রাশেদুল হাসান কাজল, ফরিদপুর সংবাদদাতা।। ‘অতিরিক্ত গতি, চালকের ঘুম ঘুম ভাব, বাসের সামনে ইজিবাইক ও মধ্যরেখা অতিক্রম করায় ঘটে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা’। ফরিদপুরের কানাইপুরের দিগনগর এলাকায় গত ২৬ এপ্রিল বাস ও পিকআপ ভ্যানেরমধ্যে সংঘর্ষে ১৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

এ প্রতিবেদনটি জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসানের কাছে দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করায় এ সাত সদস্য বিশিষ্ট গঠিত এ তদন্ত কমিটির সভাপতি ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী দুর্ঘটনার কারণ এবং এ বিষয়ে তাদের সুপারিগুলি অবহিত করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে কারন হিসেবে বলা হয় বাস ও পিকআপ উভয়েই অতিরিক্ত গতিসম্পন্ন ছিল। উভয় যানই সড়কের মধ্যরেখা অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে বাস কম এবং পিকআপ মধ্য রেখা বেশি লংঘন করেছে। প্রতিবেদনে কারন হিসেবে বলা হয়, বাসটি চট্টগ্রাম থেকে আসছিল। টানা দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়ায় চালক ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম অবস্থায় ছিলেন। বাসের সামনে একটি ইজিবাইক ছিল। এই ইজি বাইককে পাশ কাটাতে গিয়ে বাসটি মধ্য রেখা অতিক্রম করে কিছুটা আড়াআড়ি হয়ে যায় ওই সময় সামনের দিক থেকে দ্রুতগতির পিকআপ বাসটির সামনের দিকে আঘাত করলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তদন্ত কমিটির সভাপতি এডিএম মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী তাদের দেওয়া এ প্রতিবেদনকে ‘প্রাথমিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, আমরা ওই বাস চালকের পরিবারের সাথে কথা বলবো। তিনি মানসিক ভাবে কেমন ছিলেন, পারিবারিক কোন সমস্যা ছিল কিনা, একটানা কয়দিন বাস চালাচ্ছিলেন এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করবো। তিনি বলেন, পাশাপাশি এ তদন্ত কমিটির জন্য বুয়েট এর প্রতিনিধি আরমানা সাবিহা হক গত রবিবার ফরিদপুরে এসেছেন। তাকে নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। তিনি সড়কের বিভিন্ন স্কেচ ম্যাপ করাসহ টেকনিক্যাল বিষয়গুলি দেখছেন। পাশাপাশি রয়েছে আরও বিশেষ কাজ। তাই এ দুর্ঘটনার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে আরও বেশ কিছু সময় লাগবে।

প্রাথমিক ওই তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনা রোধে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় ভাবে দূল পাল্লার বাসের গতি নিয়ন্ত্রণ করা। যে কাজটি গোল্ডেন লাইনসহ বিভিন্ন পরিবহন ইতিমধ্যে শুরু করেছেন। সড়কের বাঁকের আগে সর্তককরণ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া এবং বঁকের জায়গায় ঢাকা-আরিচা সড়কের মত সড়কে ডিভাইডার দেওয়া। ফিটনেস বিহিন ও লাইসেন্স নবায়ন ছাড়া বাস যাতে মহা সড়কে চলাচল করতে না পারে সেজন্য নিয়মিত মহা সড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা। মহা সড়কে অযান্ত্রীক যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করা এবং বাস চালকদের নিয়মিত ডোপ টেস্ট করা ও চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। এ তদন্ত কমিটিতে এডিম ও বুয়েটের প্রতিনিধি ছাড়াও অন্যদের মধ্যে ছিলেন, ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো.সালাহউদ্দীন, হাইওয়ে পুরিশের সহকারি পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইমরান সুমেল, বিআরটিএর সহকারি পরিচালক মো. এমরান খান ও দমকল বাহিনীর সহকারি পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পরিপূর্ণ ভাবে সাংবাদিকদের হাতে তুলের দেওয়ার সুযোগ নেই। তদন্তে কি পাওয়া গেছে এবং তার কি সুপারিশ তা মৌখিক ভাবে প্রকাশ করা হয়। এদিকে মুখোমুখি ওই সংঘর্ষে ১৫ জন নিহতের ঘটনার সেই বাস চালককে আটক করেছে র‍্যাব-১০ ফরিদপুর ক্যাম্পের সদস্যরা। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় ফরিদপুর র‍্যাব ক্যাম্পে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তথ্য জানান কোম্পানি কমান্ডার লেঃ কমান্ডার কে এম শাইখ আকতার। আটক চালকের নাম খোকন মিয়া। সে ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর থানার বাজে বামুনদাহ গ্রামের মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের পুত্র।

সাংবাদিক সম্মেলনে  লেঃ কমান্ডার কে এম শাইখ আকতার জানান, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে রোববার দুপুরে তাকে আটক করা হয়। তিনি আরো জানান, দুর্ঘটনার আগের রাতে ওই চালক রাত নয় টা থেকে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনা দিনে ঘুম চোখে নিয়ে গাড়ি চালানোয় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেন তিনি। এছাড়া গাড়িটি দ্রত গতিতে ছিল বলেও উল্লেখ করেন শাইখ আখতার।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে