিল। দলীয় ২০৯ রানে গিল ফেরার পর প্যাটেলকে স্টাম্পিং আউটের সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন উইকেটরক্ষক লিটন। জীবন পেয়ে ভারতের জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন প্যাটেল। শেষ ৩ ওভারে ২৮ রানের দরকারে মাহেদির করা ৪৮তম ওভারের শেষ দুই বলে চার-ছক্কায় ১৪ রান তুলেন প্যাটেল। ২ ওভারে ১৭ রানের প্রয়োজনে ৪৯তম ওভারে শারদুল(১১)ও প্যাটেলকে আউট করেন মুস্তাফিজ। প্যাটেল ৩৪ বলে ৪২ রান করেন। ওভারে মাত্র ৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন ফিজ। শেষ ওভারে ১ উইকেট হাতে নিয়ে ১২ রান দরকার পড়ে ভারতের। পঞ্চম বলে শেষ ব্যাটার হিসেবে রান আউট হন সামি। ২৫৯ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। বাংলাদেশের মুস্তাফিজ ৫০ রানে ৩টি, তানজিম ৩২ রানে ও মাহেদি ৫০ রানে ২টি করে উইকেট নেন। ১টি করে উইকেট নেন সাকিব ও মিরাজ।
স্কোর কার্ড : (টস-ভারত)
বাংলাদেশ ইনিংস
তানজিদ বোল্ড ব শারদুল ১৩
লিটন বোল্ড ব সামি ০
এনামুল ক রাহুল ব শারদুল ৪
সাকিব বোল্ড ব শারদুল ৮০
মিরাজ ক রোহিত ব প্যাটেল ১৩
হৃদয় ক তিলক ব সামি ৫৪
শামীম এলবিডব্লু ব জাদেজা ১
নাসুম বোল্ড প্রসিদ্ধ ৪৪
মাহেদি অপরাজিত ২৯
তানজিম অপরাজিত ১৪
অতিরিক্ত (বা-১, লে বা-৩, ও-৯) ১৩
মোট (৮ উইকেট, ৫০ ওভার) ২৬৫
উইকেট পতন : ১/১৩ (লিটন), ২/১৫ (তানজিদ), ৩/২৮ (এনামুল), ৪/৫৯ (মিরাজ), ৫/১৬০ (সাকিব), ৬/১৬১ (শামিম), ৭/১৯৩ (হৃদয়), ৮/২৩৮ (নাসুম)।
ভারত বোলিং
সামি : ৮-১-৩২-২ (ও-২),
শারদুল : ১০-০-৬৫-৩ (ও-৩),
প্রসিদ্ধ : ৯-০-৪৩-১ (ও-২),
প্যাটেল : ৯-০-৪৭-১,
তিলক : ৪-০-২১-০,
জাদেজা : ১০-১-৫৩-১।
ভারত ইনিংস :
রোহিত ক এনামুল ব তানজিম ০
গিল ক হৃদয় ব মাহেদি ১২১
তিলক বোল্ড ব তানজিম ৫
রাহুল ক শামিম ব মাহেদি ১৯
কিশান এলবিডব্লু ব মিরাজ ৫
সূর্যকুমার বোল্ড ব সাকিব ২৬
জাদেজা বোল্ড ব মুস্তাফিজুর ৭
প্যাটেল ক তানজিদ ব মুস্তাফিজুর ৪২
শারদুল ক মিরাজ ব মুস্তাফিজুর ১১
সামি রান আউট ৬
প্রসিদ্ধ অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (বা-২, লে বা-৩, ও-১২) ১৭
মোট (অলআউট উইকেট, ৪৯.৫ ওভার) ২৫৯
উইকেট পতন : ১/২ (রোহিত), ২/১৭ (তিলক), ৩/৭৪ (রাহুল), ৪/৯৪ (কিশান), ৫/১৩৯ (সূর্যকুমার), ৬/১৭০ (জাদেজা), ৭/২০৯ (গিল), ৮/২৪৯ (শারদুল), ৯/২৫৪ (প্যাটেল), ১০/২৫৯ (সামি)।
বাংলাদেশ বোলিং
তানজিম : ৭.৫-১-৩২-২ (ও-৫),
মুস্তাফিজুর : ৮-০-৫০-৩ (ও-২),
নাসুম : ১০-০-৫০-০ (ও-২),
সাকিব : ১০-২-৪৩-১,
মাহেদি : ৯-১-৫০-২ (ও-১),
মিরাজ : ৫-০-২৯-১।
ফল : বাংলাদেশ ৬ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)।