শহিদুল ইসলাম দইচ, যশোর সংবাদদাতা।। গত কয়েক দিনে যশোরে লাগাতার তাপদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। প্রচণ্ড তাপমাত্রার কারণে যশোরের বিভিন্ন স্থানে মহাসড়কের বিটুমিন গলে গলে যাচ্ছে। ডায়রিয়াসহ গরমজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ জানান, আজ রবিবার বেলা তিনটায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৩০ শতাংশ। আগামী দুই তিন দিন পর বৃষ্টি হতে পারে।

এর আগের দিন শনিবার তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রতিদিন বেলা বাড়ার সাথে সাথে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। তীব্র তাপদাহে জনশূন্য হয়ে পড়ে সড়কগুলো। মানুষের উপস্থিতি যেমন কম, তেমনি যানবাহনের উপস্থিতিও কম। শহরের মুজিব সড়কে রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন চালক প্রশান্ত দাস। তিনি বলেন, বেলা এগারোটা পর্যন্ত যাত্রী পাওয়া যায়। এরপর থেকে রাস্তা জনশূন্য হয়ে যায়। উপরে সূর্যের যেমন তাপ, তেমনই নিচে রাস্তা থেকেও উঠে আসে ভ্যাপসা গরম। সন্ধ্যার আগে আর যাত্রী মিলবে না। প্রচণ্ড গরমে নিজের শরীরও হাঁসফাঁস করে। চৌগাছা থেকে খুব সকালে ৬০ কেজি পেয়ারা এনে সাইকেলে নিয়ে বিক্রি করছেন ঝিকরগাছা উপজেলার বারাকপুর গ্রামের সোহেল রানা। বেলা দেড়টা পর্যন্ত তিনি ২০-২৫ কেজি মতন পেয়ারা বিক্রি করতে পেরেছেন। তিনি জানান খুব গরমের কারণে রাস্তায় লোকজন নেই; সেই কারণে বেচাবিক্রিও হচ্ছে না। যশোর জেনারেল হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় রোগী ভর্তি হয়েছে ২৪ জন। আগের রোগী মিলিয়ে বর্তমানে রয়েছে ২৮ জন। এরমধ্যে শিশু ১২, নারী আর এবং পুরুষ ৯ জন। শিশুদের মধ্যে তিনজন হাম, পক্স ও টিটেনাস আক্রান্ত। অন্য সবাই ডায়রিয়া রোগী। হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স হোসনেআরা খাতুন এ তথ্য দিয়েছেন। যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার আব্দুস সামাদ বলেন, এই গরমে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শ্বাসকষ্ট ডায়াবেটিস হার্ট ও কিডনি রোগী। গরমের কারণে বেশির ভাগ শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছে। এই গরমে স্ট্রোক স্ট্রোক ডায়রিয়া নিউমোনিয়া প্রভৃতি রোগে মানুষ আক্রান্ত হয়।

রোদে বাইরে বের হলে ছাতা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে ডাক্তার আব্দুস সামাদ বলেন, সকলের উচিত সুতির ঢিলাঢালা পোশাক পরিধান। এখন প্রচুর পরিমাণে পানি, ডাবের পানি, স্যালাইন, দেশি ফলমূল এগুলো খাওয়া। পঁচা ও বাসি খাবার যেন কেউ না খায়। এদিকে, লাগাতার তাপদাহে যশোরে বিভিন্ন মহাসড়কের বিটুমিন গলে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে কথা হয় সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহবুব হায়দার খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাস্তার বিটুমিন গলে যাচ্ছে মূলত তাপমাত্রার কারণেই। গত কয়েকদিন ধরে যশোরে প্রচণ্ড তাপমাত্রা বিরাজমান। এই তাপমাত্রায় রাস্তার কোথাও কোথাও বিটুমিন গলে যাচ্ছে এমন খবর আমাদের কাছে রয়েছে। যশোর সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে সহনীয় সড়কে ৮০/১০০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়। পরে আরও বেশি তাপমাত্রা সহনশীল সড়কে ৬০/৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু কিছু রাস্তা বেশ কয়েক বছর আগে তৈরি। সেখানে মূলত ৮০/১০০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে। সেকারণেও এগুলো গলে যেতে পারে।

গত ১৯ এপ্রিল যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগেরদিন বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৭ এপ্রিল ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ১৬ এপ্রিল তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে