শুরু হলো অগ্নিঝরা মার্চ। এ মাসেই দেশজুড়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন স্বাধীনতাকামী জনতা। স্বাধীনতা ঘোষণা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১-এর ৭ মার্চ তৎকালীন রেসর্কোস ময়দানে পাকিস্তানি শাসকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন স্বাধীনতাকামী মানুষ। মহান স্বাধীনতার ৪৯ বছর পূর্তি হচ্ছে এবার। সেই সঙ্গে এ মাসেই শুরু হচ্ছে মুজিববর্ষ পালন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য যে আগুন জ্বলে উঠেছিল- সে আগুন যেন ছড়িয়ে পড়ে বাংলার সর্বত্র। এরপর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ‘৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ‘৬৬-এর ছয় দফা এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সিঁড়ি বেয়ে একাত্তরের মার্চ বাঙালির জীবনে নিয়ে আসে নতুন বারতা। এ বছরের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ‘৭১-এর শহীদ দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মশালের আগুনে উদ্দীপ্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এই বাংলার স্বাধিকার, বাংলার ন্যায্য দাবিকে বানচাল করার ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু বাংলার সাত কোটি মানুষ আর বঞ্চিত হতে রাজি নয়। আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য প্রয়োজন হলে আরও রক্ত দেব। বাংলার ঘরে ঘরে আজ দুর্গ গড়ে তুলতে হবে। সামরিক শাসকচক্রের সঙ্গে মিলে ভুট্টো যে ভূমিকায় লিপ্ত তাতে এটা স্পষ্ট যে, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কোনোভাবেই বাঙালিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না।
৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে লাখো বাঙালির সামনে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানি শাসকদের হুশিয়ারি দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। মরতে যখন শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা। এরপরও নানাভাবে টালবাহানা করতে থাকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানিরা বাঙালির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার লক্ষ্যে অপারেশন সার্চলাইট নামে বাঙালি নিধনে নামে। ঢাকার রাস্তায় বেরিয়ে সৈন্যরা নির্বিচারে হাজার হাজার লোককে হত্যা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ছাত্র-শিক্ষককে হত্যা করে।
রাত ১টার পর বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি সৈন্যরা গ্রেফতার করে তার বাড়ি থেকে। অবস্থা টের পেয়ে এর আগেই সুকৌশলে তিনি ঘোষণা করেন, বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা। পরের দিন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার সেই ঘোষণা পুনরায় পাঠ করেন আরও একাধিকজন। এর পরের ঘটনাপ্রবাহ প্রতিরোধের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা হয়। আবালবৃদ্ধবনিতা যোগ দেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে জাতি লাভ করে স্বাধীনতা।
নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্স নিউজ