কারও সহায়তা ছাড়াই নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জে.এ. এন্টারটেইনমেন্টকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন বলিউড অভিনেতা জন অ্যাব্রাহাম। প্রযোজক হিসেবে তার বয়স চার বছর।
‘ভিকি ডোনার’ দিয়ে শুরু, এরপর মুক্তি পেয়েছে ‘মাদ্রাজ ক্যাফে’ (২০১৩)। দুটোরই পরিচালক সুজিত সরকার, দুটোই বলিউডের চেনা মসলাদার ছবি নয়। তার ওপর প্রথমটাতে জন নিজে অভিনয় করেননি। তৃতীয় ছবিতে এসে অবশ্য নিরাপদ পথে হেঁটেছেন ৪৩ বছর বয়সী এই তারকা। তিনিই জানালেন, ‘মাদ্রাজ ক্যাফে’ ও ‘ভিকি ডোনার’-এর চেয়ে এটি ব্যবসায়িকভাবে নিরাপদ ছবি।
ব্যবসায়িকভাবে নিরাপদ মানে নাচ, গান, মারামারিতে ভরপুর আর কি! এ ধরনের ছবি বানাননি সুজিত সরকার। তাই এবার পরিচালনার জন্য জন আস্থা রেখেছেন তার অভিনীত ‘ফোর্স’ (২০১১) ছবির পরিচালক নিশিকান্ত কামাতের ওপর। তার সবশেষ দুই ছবি ‘দৃশ্যম’ ও মারাঠি ভাষায় নির্মিত ‘লাল ভারি’ প্রশংসিত হয়েছে। অ্যাকশন ছবি বানানোর ক্ষেত্রে আগে সাফল্যের প্রমাণ দিয়েছেন তিনি।
জনের তৃতীয় ছবির নামেই আছে ব্যবসার গন্ধ- ‘রকি হ্যান্ডসাম’! এর পোস্টারে নতুনত্ব দেখা গেছে বেশি। জনের দাবি, মারধরের দৃশ্যগুলো বিশ্বমানের। ছবিটি বলিউডের অ্যাকশন দৃশ্যকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে বলেও তার বিশ্বাস। জনের মতে, অ্যাকশন সম্পর্কে মানুষের ধারণাটা একপেশে। অ্যাকশন মানেই সবাই ভাবেন ক্ষত, রক্ত ও ভয়াবহতা। এ কারণে অনেকেই পর্দায় অ্যাকশন দেখে মুখ ঢাকেন। কিন্তু ‘রকি হ্যান্ডসাম’-এর অ্যাকশন দৃশ্যগুলো মোটেই তেমন নয়। এখানে মারপিটের সঙ্গে আবেগেরও সঙ্গতি রাখা হয়েছে।
রকি চরিত্রে অাছেন জন নিজেই। নায়িকা নির্বাচনেও তিনি দেখেছেন অতীত সাফল্য। তার সবশেষ ছবি আনিস বাজমি পরিচালিত ‘ওয়েলকাম ব্যাক’-এর নায়িকা শ্রুতি হাসানকেই নেওয়া হয়েছে এতে। এ জুটি যে বক্স অফিসে মুনাফা আনে তা প্রমাণিত হয়েছে ওই ছবিতে।
নতুন ছবিতে জনের সঙ্গে বেশকিছু অন্তরঙ্গ দৃশ্যে অভিনয় করেছেন। ৩০ বছর বয়সী এই অভিনেত্রীকে বেশ আবেদনময়ীও লেগেছে গানগুলোতে। একটিতে তিনি বিকিনি পরেছেন। এর আগে কখনও পুরো গানে বিকিনি পরে কাজ করেননি।
শ্রুতির চোখে জন বলিউডের অন্যতম সুদর্শন। পরিচালক নিশিকান্ত কামাতও একদিন তাকে কালো স্যুটে দেখে বলে ফেলেন, ‘তোমাকে খুব হ্যান্ডসাম লাগছে।’ এর দু’দিন পর তিনি ছবিটির নাম রাখেন ‘জনি হ্যান্ডসাম’। পরে অবশ্য দর্শকদের পছন্দ অনুযায়ী নাম বদলে রাখা হয় ‘রকি হ্যান্ডসাম’।
তবে জনের চরিত্রের নাম কিন্তু কবির। অপহরণ হওয়া মেয়েটি তাকে হ্যান্ডসাম বলে ডাকায় তার নাম হয়ে যায় রকি হ্যান্ডসাম! যদিও কবির নামটি তার জন্য সৌভাগ্যের। এর আগে ‘জিসম’ ও ‘ধুম’ ছবিতে তার অভিনীত চরিত্রের নামও ছিলো কবির। দুটোই ব্যবসাসফল।
২০১০ সালের কোরিয়ান ছবি ‘দ্য ম্যান ফ্রম নোহোয়্যার’-এর অফিসিয়াল রিমেক এটি। এর গল্প হলো আট বছর বয়সী এক বালিকাকে ঘিরে। তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় এক ড্রাগ মাফিয়া। এ চরিত্রে অভিনয় করেছেন পরিচালক নিজেই। এটাই তার প্রথম অভিনয়। নিজের চরিত্র ফুটিয়ে তোলার জন্য ন্যাড়া হতে হয়েছে তাকে।
পরিচালক-প্রযোজক দু’জনই ক্যামেরার সামনে-পেছনে পরিশ্রমের কমতি রাখেননি। অ্যাকশন দৃশ্যগুলো ঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে মার্শাল আর্টের আইকিডো, হাপকিডো ও ক্রাভ মাগা ফর্মগুলো শিখেছেন জন। প্রায় এক মাস থাইল্যান্ডে প্রশিক্ষণ নিয়ে ছুরি দিয়ে মার্শাল আর্টের একটি বিশেষ ফর্ম শিখেছেন তিনি। শুধু মারামারিই নয়, প্রচারণার জন্য ‘আলফাজো কি তারহা’ শিরোনামের একটি গানের আনপ্লাগড সংস্করণও গেয়েছেন জন।
তবে জনের মন খারাপের কারণ ‘রকি হ্যান্ডসাম’কে সেন্সর বোর্ড ‘এ’ সনদপত্র দিয়েছে। এ নিয়ে অখুশি তিনি। তার ধারণা, মুক্তির আগেই এতে দর্শকসংখ্যা অনেকটা কমে গেলো! যেহেতু গল্পের কেন্দ্রে আছে এক শিশু, তাই এটা ‘ইউএ’ (অপ্রাপ্তবয়স্ক) সনদ পেতেই পারতো।
আরও দুঃসংবাদ হলো, রকির প্রতিযোগী দুই সুপারহিরোকে নিয়ে নির্মিত ‘ব্যাটম্যান ভার্সেস সুপারম্যান: ডন অব জাস্টিস’। হলিউডের ছবিটিও মুক্তি পাচ্ছে আগামী ২৫ মার্চ। অবশ্য তাতে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ছে না জনের কপালে। ট্রেলারই তো সাড়া ফেলেছে, এবার পুরো ছবি সাড়া ফেলতেই বাকি!