মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে মঙ্গলবার থেকে আবারও শুরু হয়েছে চা শ্রমিকদের ধর্মঘট। এদিকে চা পাতা উত্তোলন না করায় লাখ লাখ কেজি কচিপাতা বড় হয়ে গুণগত মান হারানোর পথে। পাতা উঠানো না হলে কোটি কোটি টাকার লোকসানে পড়বেন বাগান মালিকরা। বিষয়টি সুরাহার লক্ষে মঙ্গলবার সকালে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের বৈঠকে ডেকেছে শ্রম অধিদপ্তর।
বৈঠকে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী (এনিডিসি) উপস্থিত থাকবেন বলে জানান শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাহিদুল ইসলাম। আরেকটি বৈঠক মঙ্গলবার বিকালে বাংলাদেশীয় চা সংসদ বিটিএ’র সাথে চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের মধ্যে হতে পারে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। এ’ব্যাপারে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ পরেশ কালিন্দি জানান, তারা শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের চিঠি পেয়েছেন এবং বৈঠকে বসবেন। তবে তদের কর্মবিরতি চলবে। আলোচনায় মানসম্মত একটি মজুরি পেলে তারা সাথে সাথে কাজে যোগদান করবেন।
শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাহিদুল ইসলাম জানান, চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে আলোচনা ফলপ্রসূ হলে পরবর্তিতে মালিক পক্ষের সাথে আলোচনায় মিলিত হতে পারেন ডিজি। তিনি আরও জানান, শিল্প বিবাদ দেখা দিলে শ্রম অধিদপ্তর এগিয়ে এসে তা সমাধানের চেষ্টা করেন। শিল্প বন্ধ থাকলে বা মালিক-শ্রমিক যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হন, তেমনি সরকারও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হন। বিভিন্ন চা বাগানে সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, কচি পাতা অনেক বড় হয়ে গেছে এবং নতুন কুড়ি গজাচ্ছে। কোথাও কোথাও চা গাছে গজিয়ে উঠছে পরগাছা। এতে এক রাউন্ড পাতা নষ্ট হওয়ার পথে। এ’সময় পুটিয়া ছড়া চা বাগানের শ্রমিক শকুনতলা জানান, চা পাতা বড় হয়ে নষ্ট হচ্ছে, এতে আমাদের চেয়ে কষ্ট অন্য কারোর হওয়ার কথা না। কারণ এই পাতাই আমাদের জীবন। এই পাতাই প্রতিদিন তুলি এটি আমাদের জীবনের অংশ।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. রফিকুল হক ও বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. ইসলাম হোসেন জানান, কচি পাতা থেকেই ভালো চা হয়। বড় পাতায় চায়ের গুণগত মান কমে যায়। তাই কচি পাতাই সব সময় প্লাকিং করা হয়। এদিকে, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালী।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ চা সংসদের মধ্যে প্রতি দুই বছর পর পর সমঝোতা চুক্তি হয়। এই চুক্তিতে বেতন ভাতা বৃদ্ধি হয়। কিন্তু চুক্তির মেয়াদ অতিক্রান্ত হয়ে ১৯ মাস চলে গেলেও আর কোনো চুক্তি হয়নি। তাই মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘটে নেমেছে চা শ্রমিকরা। শ্রমিক নেতারা বলছেন, মানসম্মত মজুরির প্রস্তাব পেলে তারা আন্দোলন থেকে সরে আসবেন।