লেখকঃ সুরোত আলী বিশ্বাস, চাকদহ, নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

তুমি কাউকে কতটা ভালবাসা তা নির্ভর করে তুমি তার জন্য কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করতে পারো তার উপর।ভালবাসা নিয়ে এমনই উপলব্ধি ছিল সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের। ত্যাগের মধ্য দিয়ে আত্নত্যাগই যে সর্বশ্রেষ্ঠ ত্যাগ তা ব্লাই বাহুল্য। যার বলিষ্ট উদারহণ বাংলাদেশের মাতৃভাষার জন্য আন্দোলন। শুধু নিজের মাতৃভাষাকে ভালবেসে উর্দুভাষাপন্থী পাকিস্থানী পুলিশের বন্দুকের নল্কে অগ্রাহ্য করে সালাম, বরকত, রফিকরা নিজেদের প্রান বিসর্জন দিতে কুণ্ঠিত হননি।

আপামর বাংলাদেশিদের অন্তরে সালাম, বরকত, মশিউর, রফিকরা আজও অমালিন। তাই তো ২১’শে ফেব্রুয়ারীর উদযাপনে তাদের আবেগ উম্মাদনা চোখে পড়ার মতো এবং ইউনেস্কো ১৯৫২ সালের ২১’শে ফেব্রুয়ারীর মাতৃভাষা ঐ আন্দোলনের গুরুত্ব পর্যালোচনা করে ১৯৯৯’সালে ২১’শে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষনা করে। ফলস্বরূপ ২০০০’সালের ২১’শে ফেব্রুয়ারী থেকে সারা বিশ্বে ২১’শে ফেব্রুয়ারীর দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে শ্রদ্ধার সাথে পালিত হচ্ছে।

ভারতবর্ষের অন্যতন অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্তে ছুঁয়ে যার অবস্থান। বাঙালীরাই এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে মনে রাখতে হবে, হিন্দি, উর্দু, পাঞ্জাবি, গুজরাটি, মারাঠি, তামিল, কন্নড়’সহ আরও অনেক ভাষাভাষীর দেশ ভারতবর্ষ। তাই ভারতবর্ষের অঙ্গরাজ্য হওয়ার সুবাদে ঐ সমস্ত ভাষার প্রভাব পশ্চিমবঙ্গেও পড়বেই সেটাই স্বাভাবিক। তাই বলে নিজস্বতাকে ভুলে যাবে বাঙালী? বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ তথাকথিত শিক্ষিত পিতামাতা গর্ব করে বলে, জানেন তো আমার বাচ্চার বাংলা ঠিক আসে না তবে ইংরেজিটা খুব ভাল বলে। এমন ভুয়ো অহংকারই বলে দেয় নিজের ভাষা প্রতি তাদের মমত্ববোধের গভীরতা।

জাতীয় স্তরে চাকরী-বাকরীর ক্ষেত্রে ইংরেজি জানা ছেলে-মেয়েদেরই প্রধান্য। তাই পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষানবিস থেকে শিক্ষিত ছেলে-মেয়েরা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য ইংরেজিকেই বেশি করে আঁকড়ে ধরতে উদগ্রীব।এতোসব নেতিবাচক দিকের মধ্যেও কিন্তু ইতিবাচক দিক গুলিও পশ্চিমবঙ্গে বেশ উজ্জ্বল। যা নাকি মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধার বহর চিহ্নিত করে। আজ পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সকল সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অমর ২১’শের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হয়। এই সমস্ত উদযাপনে মাতৃভাষা বিষয়ক সভা-সেমিনার ছাড়াও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে শোভাযাত্রা বের করে। ছাত্র-ছাত্রীদের সম্বেত কন্ঠে “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী” গানটি আকাশ বাতাসকে উদবেলিত ও ভারাক্রান্ত করে তোলে। পথ চলতি প্রবীণরা স্মৃতিমধুর হয়ে পড়ে।

পশ্চিমবঙ্গের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূল অনুষ্ঠানটি হয় কলকাতার বাংলা একাডেমি সংলঘ্ন নন্দন চত্বরে। এই অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী তার ক্যাবিনেটের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, বকুল সুপ্রিয়(গায়ক), ইন্দ্রানীল সেন(গায়ক), প্রভৃতিদের নিয়ে উপস্থিত হন এবং অমর একুশের শহীদ বেদিতে পুস্পার্ঘ্য নিবেদন করেন। এই অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের নামজাদা একাধিক শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কবি জয়গোস্বামী, কবি ও গীতিকার শ্রজাত, চিত্রকর শোভাপ্রসন্ন, সাহিত্যিক আবুল বাসার, চিত্র পরিচালক রাজ চক্রবর্তী প্রমুখ।

কলকাতাস্থিত বাংলাদেশের ডেপুটি হাই-কমিশনার আন্দালিব ইলিয়াসের উদ্যোগে কলকাতার রাজপথে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের এক বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। এছাড়াও কলকাতার বাইরে অনেক শহরে সরকারী ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে শ্রদ্ধার সাথে আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হয়। যার মধ্যে বনগাঁ কল্যাণী কৃষ্ণনগর শহর উল্লেখযোগ্য।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে