রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব। সোমবার জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও) এই তথ্য জানায়। যাতে দেখা গেছে, ২০২০ সালে আরো বেড়েছে বাতাসে ক্ষতিকর গ্যাসের ঘনত্ব।

আগামী রোববার স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জলবায়ু বৈঠকে বিপজ্জনক স্তরের উষ্ণতা এড়ানোর লক্ষ্যে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে জানায় আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স।ডব্লিউএমও ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বিশ্বে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে ৪১৩.২ পিপিএমে (১ পিপিএম মানে হচ্ছে প্রতি কেজিতে ১ মিলিগ্রাম) পৌঁছেছে, আর এই বৃদ্ধির হার গত এক দশকে বৃদ্ধির গড় হারের চেয়ে বেশি। গত বছর করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউন চলার পরও বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমন ৫ দশমিক ৬ শতাংশ কমলেও সার্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস রেকর্ড মাত্রায় বেড়েছে।

গত এক দশকে এত বেশি কার্বন ডাই অক্সাইডের উপস্থিতি বায়ুমণ্ডলে লক্ষ্য করা যায়নি বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডব্লিউএমও মহাসচিব পেতেরি তালাস বলেন, গ্রিনহাউস গ্যাসের বর্তমান হারের ফলে ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির সীমার চেয়েও তাপমাত্রা অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে। ওই চুক্তিতে তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার সুপারিশ করা হয়েছিল।

পেতেরি তালাস বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য থেকে এখনো অনেক দূরে। আমাদের শিল্প, জ্বালানি এবং পরিবহন ব্যবস্থা এবং পুরো জীবনযাত্রার পুনর্বিবেচনা করতে হবে।’ এ ছাড়া রোববার শুরু হতে যাওয়া ‘কপ২৬’ সম্মেলনকে সামনে রেখে এটিকে ‘নাটকীয় বৃদ্ধি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি।এই পরিস্থিতিতে আগামী সপ্তাহে শুরু হতে যাওয়া গ্লাসগো সম্মেলনে কার্বন নির্গমন কমানোর ক্ষেত্রে বিশ্বের দেশগুলোর প্রতিশ্রুতির ক্ষেত্রে উচ্চাভিলাষী ঘোষণা প্রত্যাশা করছেন তিনি।

বায়ুমণ্ডলে গ্যাসের ঘনত্বে কেন লকডাউনের প্রভাব পড়েনি এবং গ্রিনহাউজ গ্যাসের মাত্রা রেকর্ড পর্যায়ে উঠে গেল, তার পেছনে আছে কয়েকটি কারণ। মানুষের কর্মকাণ্ড থেকে নিঃসৃত গ্যাস গাছপালা, মাটি ও সাগর শুষে নিলেও এই সক্ষমতা তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত এবং অন্যান্য বেশ কিছু বিষয়ের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে।মহামারীর কারণে গত বছর অনেক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হওয়াসহ কলকারখানা বন্ধ থাকা এবং রাস্তাঘাটে পরিবহন ও চলাচল বন্ধ হয়ে রাস্তা ফাঁকা থাকায় জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো কমে গিয়েছিল প্রায় ৭ শতাংশ।

এছাড়া, রেকর্ড হারে বেড়েছে মিথেন এবং নাইট্রো অক্সাইডের পরিমাণও। এদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় অনুন্নত দেশগুলোকে দেয়া সহায়তার প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হয়েছে ধনী দেশগুলো। ২০২৩ সালের আগে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়া শুরু করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে উন্নত দেশগুলো।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে কী করণীয়, তা ঠিক করতে চলতি মাসের শেষদিন ৩১ অক্টোবর গ্লাসগোতে শুরু হচ্ছে কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজের (কপ) ২৬তম আয়োজন।এবারের সম্মেলনে ২০০ দেশের কাছে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমানোর ব্যাপারে তাদের পরিকল্পনা কী তা জানতে চাওয়া হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে