তালাত মাহমুদ, বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা।

সমর আবু ইলুফ, ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার(গাজা), নিউইয়র্ক টাইমস
সমর আবু ইলুফ গাজা শহরের একজন ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার। তিনি ২০২১ সালে ইসরাইল-গাজা সংঘর্ষের পর থেকে নিউ ইয়র্ক টাইমসের জন্য কাজ করছেন। তিনি জানান, গাজা উচ্ছেদের আগের দিনের কথা। আল শিফা হাসপাতালে ঘুমিয়েছিলাম। প্রচণ্ড বোমার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়। শাতি রিফিউজি ক্যাম্পের পাশে বোমা ফেলা হচ্ছিলো। সামার আবু এলুফ জানতে, এখানে প্রচুর জীবনের ক্ষতি হবে। জীবনে যুদ্ধে যত ক্ষয় ক্ষতি দেখেছেন, এটা সবকিছুকেই ছাড়িয়ে গেছে। মানুষের কষ্ট, অনুভুতি, কেউ মারা গেছেন এবং কাউকে বিভ্রান্ত দেখাচ্ছে। এমন সময়ে মানুষের ছবি তোলা সহজ নয়, যারা ঘুমিয়ে ছিল এবং তারপরে প্রচণ্ড শব্দের ফলে জেগে উঠেছিল। নিজেদেরকে আহত এবং মৃতদের দ্বারা বেষ্টিত দেখতে পেয়েছিল। তাদের এখন খুঁজতে হচ্ছে, সন্তান আর প্রিয়জনদের।

ইসরাইলি আগ্রাসন নিয়ে কয়েকটি অভিমত
রুয়াইদা আমির, আল-জাজিরায়
আল-জাজিরায় প্রকাশিত গাজার সাংবাদিক রুয়াইদা আমির জানান, কোনো কিছুকেই ছাড়ছে না ইসরায়েলি বোমা, সন্তান জন্ম দেবে কোথায়? ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজা বিগত ১৬ বছর ধরে অবরোধ করে রেখেছে ইসরায়েল। সম্প্রতি ইসরায়েলে হামাসের আকস্মিক হামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ অক্টোবর থেকে অবরুদ্ধ গাজায় অনবরত বিমান থেকে হামলা করে যাচ্ছে ইসরায়েল। যেন দেশটি পণ করেছে গাজাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেবে। ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের মুহুর্মুহু হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না গাজার কোনো কিছু। বাড়িঘর, গাছপালা, রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, মসজিদ এমনকি নিরীহ পাথরও যেন ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইসরায়েলের এমন হামলায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে গাজার স্বাস্থ্যসেবা। অধিকাংশ হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে আর সেবা দেওয়া উপযোগী নয়। যেগুলো উপযোগী সেগুলোতে উপচে পড়েছে ফিলিস্তিনিদের মরদেহ, প্রতিটি ইঞ্চি দখল হয়ে গেছে আহত রোগীদের দিয়ে। তার পরও শেষ আশা হিসেবে অনেকেই আসছেন হাসপাতালে। আহত এবং তাদের স্বজনেরা জানেন, হাসপাতাল আর হাসপাতাল নেই। পরিণত হয়েছে মরদেহ আর আহতদের ভাগাড়ে। গাজায় ৫০ হাজার গর্ভবতী আছে। তাদের সন্তানদের প্রসব করাবেন কোথায়?

বারাক ওবামা, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট
তিনি তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে লেখাটি শেয়ার করেছেন। থটস অন ইসরায়েল অ্যান্ড গাজা শিরোনামে ওবামার এই লেখাটি ‘মিডিয়াম’-এ প্রকাশিত। ইসরায়েলে হামাসের হামলায় নিরপরাধ নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হওয়ার পর ১৭ দিন পেরিয়ে গেছে। এই অবর্ণনীয় বর্বরতার পর মার্কিন সরকারের মতো দেশের নাগরিকেরাও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে শোকে একাত্ম হয়েছেন, স্বজনদের ফিরে আসার প্রত্যাশায় প্রার্থনা করেছেন এবং ইসরায়েলি জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন। এমন বেপরোয়া সহিংসতা থেকে জনগণকে সুরক্ষা দেওয়ার অধিকার ইসরায়েলের রয়েছে। হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অভিযানে সমর্থন দিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের যে আহ্বান, আমি তার সঙ্গে একমত। যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘকালীন মিত্র ইসরায়েল হামাসের সামরিক সক্ষমতাকে গুঁড়িয়ে দিতে এবং শত শত জিম্মিকে উদ্ধার করে তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে চায়। কিন্তু এত সমর্থনের পরও ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধকৌশল ব্যবহার করছে, সে সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত। বিশেষ করে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন যে কথাটি বারবার জোর দিয়ে বলার চেষ্টা করেছেন, ইসরায়েলের সামরিক কৌশল যেন আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে, যে আইনে বেসামরিক জনগোষ্ঠীর মৃত্যু বা নির্যাতন যত দূর সম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। নৈতিকতার স্বার্থে এবং মানুষের জীবনের যে মূল্য আছে, সেই মূল্যবোধকে তুলে ধরা অত্যন্ত জরুরি। এই মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে আমরা মৈত্রী গড়ি এবং মূল্যবোধের ভিত্তিতেই আন্তর্জাতিক ইস্যুতে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কি তার প্রকাশ ঘটে। এদিকে নজর দেওয়া জরুরি ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তার জন্যই। তিনি বলেন, যাঁরা নৈতিকভাবে দেউলিয়া, তাঁরাই গাজায় নির্বিচার হত্যার পক্ষে।

মরিয়ম আলদোসারি, মধ্যপ্রাচ্যে লিঙ্গ বৈষম্যের বিষয়ক গবেষক
তিনি সম্প্রতি গাজায় ইসরাইলি হামলা এবং হত্যা নিয়ে পশ্চিমা নারীবাদীদের ধারণা নিয়ে আল জাজিরায় লিখেন, পশ্চিমা নারীবাদ এবং মধ্যপ্রাচ্যে এর অন্ধ দাগ। পশ্চিমা নারীবাদীরা ফিলিস্তিনি নারীদের কাছে যে বার্তা পাঠাচ্ছেন তা উচ্চস্বরে এবং স্পষ্ট: ‘আপনাদের কষ্ট কোন ব্যাপার না’। ৭ অক্টোবর থেকে, এই “নেতৃস্থানীয় নারীবাদীরা” এই সব-গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল ল্যান্ডস্কেপে বোমাবর্ষণ করছে ইসরায়েলের উপর হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়ে পোস্ট দিয়ে, যখন গাজা উপত্যকায় দুই মিলিয়নেরও বেশি ফিলিস্তিনিদের চলমান সম্মিলিত শাস্তিকে অজুহাত বা উপেক্ষা করে। কেউ কেউ এমনকি ইসরায়েলের নির্বিচারে বোমাবর্ষণ এবং ক্ষুদ্র ছিটমহলের সম্পূর্ণ অবরোধ করার চেষ্টা করে, যা ইতিমধ্যেই ৫,০০০ এরও বেশি পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদের জীবন দাবি করেছে, হামাসের ক্রিয়াকলাপ এবং আইনানুগ “আত্মরক্ষা” এর গ্রহণযোগ্য প্রতিশোধ হিসাবে। আমি আশা করি এটি আপনার বিবেকের উপর চাপ বাড়াবে। যেকোন মূল্যে ইস্রায়েলের “আত্মরক্ষা” করার অধিকারকে সমর্থন করে, আপনি নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন – যে জনসংখ্যার আপনি চ্যাম্পিয়ন দাবি করেন। ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্দশাকে উপেক্ষা করে, যারা তাদের সংগ্রামকে সমর্থন করার সাহস করে তাদের প্রত্যেককে “এন্টি-সেমেটিক” এবং “নারী-বিরোধী” হিসাবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করে, আপনি এটি স্পষ্ট করে দিচ্ছেন যে সমস্ত জীবন – সমস্ত মহিলা নয়-একই ধারণ করে। আপনার চোখে সবার জীবনের মূল্য এক।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে