লেখক- ইসতিয়াক আহমেদ।। আইন, বিচারক ও আইনজীবি সমাজের উচ্চ শ্রেণীর বুদ্ধিজীবির নাম আইনজীবি। পৃথিবীতে দুই ব্যক্তির নামের পূর্বে বিজ্ঞ(লা’রনেড)শব্দটি ব্যবহার করা হয় একজন বিচারক অপরজন আইনজীবি অর্থাৎ পৃথিবীতে স্বীকৃত বিজ্ঞব্যক্তি (লার্নেড ম্যান) বিচারক ও আইনজীবিগন। বিচারক ও উভয় পক্ষের আইনজীবি সকলেই ন্যায়বিচার এর পক্ষে সম্মলিত ভাবে কাজ করেন। প্রাচীনকাল থেকে অদ্য পর্যšত এই বুদ্ধিজীবীগন সমাজ পতিদের সঙ্গে যতটা থাকেন তার চেয়ে অনেক বেশি সাধারণ মানুষের কাছে থাকেন। মানুষের প্রয়োজন,দাবী,অধীকার ও কর্তব্য সর্ম্পকে বা¯তব জ্ঞানের অধিকারী হওয়ায় সমাজের সর্বস্তরে সম্মান পেয়ে থাকেন। বিচারক ও আইনজীবি মানুষ এবং মানবতার সেবায় নিয়োজিত। দেশে কোটিপতি থেকে গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক, জেলে, দিনমজুর সহ গরিব মানুষ সাথে আছে সর্বক্ষন। সকলের জন্যই বিচার, বিচারক ও আইনজীবি দের সেবার দ্বার উম্মুক্ত থাকে সর্বদা। বিচারক ও আইনজীবি তাঁর পেশাগত কর্তব্যের মধ্যেই সামাজিক অধিকার ও কর্তব্য পালন করেন। মানুষের অধিকার বাস্তবায়ন, সহযোগীতা, পরমর্শদান, আদালতে মামলা পরিচালনা প্রভৃতি সেবার আওতায় পড়ে। কারন আইনজীবী এসব কর্ম করতে বাধ্য নন বা বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা যায়-সেরুপ কোন বিধান নাই। তবুও এই পেশায় বাধ্যবাধকতা এসে যায় কর্তব্যের তাগিদে। সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের তাগিদেই সমাজের নিপীড়িত, দরিদ্র,অসহায়দের সহায়তা করাই বিচার, আর এর সহায়ক বিচারক ও আইনজীবি।

আইনপেশা মুক্ত পেশা। অন্য সেবামুলক পেশা থেকে একটু ভিন্ন। এ পেশার শুরুটা একটু চেলেঞ্জের, একটু দুর্গম তাই শুরু থেকেই কঠিন পরিশ্রম এবং একাগ্রতা নিয়ে কাজ করার পস্তুুতি নিতে হয়।ধৈর্য্য,সহিসনুতা,সততা ও অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে কঠিন সময় অতিক্রমে যে আগ্রহীনন তাঁর পক্ষে আইন পেশা মোটেও সন্তোষজনক হবে না। এখানে নিজের স্বাধীনতা থাকে তাই নিজেকে ও পেশায় প্রতিষ্ঠিত হতে হলে অবশ্যই শক্ত পরিশ্রমী হতে হবে, মানবজীবনের দৈনিন্দন সমস্যবলী সর্ম্পকে জ্ঞানার্জন করতে হবে, সমস্ত জীবন ধরে পড়াশুনা ও জ্ঞান আহরণের প্রচেষ্টায় থাকতে হবে, প্রতিদিন নতুন কিছু জানা বা শেখার চেষ্টা করতে হবে। এ জন্যই বিচারপতি হোমস বলে গেছেন- ‘‘আইনের ক্ষেত্রে কবির বা শিল্পীর স্থান নেই, চিন্তাবিদের জন্য আইন’’। আইন ও উপস্থাপনা পরস্পর সহযোগী, আর এই দুটির জন্য যোগ্যতা লাগে আর যোগ্যতার জন্য সাহস প্রয়োজন। বিখ্যাত আইনজীবি ডাব্লিউ, আর, রিডল আমেরিকান বার এসোসিয়েশনে বলেছিলেন ‘‘এই সাহস কোন প্রাইজ ফাইটার এর সাহস নয়, ইহা সেই সাহস যাহা সমস্যার বিষয়টি সঠিক ভাবে উপস্থাপনা ও সঠিকভাবে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার যোগ্যতার সাহসিকতা’’। বার বা ওকালতি পেশা(সারভাইভএল অব ফিটেস্ট) মতাবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত। এখানে নিয়ম হল নিজের যোগ্যতাই সারভাইভ করবে। নিজের ব্যক্তিত্ব ও মহত্ত্ব নিজেকেই প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আইন পেশায় বিভিন্ন বিষয় অভিজ্ঞ হয়ে ওঠা যায়, পারিবারিক, জমিজমা-দেওয়ানী, ফৌজদারী, রীট, কোম্পানী বিষয়ক, এ্যাডমিরালিটি, শ্রম আইন, রাজস্ব, কাস্টমস ও ভ্যাট এবং আয়কর প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কাজ করা যায়। এছাড়া কোম্পানীর রেজিস্ট্রেশন,অংশীদারী কারবারের চুক্তি তৈরী, ট্রেডলাইসেন্স,আয়কর নিবন্ধন, ভ্যাট নিবন্ধন, চেম্বার অব কর্মাসে নিবন্ধন,আমদানী রেজিসট্রেশন সার্টিফিকেট, বিনিয়োগ বোর্ড এ বিনোয়গকারীদের কাজের অনুমতি প্রভৃতি বিষয়ে বর্তমানে আইনজীবিদেরই পরিচালনা করতে হয়। নিজের পছন্দ অনুযায়ী ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করা যায়। এখানে একাডেমিক ফলের চেয়ে পেশা জীবনে নিজস্ব মেধা, পরিশ্রম ও ধৈর্য্যই এনে দিবে এক উজ্জল ভবিষ্যৎ। এ পেশায় সামাজিক দায়বদ্ধতা অনেক বেশী।

অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার, নির্যাতন, অধিকারহরন, কর্তব্যে অবহেলা প্রভৃতি সমাজের একটি সাধারন চিত্র। সমাজের অসহায়, নিপীড়িত, নির্যাতিত মানুষগুলো একটু আইনগত সাহায্যের জন্য আসেন আইনজীবিদের নিকটে। এরা বিচার প্রার্থী। ন্যায়ত ও আইনত: বিচার চায়। আইনজীবি অধিকার বঞ্চিত মানুষের অধিকার সংরক্ষনে সহায়তা করতে অঙ্গিকারবদ্ধ। আইনজীবি মামলার পক্ষের নিকটে কখনই দায়বদ্ধ নয় বরং সমাজ, আইন, বিচার ব্যবস্থার নিকট দায়বদ্ধ, কারন দেশের সর্বোচ্চ যুক্তির নাম আইন আর আইনের ক্ষেত্র ব্যাপক অর্থাৎ একটি সন্তানের জন্মোর বৈধতা থেকে শুরু করে মরনোত্তর বিষয়সহ মধ্যবর্তী সকল কর্মকান্ড আইনের ছকে নির্দ্ধারিত। তাই আইনজীবিকে আইনের সকল শাখা সর্ম্পকে সাধারন জ্ঞান অর্জন করতেই হয়। যেমন মেডিক্যাল জুরিসপ্রুডেন্স, দেহতত্ত্ব, অপরাধ বিজ্ঞান, সভাসমিতির নিয়মাবলী, রাজনীতি. অর্থনীতি, নির্বাচন আইন, হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবসা বাণিজ্যেও নিয়ম পদ্ধতি, সামাজিক প্রথা, আঙ্গুলের ছাপ, হস্তরেখা, হস্ত লিখন সহ আরও বিবিধ বিষয়ে জ্ঞানর্জন করতে হয় কারন ঘটনার সত্যতা, যৌক্তিকতা, গ্রহণযোগ্যতা প্রভৃতি বিষয়গুলী পরিক্ষার সময় এই গুলো কোন না কোনটি কাজে লাগবেই। আইনের উপরে প্রথামিক জ্ঞান স্পষ্ট ও সুন্দর না হলে ব্যবহার ও প্রয়োগে ভুল হয়ে যায়।

এ কারনে প্রচলিত ব্যবহারিক আইনগুলি প্রথমে পড়ে পরে অন্যান্য আইনগুলি জানার চেষ্টা করতে হয়। যেমন ফৌজদারী কার্যবিধি, দন্ডবিধি, তামাদি আইন, সাক্ষ্য আইন, রেজিস্ট্রেশন আইন, দেওয়ানী কার্যবিধি, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, মুসলিম আইন, হিন্দু আইন, শ্রম আইন, রাজস্ব আইন, আয়কর সহ দেশে প্রচলিত সব ধরনের আইন সর্ম্পকে সম্যক ধারণা অর্জন করতে হয়। বহু ঘটনার সমন্বয়ে একটি মামলা হয় এবং একটি মামলা অবশ্যই একটি বা দু’টি আইন দিয়ে হয় না তাই আইনের ব্যাখ্যাও অবস্থা ও ঘটনার উপরেই হয়। যেমন ফৌজদারী মামলায় দন্ডবিধি, ফৌজদারী কার্যবিধি, সাক্ষ্য আইন, কোর্ট ফি আইন অবশ্যই প্রয়োজন, আবার দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রেও দেওয়ানী কার্যবিধি আইন,তামাদি আইন, কোর্ট ফি আইন, সুনির্দিস্ট প্রতিকার আইন, রেজিস্ট্রেশন আইন, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, মুসলিম উত্তারাধিকারী আইন, ফারায়’য, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮০, অর্থ ঋন আদালত আইন-২০০৩, আইন শৃংক্ষলা বিঘœকারী অপরাধ(দ্রুত বিচার) আইন ২০০২, কাস্টমস এ্যাক্ট ১৯৬৯, অর্থ আইন, মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১, অস্ত্র আইন ১৮৭৮, অস্ত্রবিধি মালা ১৯২৪, বিস্ফোরক আইন ১৮৮৪, বিস্ফোরক দ্রবাদি আইন ১৯০৮, ১৯৭৪ বিশেষ ক্ষমতা আইন, হস্তান্তর যোগ্য দলিল আইন-১৯৮১,(এন আই এ্যাক্ট), মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯০, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত(নিবারন) আইন-২০১৩, শিশু আইন-২০১৩, সহ আরও আইনের প্রয়োজন হয়।

আইনে কোন জটিলতা নেই। সামাজিক জটিলতাকে নিরসনের জন্যই সহজবোধ্যভাবে, সহজ প্রণালীতে সজ্জিত ও বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। আইন প্রণয়কারীগন অত্যান্ত সচেতন মানুষ। তারা বোঝার সুবিধার জন্য আইনে ব্যবহারিত প্রত্যেকটি শব্দকে অধিকতর স্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য করেছেন। প্রত্যেকটি আইনে ব্যবহৃত গুরত্বপূর্ন বিষয়ের সংজ্ঞা দেওয়া থাকে। আইন কোন আবিষ্কারের বিষয় নয়। আইন হচ্ছে জানার বিষয় আর মানুষের অধিকারকে বাস্তবায়ন করার পথ।(লেখাটি লেখকের নিজস্ব মতামত)।

নিউজ ডেস্ক।। বিডি টাইম্‌স নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে