জহির সিকদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি।। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ভারী বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে হাওড়া নদীর বাঁধ ভেঙ্গে ৩০ গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দি হয়েছে ৬ হাজারের বেশি পরিবার।
পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ । স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রশাসন সূত্র জানা যানা গেছে, শুক্রবার (১৭ জুন) সকাল থেকে টানা ভারী বর্ষণ ও ত্রিপুরার উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আখাউড়া উপজেলার হাওড়া নদীর বাঁধ ভেঙে এবং স্থলবন্দর এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে চলা কালন্দি খাল দিয়ে ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানি হু হু করে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।
শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া টানা ভারী বর্ষণ ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের স্রোতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার সীমান্ত ঘেষা ৩০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে ৬ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আকস্মিক এ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নানা ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। আকস্মিক এই বন্যা মোকাবেলায় একটি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং প্রশাসন তা মোকাবেলা করতে প্রস্তুত আছে বলে জানান জেলা প্রশাসক শাহগীর আলম ও স্থানীয় মনিয়ন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মাহবুবুল আলম চৌধুরী দ্বীপক।
ইতিমধ্যেই বন্যাকবলিত আখাউড়া স্থলবন্দর সংলগ্ন দক্ষিণ ইউনিয়নের কালিকাপুর ও আবদুল্লাহপুর গ্রামের ৯০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদেরকে স্থানীয় আব্দুল্লাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কয়েকটি পরিবারকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। শনিবার ভোরে আখাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী মনিয়ন্দ ইউনিয়নের কর্নেল বাজার সংলগ্ন আইড়ল এলাকায় হাওড়া নদীর বাঁধ ভেঙ্গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন মনিয়ন্দ ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম চৌধুরী দীপক। তিনি জানান, পানির প্রবল তোড়ে বাঁধ সংলগ্ন পিচ সড়কও ভেসে গেছে।পার্শ্ববর্তী মোগড়া ইউনিয়নের নিলাখাদ গ্রামসহ মনিয়ন্দ ইউনিয়নের আইড়ল, ইটনা, খারকুট, বড় লৌহঘর,ছোট লৌহঘর ও বড় গাঙ্গাইল গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামগুলোতে থাকা অনেক পুকুরের মাছ পানির তোড়ে ভেসে যাওয়ায় মৎস্য চাষীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। হঠাৎ করে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় সীমান্তবর্তী এসব গ্রামের মানুষেরা বিপাকে পড়েছেন। গ্রামগুলোর নিচু বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে অনেক মানুষ। দ্রুত এই ভাঙ্গা বাঁধ মেরামত করতে না পারলে গোটা এলাকা প্লাবিত হয়ে যাবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও মনিয়ন্দ ইউনিয়নের একমাত্র বিএডিসি প্রজেক্টটি পানির তোরে নষ্ট হয়ে গেছে।উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা মোগড়া ইউনিয়ন ও দক্ষিণ ইউনিয়নের আখাউড়া-আগরতলা সড়কের দু’পাশের কালিকাপুর, বীরচন্দ্রপুর, আবদুল্লাহপুর, বঙ্গেরচর, রহিমপুর, সাহেবনগর, খলাপাড়া, উমেদপুর, সেনারবাদী, কুসুমবাড়ি,আওরারচর,ছয়ঘরিয়া, বাউতলা, দরুইন, বচিয়ারা, নোয়াপাড়া, নিলাখাত, টানুয়াপাড়া, ধাতুরপহেলা, চরনারায়নপুর ও আদমপুরসহ ত্রিপুরার পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার মনিয়ন্দ ও ধরখার ইউনিয়নের ভাটামাথা, চন্দ্রপুর, ধরখার গ্রাম, ভিনাউটি, ভবানীপুর, রুটি, খারকুট, মিনারকুট, পদ্মবিল, টনকি, ইটনা, কর্নেল বাজারের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এতে কৃষকের সবজি ক্ষেত, ফসলি রোপা ধানের জমিসহ ঢলের পানিতে পুকুর তলিয়ে ভেসে গেছে মাছ।ইতোমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক’শ পরিবার। অতিবৃষ্টির কারণে শুক্রবার রাত থেকে ত্রিপুরা রাজ্যের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। ওপারের পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার সীমান্তবর্তী চারটি ইউনিয়নের মধ্যে মোগড়া ও দক্ষিণ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কার্যালয় ও কাস্টমস হাউজ।এদিকে আখাউড়া-আগরতলা সড়কের বন্দর এলাকার কিছু অংশেও উঠেছে পানি। তবে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। আখাউড়া স্থলবন্দর এলাকায় সিএন্ডএফ এজেন্ট ও আমদানি আমদানি-রপ্তানিকারক বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অংগ্যজাই মারমা বলেন, আকস্মিক এ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে প্রস্ততি নিয়েছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাৎক্ষণিক কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তারা এটি দেখছেন।এদিকে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার খবর পেয়ে সকালে জেলা প্রশাসক শাহগীর আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অংগ্যজাই মারমা, সহকারী কমিশনার ভূমি প্রশান্ত চক্রবর্তী, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মুরাদ হোসেন, স্থানীয় মনিয়ন্দ ইউনয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম চৌধুরী দ্বিপক, ওয়ার্ড মেম্বার একেএম নিয়াজি, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী খালেকুজ্জামান আলমগীর ভূইয়া পানিতে তলিয়ে যাওয়া গ্রামগুলো পরিদর্শন করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে নানা ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন । বন্যা দুর্গতদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র খোলাসহ বন্যার্তদের ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আকস্মিক এ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের খোঁজ খবর নিতেও শুরু করেছেন স্থানীয় প্রশাসন। প্রশাসনের সকলকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতেও বলা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিউজ ডেস্ক।। বিডি টাইমস নিউজ