রিপোর্ট- রাবেয়া শিকদার অর্পা।। প্রতি বছরের মত এবারেও শুরু হয়েছে ঈদ-উল-আযহার শোরগোল। শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকাতেই কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত ২১’টির মত পশুর হাট শুরু হয়েছে যার মধ্যে ১১’টি হাট ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং ১০’টি হাট ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত। যদিও কোভিড-১৯’র ভয়াবহ প্রকোপ থামাতে সবাইকেই হাটে না গিয়ে অনলাইন প্লাটফর্ম ‘ডিজিটাল হাট’ থেকে গরু কিনতে উৎসাহীত করা হচ্ছে। সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী এই হাটগুলোর কার্যক্রম ২১’শে জুলাই পর্যন্ত চলমান থাকবে।

দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশন নিশ্চিত করেছে যে, এই হাটগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। হাইজিন এবং সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী হাটের কার্যক্রম চলবে বলেও তারা নিশ্চিত করেছে। প্রতিবছরই প্রায় লাখ লাখ পশু কোরবানির মাধ্যমে ঈদ-উল-আযহা পালন করা হলেও ধর্মীয় এবং সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিও যে অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ তা কিন্তু বলার অপেক্ষা রাখে না। কোরবানির পশুর রক্ত, চামড়া এবং আনুসঙ্গিক বর্জ্য যাথার্থ সময়ে নিষ্কাশন করতে না পারলে তা থেকে ছড়াতে পারে বিভিন্ন জীবনঘাতী জীবাণু। সরকারের দুই সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্ব’পুর্ন।

রাজধানী’র হাটগুলোর পরিবেশ খুবই অপরিচ্ছন্ন থাকে যা করোনাকালীন সময়ে বয়ে আনতে পারে অপরিসীম দুর্ভোগ। হাটগুলো বদ্ধ জায়গার বদলে খোলা জায়গায় বসার ব্যবস্থা থাকতে হবে। মহামারীর প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিটি হাটেই যাথাযথ সামগ্রী যেমন মাস্ক, সাবান, জীবাণুনাশক স্প্রে ইত্যাদি সংগ্রহ করে রাখতে হবে। মাস্ক পরিধান ছাড়া কোন ক্রেতা-বিক্রেতা যাতে হাটে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে যথেষ্ট নজরদারির ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনে জরিমানা ধার্য করা যেতে পারে। একটি পশু থেকে আরেকটি পশুর দূরত্ব কমপক্ষে কমপক্ষে দুই অথবা তিন ফুট বজায় রাখতে হবে। অনেক পরিবারেই পাঁচ থেকে ছয়জন হাটে গরু কিনতে ও দেখতে যান। এ বিষয়টি এবার মহামারী বিবেচনায় স্থগিত রেখে প্রতি পরিবার থেকে একজন অথবা দুইজন হাটে গেলে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন এবং ভীরমুক্ত থাকবে। এছাড়া মূল্য পরিশোধ এবং হাসিল আদায়ের কাউন্টার সংখ্যাও বৃদ্ধি করা যেতে পারে। পশু হাটে প্রবেশ এবং নির্গমের জন্য দুইটি পৃথক গেটের ব্যবস্থা করতে হবে। পশু সংক্রান্ত সকল বর্জ্য আলাদা ভাবে এবং যথাযথ উপায়ে নিষ্কাশন করতে হবে, যাতে কোনভাবেই কোভিড-১৯ জনিত বর্জ্যের সাথে তা মিশে না যায়। হাট কমিটি, স্থানীয় প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এসব বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।

কোরবানি পরবর্তী বর্জ্য যথাযথ উপায়ে নিষ্কাশিত না হলে তা ভয়াবহ রুপ ধারণ করতে পারে। পশুর জবাই করা রক্ত যাতে যেখানে সেখানে জমে না থাকে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে, এসব তরলজাতীয় বর্জ্য কোরবানির সাথে সাথে পানি দিয়ে ধুয়ে কোন নর্দমায় বাহিত করতে হবে যাতে জমে থাকা রক্ততে মশা মাছি জন্মাতে না পারে। এছাড়া পশুর রক্ত শুকিয়ে বাতাসে মিশে যেতে পারে এবং পরবর্তীতে তা খাদ্যচক্রেও প্রবেশ করতে পারে। পশুর হাড়, লেজ, কান, মাথার খুলি এবং অন্যান্য অবশিষ্টাংশ অবশ্যই নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ কোরবানির ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ময়লা সরিয়ে বেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছে।

আমাদের দেশে যত্রতত্র কোরবানির ব্যবস্থা থাকলেও সৌদি আরব, মালয়েশিয়াসহ বেশ কিছু দেশে এই কার্যক্রম মসজিদ অথবা লাইসেন্সপ্রাপ্ত জবাইখানায় সম্পন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে কোরবানি কার্যক্রম চালানোর জন্য বাসা-বাড়ির সামনের আঙ্গিনা এবং খালি জায়গা বাছাই করা হয় যা জীবাণু ছড়ানোর আরেকটি বড় কারণ। কোরবানি কার্যক্রম একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সম্পন্ন করার ব্যাপারটিও বিবেচনায় রাখা যেতে করে। এতে করে আমরা উৎসবটি পরিবেশ বান্ধব করে তুলতে পারব।

রোগ-বালাই’র সংক্রমণের পাশাপাশি বায়ু, পানি ও মাটি এই তিনটি মৌলিক উপাদানের দূষণের জন্য দায়ী পরিকল্পনাবিহীন কোরবানি কার্যক্রম। কোরবানির ঈদ প্রতিটি মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছেই অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ৷ মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ পশু কোরবানির মাধ্যমে তাঁদের ত্যাগ ও আত্মশুদ্ধির বার্তা দিয়ে এই উৎসবকে আরও মহিমান্বিত করে তুলেন। ত্যাগ ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলেও পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি কিন্তু আমরা অনেকেই ভুলে বসে থাকি। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে কোরবানি দিলে পরিবেশ দূষণ ঘটতে পারে, যা সামাজিক এবং ধর্মীয় উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে অগ্রহণযোগ্য। তাই এই মহামারী সময়ে যথাযথ উপায়ে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ-উল-আযহা পালন করা নগরবাসীর অবশ্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে