দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত নিয়ে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে এক ধরনের পাল্টাপাল্টি অবস্থান প্রকাশ্যে আসছে। তেমনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ক্যাম্পেইন নিয়ে পাল্টাপাল্টি তর্ক বিতর্ক এবং সমালোচনা জোরালো হচ্ছে।

ভারতবিরোধী রাজনৈতিক অবস্থান কেন নিয়েছেন এমন প্রশ্নের ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর গণমাধ্যমকে বলেন, ভারত যেভাবে বাংলাদেশকে বিশেষ করে গত পনেরো বছর দেখে আসছে এইটা ঠিক না। ভারত যদি একপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলে তখন আমাদের ভারত বিরোধী হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নাই। জনগণের প্রতি জনগণের একটা শ্রদ্ধা ভালোবাসা সম্মানের সম্পর্ক আমরা সবসময় তৈরি করতে চাই। তিনি বলেন, মোটামুটি ভারতের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যা নেয়া দরকার-বন্দর, ট্রানজিট সেটা কিন্তু ভারত নিয়েছে। কাজেই এখন অন্তত ভারত সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একটা সুসম্পর্ক গড়ে তুলবে এবং জনগণের চাওয়াকে প্রাধান্য দেবে কিন্তু এই নির্বাচনে আমরা এর বিপরীত চিত্রটা দেখলাম। অবশ্য এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল সরাসরি ভারতবিরোধী আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না করলেও ছোটখাট দল বা সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে ভারত বিরোধী ব্যানার, প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করতে দেখা যাচ্ছে।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এ বিষয়ে বলেন, ভারত বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক করছে না, একটি দলকে সমর্থন দিচ্ছে। প্রধানত ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই এবং তাদের দোসর যারা, সঙ্গী যারা তাদের বিরুদ্ধে লড়াইটা আমরা আপসহীনভাবে করবো। এদিকে নির্বাচনের পর বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে ভারতবিরোধীতার বিষয়টি অনেকটা স্পষ্ট হয়েছে। দলটির কেন্দ্রীয় নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপি ভারত বিদ্বেষী নয়, একটি জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং জাতীয় স্বার্থের কথাগুলোই তুলে ধরছে। তিনি আরও বলেন, একটা দেশ যদি আমার ক্ষতি করে, সেই ক্ষতির কারণগুলো যদি আমি দেশের জনগণের সামনে উপস্থাপন করি তাহলে আপনি আমাকে ভারত বিরোধী বলবেন কেন? আমি কি আমার দেশের স্বার্থের কথা বলবো না? ভারত যে আওয়ামী লীগকে পৃষ্ঠপোষকতা করে এটাতো সবাই জানে। আমরা আশা করবো ভারত বাংলাদেশের সাথেই সম্পর্ক করবে কে সরকারে আসলো সেটা তাদের দায়িত্ব না।

বিএনপির রাজনীতিতে ভারত বিরোধী অবস্থান প্রসঙ্গে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারত বিরোধিতা বাংলাদেশের বড় অংশের মানুষের মধ্যে আছে। সেটাকে তারা (বিএনপি) তো কাজে লাগাতে চাইবে। ভারত আওয়ামী লীগকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে এবং দেবে, কাজেই স্পষ্ট যে তারা ভারতের গুডবুকে বিএনপি নেই বা ভারত তাদের সমর্থন করবে না। সেটা ধরে নিয়েই তাদের রাজনীতি করতে হবে।

আওয়ামী লীগের অবস্থান
ভারতের সঙ্গে বরাবরই সুসম্পর্কের ইতিহাস রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। নির্বাচন পরবর্তী সরকার গঠনের পর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরের জন্য ভারতকেই বেছে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দলটির নীতি নির্ধারকরা বলেছেন আগামী দিনে ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে এবং আরো বিকশিত হবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য-অর্থনীতি পরস্পর নির্ভরশীল। ভারতের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক সেই সম্পর্কের কারণে আমরা উভয় দেশ উপকৃত হই।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকার জন্য ভারতকে সুবিধা দিচ্ছে এবং স্বার্থ আদায় করতে পারছে না এমন সমালোচনা সঠিক নয় বলে দাবি করেন ড. রাজ্জাক। এদিকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত বিরোধ মিটলেও সীমান্তে হত্যা থেমে নেই, ফেনী নদীর পানি ভারতকে দিতে বাংলাদেশ চুক্তি করলেও তিস্তা চুক্তি হয়নি।/সূত্র:বিবিসি বাংলা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে