যান্ত্রিক উপায়ে অপরিকল্পিতভাবে পানি উত্তোলনের কারণে ধীরে-ধীরে নিম্নমুখী হচ্ছে পানির স্তর। ভু-গর্ভের বহুস্তরের মাটি কেটেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের উঁচু এলাকাগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে না খাবার পানি। পাশাপাশি সেচের পানিরও অভাব দেখা দিয়েছে।বরেন্দ্র এলাকাখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরসহ জেলার নাচোল, গোমস্তাপুর, ভোলাহাট এবং শিবগঞ্জ উপজেলার এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে পানির জন্য মানুষের হাহাকার যেন নিত্যসঙ্গী।
স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ভাষ্য মতে, অপরিকল্পিত নলকূপ স্থাপন করে লাগামহীন পানি উত্তোলনের কারণে পানির স্তর ক্রমশ নিচে নেমে যাচ্ছে। অত্যাধুনিক মেশিনে মাটির গভীরে গিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না ব্যবহারযোগ্য পানি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোলাহাট উপজেলার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় সেচ দিতে না পারায় ফাটল ধরেছে জমিতে।
ভূগর্ভস্থ পানির স্তর গত বছরের চেয়ে আরও নিচে নেমে যাওয়ায় শ্যালো মেশিনে উঠছে না পানি। ড্রামে পানি নিয়ে এসে ধানে স্প্রে করছেন কৃষক। পশু-পাখির কল-কাকলীতে ভরে থাকতো ভাতিয়ার বিল। কিন্তু হারিয়ে গেছে সেই সৌন্দর্য্য। চেনার উপায় নেই বিল ভাতিয়াকে। পানির অভাবে যৌবন-যৌলুষ কিছুই নেই। যেখানে থৈ-থৈ পানিতে ফুটে থাকতো পদ্ম। হাজার হাজার মানুষ সেই সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে ছুটে আসতেন, সে জায়গাতে আজ এক চিলতে পানিও নেই। প্রচণ্ড দাবদাহে মাটি ফেটে বিলের চারদিক হাহাকার করছে। শুকনা বিলের কোথাও ঘাস নেই। বিলভাতিয়া মাঠে আসা কৃষক সহিমুদ্দিন জানান, ‘ভাই ত্যাতে পানি ন্যাই। ফলে পদ্মচাক্কা, শাপলা, শালুক, চাকা, মাখনা সিংগারা, ভ্যাটসহ নানা প্রকার জলজ উদ্ভিদ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ভোলাহাট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওয়ালিউর রহমান জানান, দিনের পর দিন মানুষ মাটি কেটে বিল ভরাট, আবাদি জমি তৈরি এবং স্লুইচ গেট দিয়ে ইচ্ছে মত পানি বের করার কারণে বিলভাতি পানি শূন্য হয়ে গেছে। সরকার যদি প্রকল্প গ্রহণ করে দীঘি তৈরি করে তাহলে পানি সংরক্ষিত হবে, কৃষি, জলজ উদ্ভিদ ও দেশী মাছ পাওয়া যাবে, জানান তিনি।
ভোলাহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান খান জানান, ‘জলজ উদ্ভিদ ফিরে পেতে হলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল-বিলভাতিয়ার উপর সরকারকে ব্যাপক প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। খনন করে পানি ধরে রাখলে জলজ উদ্ভিদকে বাঁচানো যাবে। সেই সাথে কৃষি-ফসল উৎপাদনে কৃষকের পানির সমস্যা হবে না। সব চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, ভারসাম্য আসবে স্থানীয় প্রাকৃতিক পরিবেশে। প্রকৃতির বিরুপ প্রভাব শুধু ভোলাহাটের বিলভাতিয়া বিলেই নয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মার শাখা নদী পাগলা সরু নালায় পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানালেন, বিপর্যস্ত প্রকৃতির বৈরিতায় পাগলা এখন মরা নদী, সরু নালা। দূর-দূরান্তের কৃষিজীবীরা ভারী মেশিনের সাহায্যে পাগলা নদী থেকে পানি নিয়ে যায় আবাদী জমিতে। এর বিরুপ প্রভাব পরেছে পাগলা নদীতে, দাবি এই কর্মকর্তার। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে উঁচু ভূমির বরেন্দ্র এলাকায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন রেজা জানান, তার এলাকাটি আর্সেনিক আক্রান্ত এলাকা। পানির সঙ্গে আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা দশমিক পাঁচ কিন্তু রানীহাটি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায় আর্সেনিকের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, অপরিকল্পিতভাবে বরেন্দ্র এলাকায় বসানো হয়েছে গভীর নলকূপ। এর কারণে সেচ নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন কৃষক। যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে প্রকৃতিতেও।
নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্স নিউজ