সোমবার পেন্টাগন ইউএফও বা এলিয়েনের বাহনের তিনটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। এলিয়েন আছে নাকি নাই- বহু বছর ধরে এই বিতর্ক চলে আসছে। সম্প্রতি সেই বিতর্কে ঘি ঢেলে দিল যুক্তরাষ্ট্র। আর এরপরই বিশ্বব্যাপী শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা ও চাঞ্চল্য। অনেকেরই দাবি, এই ভিডিওগুলো প্রকাশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আসলে এলিয়েনের অস্তিত্বকেই স্বীকার করে নিল।
২০০৪ ও ২০১৫ সালে আমেরিকান নেভির কয়েকজন পাইলট ওই ইউএফও দেখতে পান ও তা এয়ারক্রাফটের ক্যামেরায় রেকর্ড করা হয়। আর সে ভিডিওগুলোই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করেছে পেন্টাগন। তবে এই ভিডিওগুলো এর আগেই লিক হয়ে গিয়েছিল। ২০০৭ ও ২০১৭ সালে ওই ভিডিওগুলো লিক হয়ে যায়। দুটি ভিডিও ২০১৭ সালে নিউইয়র্ক টাইমস প্রকাশ করে। অন্য ভিডিওটি আগে একটি প্রাইভেট সায়েন্স গ্রুপ প্রকাশ করে। এবার তিনটি ভিডিও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে পেন্টাগন জানায়- ‘যেহেতু এই ভিডিওগুলো অনেক আগেই মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল, তাই মানুষের এই ভিডিওগুলোর সত্যতা নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন। সেসব সংশয় দূর করার জন্যই সরকারিভাবে এই ভিডিওগুলো অবমুক্ত করা হল।’ নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, পেন্টাগনের ওই প্রজেক্টে এমন দুটি ভিডিও দেখা গেছে, যেখানে এক মার্কিন পাইলট কোনো সন্দেহজনক বস্তু দেখতে পেয়েছিলেন। প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, স্ক্রিনের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে ছুটে চলে গেল একটা বস্তু। ইনফ্রারেড ক্যামেরায় তোলা হয়েছে সেই দৃশ্য। এই ভিডিওগুলো এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন করে ভাইরাল হয়। পেন্টাগনের তরফ থেকে ওই উড়ন্ত যানগুলোর আইডেন্টিফিকেশন করা সম্ভব হয়নি। তারাও একে ‘আনএক্সপ্লেইনড এরিয়াল ফেনোমেনা’ বলে উল্লেখ করেছে। ফলে সবাই উড়ন্ত জিনিসটিকে ‘আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট’ হিসেবেই চিহ্নিত করেছে। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিনির্ভর সিনেমায় দেখা যায় এলিয়েনরা বিশাল বিশাল মহাকাশযানে চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এগুলোকে কেউ কেউ ফ্লাইং সসার বা উড়ন্ত চাকতি বলে। আবার কেউ বলেন ‘আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট’ বা ইউএফও। ২০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মার্কিন বিমানবাহিনী যে কোনো ‘আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট’ বোঝাতে ‘ইউএফও’ শব্দটি ব্যবহার শুরু করে। কয়েক শতক ধরে অনেকবারই এরকম ইউএফও দর্শনের খবর বের হয়। কিন্তু কোনো ঘটনাই সরকারিভাবে স্বীকৃতি পায়নি। তবে এবার পেন্টাগন আনুষ্ঠানিকভাবে এই তিনটি ভিডিও প্রকাশের পর এলিয়েনের অস্তিত্ব নতুন করে সবার সামনে চলে এলো। তবে এই ভিডিও এবং ইউএফও সংক্রান্ত বিষয়ে পেন্টাগনের অবস্থান পরিষ্কারভাবে জানার জন্য একটু পেছন ফিরে যেতে হবে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি চাঞ্চল্যকর খবর নজর কাড়ে বিশ্ব গণমাধ্যমের। সে সময় মার্কিন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ইউএফও নিয়ে পেন্টাগন বিপুল অর্থের গোপন প্রকল্প চালিয়েছে। এ প্রকল্পের কথা জানতেন মাত্র হাতেগোনা কয়েকজন কর্মকর্তা। নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, ২০০৭ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্প ২০১২ সালেই বন্ধ হয়ে যায়। প্রকল্পের নথিগুলোতে অদ্ভুত দ্রুতগতিসম্পন্ন আকাশযান ও শূন্যে ভাসতে থাকা বস্তু নিয়ে পেন্টাগনের গোপন অনুসন্ধানের কথা বলা হয়। ‘দ্য অ্যাডভান্স অ্যারোস্পেস থিয়েটার আইডেন্টিফিকেশন প্রোগ্রাম’ নামের ওই কর্মসূচি নিয়ে ১ কোটি ৩০ লাখ পৃষ্ঠার গোপন নথি প্রকাশ করে সিআইএ। জানা যায়, ইউএফও প্রকল্প চালাতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে ২ কোটি ২০ লাখ ডলারেরও বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। পরে খরচ বাঁচাতে কর্মসূচিটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে, ২০১২ সালে তহবিলের জোগান বন্ধ হলেও কর্মকর্তারা তাদের দৈনন্দিন দায়িত্বের পাশাপাশি আকাশে উড়ন্ত অদ্ভুত ও সন্দেহজনক বস্তু নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। একই বছর ওই ঘটনার কয়েক মাসের মধ্যেই আরও একবার চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় একটি ভিডিও ক্লিপকে কেন্দ্র করে। এতে দেখা যায়, মার্কিন এক যুদ্ধবিমানকে ধাওয়া করেছে অজানা এক উড়ন্ত বস্তু (ইউএফও)।
মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দফতর পেন্টাগনের গোয়েন্দা অফিসার লুইস এলিজেন্ডো পেন্টাগনের সদ্য প্রকাশ করা গোপন ইউএফও ফাইল থেকে নেওয়া ওই ভিডিও দেখিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টকে জানান, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের আকাশে ওই উড়ন্ত চাকতির সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয়ে যায় মার্কিন যুদ্ধবিমানের। ৩৫ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, আকাশে হঠাৎ ডিমের মতো ওই উড়ন্ত চাকতিকে দেখে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধবিমানের পাইলটরা ভীষণ চমকে গেছেন। পরে অবশ্য সেই ভিডিও ও উড়ন্ত বস্তুর কথা স্বীকার করে নিলেও একে ভিনগ্রহীদের স্পেসক্রাফট বা ইউএফও বলতে নারাজ তারা। তিনি পরে জানিয়েছিলেন, সরকারের হয়ে তিনি কথা বলতে পারেন না, তবে ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করেন, যে প্রমাণ হাতে এসেছে তাতে এলিয়েন এয়ারক্রাফটের পৃথিবীতে আগমনের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেছিলেন, এমন এয়ারক্রাফটের সন্ধান পাওয়া গেছে যা আমেরিকার কাছে নেই, এমনকি অন্য কোনো দেশের কাছেও থাকার কথা নয়। ওই প্রজেক্টে গবেষকদের কাজ ছিল, যে সন্দেহজনক এয়ারক্রাফট দেখা গেছে তা আসলে কী, সেটা খুঁজে বের করা। ওই ধরনের যান পৃথিবীর জন্য ক্ষতিকারক কিনা, তাও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছিল।
পেন্টাগনের প্রাক্তন ওই অফিসার জানান, একাধিক অস্বাভাবিক এয়ারক্রাফটের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। এগুলো ‘এরোডায়নামিক্স’-এর নিয়মকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে ঢুকে পড়েছিল পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে। তার দাবি, এগুলোতে কোনো ‘প্রপালসান’ ছিল না। আর এর পেছনে কোনো প্রাণীর চালিত শক্তি ছিল বলেও অনুমান তার। বে ইউএফওর অস্তিত্ব স্বীকার আর এলিয়েনের অস্তিত্ব স্বীকার প্রায় একই কথা। কারণ ভিনগ্রহী কোনো প্রাণের অস্তিত্ব ছাড়া এমন উড়ন্ত চাকতি বা সসারের উড়ে বেড়ানোর কথা নয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো, দু’শ বছর ধরেই ইউএফও বা এ ধরনের উড়ন্ত সসার দেখতে পাওয়ার দাবি করে আসছে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ। ফলে অধিকাংশ মানুষের দাবি, এগুলো আসলেই ইউএফও। আবার কেউ কেউ বলছেন, এগুলো একেবারেই সাধারণ ড্রোন। তবে ওই সময়ে এমন শক্তিশালী ড্রোনের অস্তিত্ব না থাকায় এদের দাবি ধোপে টেকে না। ফলে বিশ্ব এখন এলিয়েনের অস্তিত্ব বিষয়ে নতুন শক্ত প্রমাণের অপেক্ষায় দিন গুনছে। /খবর বিবিসির
নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্স নিউজ