আয়কর আইন মানতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনীহা বিপাকে ফেলছে বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে। বাধ্যতামূলক হলেও আয়কর রিটার্ন দেয় না টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ (বিটিআরসি) তিন সরকারি প্রতিষ্ঠান। ফলে বিল পরিশোধের সময় কোম্পানিগুলোকে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র বা পিএসআর দিতে পারছে না এসব সংস্থা। আর পিএসআর না পাওয়ায় অতিরিক্ত করের ভার পড়ছে এসব কোম্পানির ওপর। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দারস্থ হয়েছে মোবাইল ফোন অপারেটররা।

আয়কর আইন অনুযায়ী, কোনো কোম্পানি যখন অন্য কোনো কোম্পানিকে বিল দেয়, তখন নির্দিষ্ট হারে বিলের অর্থ উৎসে কর হিসেবে কেটে রেখে এনবিআরে জমা দেওয়ার কথা। তবে শর্ত হলো, বিল গ্রহণকারী কোম্পানির আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র নেবে প্রদানকারী কোম্পানি। আর যদি বিল গ্রহণকারী কোম্পানি পিএসআর দিতে না পারে, সেক্ষেত্রে করের ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত কেটে রাখতে হবে। নতুন আয়কর আইন কার্যকর হওয়ার পর বিটিআরসি, নির্বাচন কমিশন ও রেলওয়েকে বিল পরিশোধ করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছে মোবাইল অপারেটররা। কারণ এসব সংস্থা আয়কর রিটার্ন জমা দেয় না। তাই পিএসআরও দিতে পারছে না। সমস্যা সমাধানে এরই মধ্যে বিটিআরসির সঙ্গে বৈঠক করেছে মোবাইল ফোন অপারেটররা। বৈঠকে বিটিআরসি জানায়, তাদের কোনো আয়-ব্যয় নেই। তারা শুধু সরকারের হয়ে রাজস্ব সংগ্রহ করে। তাই রিটার্ন দেয়ার বিধান তাদের জন্য নয়। এমন পরিস্থিতিতে আইনের ব্যাখ্যা চেয়ে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে অপারেটররা।

মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, ‘বিটিআরসির কমিশনারের সাথে আমরা কথা বলেছি। তাদের সাথে কথা বলে একটা চিঠিও আমরা প্রেরণ করেছি। তৃপক্ষীয় একটি আলোচনার মাধ্যমে আমরা এনবিআর থেকে সুনির্দিষ্টভাবে এটার জন্য একটা ব্যাখ্যা প্রয়োজন হবে। সেক্ষেত্রেই কেবল মাত্র আমরা যে ঝুঁকির মধ্যে আছি সেটা হয়ত আমরা মোবাবেলা করতে পারব।’

এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, আয়কর আইন অনুযায়ী সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, স্বায়ত্বশাসিত সংস্থাগুলো কোম্পানি। আর প্রতিটি কোম্পানিকেই আয়কর রিটার্ন দিতে হবে। কর্মকর্তারা জানান, আদেশ জারি করে কোনো সংস্থাকে যদি এনবিআর অব্যাহতি দেয়, তবেই তারা রিটার্ন দেয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি পাবে। এনবিআর সদস্য মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আয়কর আইনের প্রাথমিক ব্যাখ্যা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডই দেবে। এবছর জাতীয় সংসদে যে আইনটা পাস হয়েছে আয়কর আইন-২০২৩ তাতে করে সংবিধিবদ্ধ সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিটিআরসিকে যদি বিবেচনা করা সুযোগ থাকে, যদি তার আইন তাকে এটাই বলে তাহলে অবশ্যই তাকে রিটার্ন দিতে হবে। সমস্যা সমাধানে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার পরামর্শ দিয়েছেন এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তারা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে